সচেতন রাজ্য, উৎসবে কমল সংক্রমণ
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) আহ্বান, হাইকোর্টের রায় এবং সর্বোপরি রাজ্যবাসীর সচেতনতা। দুর্গাপুজোয় (Durga Puja 2020) সংক্রমণ বৃদ্ধির আতঙ্কে লাগাম পরাল বাংলা। তাই পুজোর সপ্তাহে তো বটেই, এমনকী তারপরও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু কোনওটাই বাড়েনি। অন্তত সরকারি পরিসংখ্যান সেটাই বলছে। কেরলের ওনাম (Onam) উৎসবের দু’সপ্তাহের মধ্যে দৈনিক আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার বেড়ে হয়েছিল দ্বিগুণ। গণেশ চতুর্থী উৎসবের পর মহারাষ্ট্রে পরিস্থিতি এতটাই সঙ্কটজনক হয়ে পড়েছিল যে, মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব থ্যাকারেকে নিতে হয়েছিল ‘মেরি ফ্যামিলি, মেরি জিম্মেদারি’ কর্মসূচি। ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal)। কেরল, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানার সেই ভয় ধরানো পরিসংখ্যানের পুনরাবৃত্তি ঘটেনি এরাজ্যে।
২২ আগস্ট গণেশ উৎসবের পর মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৪৬.৭ শতাংশ, ৪৯.৮ শতাংশ এবং ৬৭.৬ শতাংশ বেড়েছিল। ৩১ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর ওনাম উৎসবের পর সামগ্রিকভাবে কেরলে কোভিড রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায় ৬৪.৭ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলায় পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত তো বটেই, দুর্গোৎসব শেষের পরও করোনার গ্রাফ নিম্নমুখী। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘পুজো এবং তার পরের করোনা পরিসংখ্যান নিয়ে আমরা খুশি। সচেতন নাগরিকের ভূমিকা পালনের জন্য রাজ্যবাসীকে অভিনন্দন। কিন্তু এখনও বলছি, করোনা বিধি পালনে ঢিলেমি যেন না আসে। আমরাও সতর্ক আছি। অন্তত আগামী এক-দেড় সপ্তাহ কড়া নজর থাকবে পরিসংখ্যানে। পুজোর জন্য হুড়মুড়িয়ে রোগী বাড়লে যা ধরা পড়ার এই ক’দিনে পড়ত। আর পড়তে পারে আগামী সপ্তাহে।’
স্বাস্থ্যদপ্তরের বুলেটিন জানাচ্ছে, ২১ অক্টোবর পঞ্চমীর দিন রাজ্যে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪০৬৯। সেখানে একাদশীর দিন রাজ্যে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা একেবারেই বাড়েনি। উল্টে চার হাজারের ঘর থেকে নেমে হয় ৩,৯৫৭। ২৮ ও ২৯ অক্টোবরও আক্রান্তের পরিসংখ্যান ছিল তিন হাজারের ঘরেই। মৃত্যু যথাক্রমে ৬০ এবং ৬১।
স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, আগে তৈরি করা করোনা (Coronavirus) পরীক্ষার রিপোর্ট আপডেট হতে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে শুধু পুজোর দিনের পরিসংখ্যান ধরলে বড্ড তাড়াহুড়ো হয়ে যেত। কিন্তু একাদশী, দ্বাদশী ও ত্রয়োদশীতেও করোনা সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ায় মুখের হাসি কিছুটা ফিরেছে স্বাস্থ্যকর্তাদের।
স্বস্তি শুধু এতেই আসেনি। করোনা পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, রোজ যত সংখ্যক আক্রান্ত হচ্ছেন, সেই তুলনায় ছুটি পাওয়া রোগীর সংখ্যা বেশি হলে হাসপাতালগুলি থেকে চাপ কিছুটা কমে। নিজেদের গুছিয়ে ফেলার অল্প হলেও সময় পায় তারা। অন্যদিকে উল্টোটা হলে দুশ্চিন্তা বাড়ে। বেড নিয়ে ‘ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই’ অবস্থা শুরু হয়। ২২ অক্টোবর ষষ্ঠীর দিন থেকে যতই সময় গড়িয়েছে, এ বিষয়েও বাংলার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ষষ্ঠীর দিন ছুটি পাওয়া রোগীর তুলনায় রোজকার আক্রান্ত বেশি ছিলেন ৪৮৫ জন। সপ্তমীতে ৪০৭, অষ্টমীতে ৩৩৬, নবমীতে ২১০ এবং দশমীতে ১৭৩। একাদশী, দ্বাদশী ও ত্রয়োদশীতে পাল্টে যায় ছবি। ওই তিনদিনই আক্রান্তের তুলনায় ছুটি পাওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে (১৮, ৬১ এবং ১৭)। যদিও, রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় (Alapan Bandyopadhyay) অভয় দিয়েছেন, কলকাতায় তো বটেই গোটা রাজ্যেই কোথাও বেডের অভাব নেই। প্রায় প্রতিদিনই বেডের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। এই মুহূর্তে প্রায় ১২ হাজার বেড মজুত রয়েছে। তাই উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই।
অন্যদিকে, করোনার আরও একটি রাজ্যওয়াড়ি পরিসংখ্যান আশার আলো দেখাচ্ছে। কলকাতা ও দুই ২৪ পরগনায় রোগের প্রকোপ বেশি থাকলেও সেখানে কন্টেইনমেন্ট জোনের সংখ্যা বাড়েনি। যেমন— কলকাতায় কন্টেইনমেন্ট জোনের সংখ্যা সেই একটিতেই রয়ে গিয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনায় কন্টেইনমেন্ট জোন ১৫টি থেকে কমে হয়েছে ৮টি। তবে দূরের জেলাগুলিতে সেই তুলনায় কন্টেইনমেন্ট জোন কিছুটা বেড়েছে। এই মুহূর্তে যেমন নদীয়ায় সবচেয়ে বেশি, ৮৬১টি কন্টেইনমেন্ট জোন রয়েছে। এছাড়াও ৩ অঙ্কের কন্টেইনমেন্ট জোনের তালিকায় রয়েছে পূর্ব বর্ধমান (৫৬৩), পুরুলিয়া (৪৩৮), পশ্চিম মেদিনীপুর (৩৫১), কোচবিহার (৩৩৫), উত্তর দিনাজপুর (২৮৫) ও বীরভূম (১২৭)।