আলুর মূল্যবৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় আইনের ফাঁদে অসহায় রাজ্য সরকার
খুচরো বাজারে আলুর চড়া দাম অনেক দিন ধরে চলছে। পুজো শেষ হওয়ার পরেও অধিকাংশ বাজারে ৩৪-৩৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফাবাজির জন্য আলুর (Potato) এই চড়া দাম কি না সেই প্রশ্ন স্বাভবিকভাবেই উঠেছে। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে সংরক্ষিত আলু এখন যে দামে বাজারে ছাড়া হচ্ছে তাতে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফা করার ব্যাপারটা আরও প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে। বিভিন্ন খাতে খরচ ও কিছুটা লাভ ধরে সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষিত আলু এখন হিমঘর থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বের করা হচ্ছে। যেখানে বেসরকারি উদ্যোগে রাখা আলু হিমঘর থেকে বেরনোর সময় এখন দাম ৩০ টাকার আশপাশে রয়েছে। পুজোর আগে তা ২৭ টাকার আশপাশে ছিল।
সরকারি উদ্যোগে এবার প্রায় ৪২ হাজার টন আলু হিমঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। ওই আলু বের করার ব্যাপারে কৃষি বিপণন দপ্তর পুজোর আগে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এই বিজ্ঞপ্তিতে আলু কী দামে হিমঘর থেকে বের করা হবে সেটা উল্লেখ করার পাশাপাশি, কোন খাতে কত খরচ হয়েছে সেটারও উল্লেখ করা হয়। হুগলির তারকেশ্বর-সিঙ্গুর এলাকার হিসেবে দেখা যাচ্ছে, প্রতি কেজি আলু কিনতে খরচ পড়েছিল ১৩ টাকা ২৭ পয়সা। এরসঙ্গে হিমঘরের ভাড়া, বিমা, শুকনো করার খরচ প্রভৃতি ছাড়াও হিমঘর মালিকদের ১০ শতাংশ হারে লাভ ধরা হয়েছে। হিমঘর মালিকরা সরকারের হয়ে আলু কিনেছিলেন। এরজন্য সরকার সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়। ঋণের জন্য ব্যাঙ্কের ১২ শতাংশ হারে ১০ মাসের সুদ খরচের মধ্যে ধরা হয়েছে। কিছু পরিমাণ আলু আগে কম দামে বিক্রি করার জন্য কেজিতে যে প্রায় দেড় টাকা ক্ষতি হয় সেটাও খরচের মধ্যে ধরে নেওয়া হয়। সবকিছু মিলিয়ে প্রতি কেজি আলুতে খরচ ধরা হয় ২০ টাকা। অন্য কয়েকটি জায়গায় আলুর খরচ আরও কম বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। হিমঘর থেকে ওই আলু পাইকারি বাজারে পৌঁছনোর পর দাম নির্ধারণ করা হয় ২২ টাকা। কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় সুফল বাংলার স্টলে ওই আলু ২৫ টাকা কেজি দরে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
রাজ্য সরকারের (State Government) নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে জানিয়েছেন, এবার হিমঘর থেকে ২০ টাকা কেজি দরে আলু বের করলেও ব্যবসায়ীদের লাভ থাকত। ১৩ টাকার থেকে কম দামেও এবার আলু কিনে হিমঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। নবান্নের (Nabanna) বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে হিমঘর থেকে আলু বের করার জন্য ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। আইন অনুযায়ী সরকারের পক্ষে আলুর দাম বেঁধে দেওয়া সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় সরকার (Central Government) নিত্যপ্রয়োজনীয় আইনের পরিধি থেকে আলুকে সরিয়ে নেওয়ার পর সরকারের ক্ষমতা আরও কমে গিয়েছে।
প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লালু মুখোপাধ্যায় (Lalu Mukhopadhyay) অবশ্য জানিয়েছেন, বাজারে চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ হয়। এবার গোটা দেশেই আলুর দাম চড়া ছিল। এখনও ভিন রাজ্যে আলুর দাম বেশি আছে। তার প্রভাব পশ্চিমবঙ্গেও পড়েছে। তবে, দাম বেশি হওয়ার ফলে ব্যবসায়ীদের থেকে সাধারণ চাষিদের লাভ বেশি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন। কারণ, হিমঘরে সংরক্ষিত আলুর বেশিরভাগটাই চাষিদের ছিল।