দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরেও তৃণমূলকে নিশানা অমিত শাহের
দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে (Dakshineshwar Temple) পুজো দিলেন অমিত শাহ (Amit Shah)। দেবী ভবতারিণীকে দর্শন করেই শুক্রবারের সফর শুরু করেন তিনি। মন্দিরে বেশ কিছুটা সময় কাটান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ দিনও তাঁর নিশানায় ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নেতৃত্বাধীন তৃণমূলের সরকার।
শুক্রবার সকাল সকাল দক্ষিণেশ্বর মন্দিকে গিয়ে পুজো দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, বাবুল সুপ্রিয়, অনুপম হাজরা–সহ আরও অন্যান্য বিজেপি নেতারা। অমিত শাহ পৌঁছনোর আগেই কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় গোটা মন্দির চত্বর। নিরাপত্তার স্বার্থে কিছুক্ষণের জন্য দক্ষিণেশ্বরে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে।
এ দিন অমিত শাহকে স্বাগত জানান অগ্নিমিত্রা পাল–সহ বিজেপি মহিলা মোর্চার অন্যান্য সদস্যরা। নিউটাউনের হোটেল থেকে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে যান অমিত শাহ। পুজো দেওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অমিত শাহ বলেন, ‘বাংলা ভক্তি আন্দোলনের পীঠস্থান। মহান মণীষীদের জন্ম এই পূণ্যভূমিতে। বাংলা সেই হারানো গৌরব ফিরে পাক সেই প্রার্থনাই করেছি দেবী ভবতারিণীর কাছে। বাংলাবাসীকে বলব একজোট হয়ে দায়িত্ব পালন করুন। মা কালীর কাছে গোটা দেশ তথা বাংলার মঙ্গল কামনা করেছি। মোদীর নেতৃত্বে দেশ এক নম্বরে যাক, সেটাই চাই।’
২/৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বাংলায় পরবর্তী সরকার গড়বে বিজেপি, বাঁকুড়ায় দাবি অমিতের
এ দিনও তৃণমূল কংগ্রেসকে একহাত নিয়ে অমিত শাহ বলেন, ‘এখানে তোষণের রাজনীতি চলছে। হারানো গৌরব ফিরে পাক বাংলা।’
এ দিকে, তাঁর বাঁকুড়া সফরের পরেই পুরুলিয়া এবং ঝাড়গ্রাম থেকে সরে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআরপিএফের দুই ব্যাটালিয়নের মোট ১৪ কোম্পানি।
সূত্রের খবর, শুক্রবার সকালে দক্ষিণেশ্বর থেকে অমিত শাহের গল্ফ ক্লাবে যাওয়ার কথা। এরপর ইজেডসিসি, গৌরাঙ্গ নগর, নিউটাউন যবেন। বিকেলে ফের ইজেডসিসি-তে বৈঠক করবেন তিনি। সারাদিন কথা বলবেন বিজেপির বিভিন্ন নেতৃত্বের সঙ্গে। এ ছাড়াও অমিত শাহ যাবেন নিউটাউন জ্যোতিনগরে মতুয়া মহাসঙ্ঘের মন্দিরে।
বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার রুক্ষ মাটিতে দাঁড়িয়ে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার ডাক দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আর সেই লক্ষ্য পূরণে বিজেপি নেতা-কর্মীদের বাঁকুড়ার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি নির্দেশ দেন, এখন থেকেই দুশো বিধানসভা আসনে জয়লাভের টার্গেট নিয়ে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। বৃহস্পতিবার সকালে বাঁকুড়ায় পৌঁছে বিধানসভা ভোটের দামামা বাজিয়ে দিয়ে অমিতের হুঙ্কার, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গিয়েছে। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যা ক্রোধ এবং নরেন্দ্র মোদীর প্রতি আশা ও শ্রদ্ধা বাংলায় এসে দেখছি তাতে আমি নিশ্চিত, আগামী নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এখানে বিজেপি সরকার গড়বে। বাংলা হবে সোনার বাংলা।’
গত লোকসভা ভোটের আগে অমিত চব্বিশটি আসনের লক্ষ্য দিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষদের। মিলেছিল আঠেরোটি। বিধানসভা ভোটের আগে দুশোটি আসনের টার্গেট অমিতের কাছ থেকে পাওয়ার পর রাজ্য বিজেপির অন্দরে শুরু হয়ে গিয়েছে পাটিগণিতের নানা সমীকরণ নিয়ে জল্পনা। অমিতের বঙ্গ-সফরকে কটাক্ষ করে তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম অবশ্য বলেছেন, ‘বিজেপি-শাসিত রাজ্যে দলিতদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। সে সব ঢাকতে উনি এ রাজ্যে এসেছেন।’ বৃহস্পতিবার সকালে বাঁকুড়ার পুয়াবাগানে গিয়ে বিরসা মুন্ডার মূর্তিতে মালা দিয়ে অমিত অবশ্য বলেন, ‘কাল রাত থেকে বাংলায় আছি। এখানে আসার পর থেকে মানুষের মধ্যে প্রবল উৎসাহ লক্ষ করছি।’ তৃণমূল সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদীর সরকারের উপর প্রবল শ্রদ্ধা ও আশা মানুষের মধ্যে লক্ষ করছি। তাই আমরা মনে করছি যে, এই রাজ্যে ফের একটা পরিবর্তন হবে।’ তৃণমূল নেতা সৌগত রায়ের অবশ্য কটাক্ষ, ‘উনি তো হেলিকপ্টার করে কলকাতা থেকে বাঁকুড়া গিয়েছেন। মানুষের ক্ষোভ দেখলেন কী ভাবে!’