সুলেখা কালি – স্বদেশপ্রেম ও বাঙালির ব্যবসায়িক চেতনার প্রতীক
আমরা সকলেই জীবনে কখনও না কখনও কালির পেন ব্যবহার করেছি। সেটা যুগধর্মই হোক বা হাতের লেখা ভালো করার জন্যই হোক। এমনকি আজকের পড়ুয়ারাও অনেকে কালির পেন ব্যবহার করে। এটা তাদের সংগ্রহের অন্যতম মুল্যবান বস্তু।
এই শখ থেকেই তৈরি হয় বাংলার নিজস্ব ‘সুলেখা কালি’। অবিভক্ত বাংলার রাজশাহী জেলার দুই ভাই ননীগোপাল ও শঙ্করাচার্য মৈত্র এই কোম্পানি তৈরি করেন। গান্ধীজির স্বদেশী জিনিসপত্র তৈরির আহ্বানে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই কালির কোম্পানি তাঁরা তৈরি করেন। স্বাধীনতার সময়ে ‘সুলেখা কালি’ ছিল ব্রিটিশ কালি কুইঙ্কের বিরুদ্ধে স্বদেশী আলদোলনের প্রতীক।
গান্ধীজির আশীর্বাদে এই কালি হয়ে ওঠে স্বদেশী দ্রব্যের পথপ্রদর্শক। কলকাতার বাজারের গুরুত্ব বুঝে ১৯৩৯ সালে কসবা ও ১৯৪৬ সালে যাদবপুরে এই কোম্পানি স্থানান্তরিত হয়। এই একই বছরে কোম্পানি তাদের শেয়ার ছাড়ে। শেয়ার হোল্ডারের সংখ্যা ছিল এক হাজারের বেশী। ৬০-এর দশকে আরও দুটি ইউনিট খোলা হয় সোদপুর এবং উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদে। ভারতে এবং বিদেশেও ব্যবসা শুরু করে সুলেখা।
বাম আমলে ট্রেড ইউনিয়নের দৌরাত্মে ৮০র দশকে এই কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৩ সালে দেনার দায় থেকে মুক্ত হয়ে মালিকেরা আবার চিন্তা করেন পুনরায় ব্যবসা শুরু করার। ২০০৬ সালে তাঁরা অন্যভাবে ব্যবসা পুনরায় চালু করেন। কালি ছাড়াও তাঁরা অন্যান্য স্টেশনারি দ্রব্য তৈরি শুরু করেন। এছাড়া ঘরের নানা রকম সামগ্রী ও সৌরবিদ্যুতের যন্ত্র তৈরি শুরু করে। ২০১১ সালে লাভ করে এই সংস্থা।
এই কোম্পানি বিভিন্ন প্রচারের মাধ্যমে স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে এটা বোঝাতে চেষ্টা করেছে যে প্লাস্টিক বল পয়েন্ট পেনের থেকে কালির পেন ব্যবহার করা অনেক পরিবেশবান্ধব।