দৈনন্দিন জীবনে বৈষম্যমূলক আচরণ – মহিলাদের সাতকাহন
মহিলাদের আচার আচরণের ওপর সবসময়ই একটি মাত্রা টেনে দেওয়া হয় এই দেশে। মহিলাদের কিভাবে চলা উচিৎ, কথা বলা উচিৎ- এ নিয়ে অনেককেই মাথা ঘামাতে দেখা যায়। মহিলাদের তাদের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নেবার অধিকার দিতে নারাজ এই সমাজ। তারা যাই করুক সমালোচনার পাহাড় কখনোই পিছু ছাড়েনি তাদের।
সে তারা চাকরিই করুক বা সংসার সামলাক বা এগুলোর মধ্যে কোনটাই না করলেও সবসময়ই তাদের মুখোমুখি হতে হয় শত শত প্রশ্নের। তা পরিবারের থেকেই হোক বা বন্ধুদের থেকে বা সহকর্মীদের থেকে।
সবসময়ই মহিলাদের শুনতে হয় নারী বিদ্বেষমূলক উক্তি।
এভাবে বসে না মেয়েরা।
এভাবে কথা বলতে নেই মেয়েদের।
মেয়েরা মদ খায় না।
মেয়েদের বেশি খোলামেলা হওয়া উচিৎ না।
যেসব মেয়েদের ট্যাটু থাকে তাদের চরিত্র খারাপ।
একজন মহিলা যেভাবে খুশি নিজেকে ব্যক্ত করতে পারেন। তার জন্যে কোন নিয়ম মানার সত্যিই কোন দরকার নেই। এবং এর প্রমান তার অন্য কাউকে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
মেয়েদের একা বাইরে যাওয়া উচিৎ না। কে তাদের রক্ষা করবে?
মহিলারা নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করতে পারে। তার জন্যে অন্য কাউকে দরকার নেই তাদের।
মুখটা সুন্দর কিন্তু রোগা হলে আরেকটু ভালো লাগবে।
গায়ে এতো লোম! ওয়্যাক্স করতে হবে।
মহিলাদের সাজগোজ করা আবশ্যক।
শরীর ঢাকা পোশাক পরা উচিৎ।
মেয়েদের লম্বা চুল রাখা উচিৎ।
মেয়েদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য সৌন্দর্যের সংজ্ঞাকে পরিপূর্ণ করা না। সে কতটা মোটা বা ফর্সা ,তার চুল কত লম্বা এসব কিছুই তার যোগ্যতা নির্ধারণ করে না।
তাড়াতাড়ি বিয়ে করো।
তোমার এখনো কোন সন্তান নেই কেন?
দ্বিতীয় সন্তানের কথা কেন ভাবছ না?
তুমি চাকরি করলে ঘর কে সামলাবে?
বিদেশে একা গিয়ে থাকার কথা ভাবছ কি করে? বিয়ে করে স্বামীর সাথে যাবে।
কিছুদিনের জন্যে নিজের কেরিয়ারের কথা ভাবা ছেড়ে সন্তান মানুষ কর।
বিয়ে বা সন্তানের মতো বড় সিদ্ধান্তের কোন নির্দিষ্ট সময় হয় না। এই সিদ্ধান্ত এক একজনের জন্যে এক এক একরকম। তারা নিজেরাই ঠিক করবে তারা কখন কিভাবে জীবন যাপন করবে। তা সমাজ ঠিক করে দিতে পারে না। তারা নিজেরাই ঠিক করবে কিভাবে তারা পারিবারিক জীবন এবং চাকরির মধ্যে ভারসাম্য রাখবে। সেটা অন্য কেউ ঠিক করে দিতে পারে না। কোথায় যাবে, থাকবে কার সাথে যাবে এই সিদ্ধান্তও তাদের ব্যক্তিগত।
উত্তেজিত হওয়া মানায় না মেয়েদের।
মেয়েদের এতো মতামত দেওয়া ঠিক না।
নারীবাদীদের কেউ পছন্দ করে না।
এসবের কোন শেষ নেই। একজন মেয়ে যাই করুক তার জন্যে তাকে সমালোচনার মুখোমুখি হতেই হবে। নারী হওয়ার সমাজের তৈরী মাপকাঠিগুলো মানলেও আবার না মানলেও। ‘কুছ তো লোগ ক্যাহেঙ্গে। লোগোকা কাম হ্যায় ক্যাহেনা।
তাই কুছ পরোয়া নেই। নিজেদের নারীত্ব কারো কাছে প্রমাণ করার কোন দায় নেই আপনাদের।