কৃষকবন্ধু প্রকল্পে ৫০ লাখ ছুঁতে চলেছে উপভোক্তার সংখ্যা
কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষক প্রকল্পটিতে এই মৃত্যুজনিত আর্থিক সাহায্য নেই। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আওতায় নথিভুক্ত বর্গাদাররা আসেন না।

রাজ্যে কৃষকবন্ধু প্রকল্পের আওতায় থাকা কৃষকের সংখ্যা ৫০ লাখ ছুঁতে চলেছে। কৃষিদপ্তর সূত্রে পাওয়া সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪৯ লক্ষ ৮৮ হাজার কৃষক এই প্রকল্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের এই প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয়। তারপর থেকে প্রকল্পের আওতায় থাকা কৃষকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই সংখ্যা আগামী দিনে আরও বাড়বে বলে কৃষিদপ্তরের আধিকারিকদের আশা। কৃষকবন্ধু প্রকল্পে জমির পরিমাণ অনুযায়ী বছরে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। জুন ও নভেম্বর মাসে চাষের মরশুমের শুরুতে এই টাকা দেওয়া হয়। নথিভুক্ত কৃষক ৬০ বছর বয়সের মধ্যে মারা গেলে তাঁর পরিবারকে দুই লাখ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষক প্রকল্পটিতে এই মৃত্যুজনিত আর্থিক সাহায্য নেই। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আওতায় নথিভুক্ত বর্গাদাররা আসেন না।
শুধু আর্থিক অনুদান পাওয়াই নয়। আরও কয়েকটি কারণে রাজ্যের এই প্রকল্পের আওতায় আসতে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে। কৃষকদের কাছে এটি একটি ‘সিঙ্গল উইন্ডো’ সুবিধা নিয়ে আসছে। কারণ কৃষকবন্ধু প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত থাকলেই সরাসরি আরও কয়েকটি সরকারি প্রকল্পের সুবিধা মিলছে। এবারই প্রথম খরিফ মরশুমে বাংলা শস্য বিমা প্রকল্পে কৃষকবন্ধুর আওতায় থাকা কৃষকদের সরাসরি অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়েছে। এজন্য আলাদা করে আবেদন করার প্রয়োজনই পড়েনি। রাজ্য সরকারের বাংলা শস্য বিমা প্রকল্পের আওতায় থাকা কৃষকের সংখ্যা একলাফে অনেকটা বেড়ে যাওয়ার কারণ এটাই। সরকারের কাছে ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্যে ধান বিক্রি করার ক্ষেত্রেও কৃষকবন্ধুদের নাম আলদা করে নথিভুক্ত করার প্রয়োজন পড়ে না। কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য কৃষকবন্ধু পোর্টালটি ব্যবহার করছে খাদ্যদপ্তর। এতে ধান কেনার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এসেছে। প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনছে সরকার। কৃষকবন্ধু প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করার সময় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর, মোবাইল নম্বর, সচিত্র পরিচয়পত্র ও জমি সংক্রান্ত নথি প্রভৃতি পেশ করতে হয়। সরকার ধান কেনার জন্য কৃষকদের নথিভুক্ত করার সময় এই সব নথিই দেখে নেয়। এখন কৃষকবন্ধু পোর্টাল থেকেই সব তথ্য পেয়ে যাচ্ছে খাদ্যদপ্তর।
ফলে কৃষকবন্ধু প্রকল্পে নথিভুক্তদের ধান বিক্রির ক্ষেত্রে কম দৌড়ঝাঁপ করতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে কৃষক কল্যাণে কোনও নতুন প্রকল্প চালু হলে কৃষকবন্ধু পোর্টালটি সরকার ব্যবহার করতে পারবে। এই প্রকল্পটি চালু হওয়ার ফলে কৃষিদপ্তরের কাছে কৃষক সংক্রান্ত তথ্যভাণ্ডার তৈরি হয়ে গিয়েছে। সরকারি হিসেবে রাজ্যে মোট কৃষকের সংখ্যা প্রায় ৭২ লক্ষ ধরা হয়। তবে সব কৃষক এর আওতায় আসবেন না। জমির মালিক ও নথিভুক্ত বর্গাদার হলে তবেই কৃষকবন্ধু প্রকল্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করা যায়। অনথিভুক্ত বর্গাদার বা জমি ভাড়া নিয়ে চাষ করেন, এমন কৃষকরা এই প্রকল্পের আওতায় নেই। তবে বাংলা শস্য বিমা প্রকল্প বা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করার ক্ষেত্রে এই বিধিনিষেধ নেই। এই কারণেই শস্য বিমার আওতায় থাকা কৃষকের সংখ্যা কৃষকবন্ধুর থেকে অনেকটাই বেশি।