বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

বাংলার কয়েকটি বিখ্যাত কালী মন্দির

November 14, 2020 | 4 min read

ব্রহ্মযামল তন্ত্রের মতে, বাংলার অধিষ্ঠাত্রী হলেন দেবী কালিকা। এই কারণেই, বহু প্রাচীন কাল থেকে বঙ্গদেশে কালীর সাধনা শুরু হয়। গড়ে ওঠে বিখ্যাত কালী মন্দিরগুলি। রইল কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের কিছু বিখ্যাত কালী মন্দিরের হদিস।

কালীঘাট মন্দির

কালীঘাট মন্দির কলকাতার সবচেয়ে বিখ্যাত কালীমন্দির এবং একান্ন শক্তিপীঠের অন্যতম হিন্দু তীর্থক্ষেত্র। দক্ষিণাকালী এবং পীঠরক্ষক দেবতা নকুলেশ্বরের পুজা হয় এখানে। পৌরাণিক কিংবদন্তি অনুসারে, সতীর দেহত্যাগের পর তাঁর ডান পায়ের চারটি (মতান্তরে একটি) আঙুল এই তীর্থে পতিত হয়েছিল। কোনো কোনো গবেষক মনে করেন, “কালীক্ষেত্র” বা “কালীঘাট” কথাটি থেকে “কলকাতা” নামটির উদ্ভব। 

জনশ্রুতি, ব্রহ্মানন্দ গিরি ও আত্মারাম ব্রহ্মচারী নামে দুই সন্ন্যাসী কষ্টিপাথরের একটি শিলাখণ্ডে দেবীর রূপদান করেন। ১৮০৯ সালে বড়িশার সাবর্ণ জমিদার শিবদাস চৌধুরী, তাঁর পুত্র রামলাল ও ভ্রাতুষ্পুত্র লক্ষ্মীকান্তের উদ্যোগে আদিগঙ্গার তীরে বর্তমান মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে।

দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি

১৮৫৫ সালে । “কাশী যাওয়ার প্রয়োজন নেই। গঙ্গাতীরেই একটি নয়নাভিরাম মন্দিরে আমার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পূজা কর। সেই মূর্তিতে আবির্ভূত হয়েই আমি পূজা গ্রহণ করব।” স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে জমিদার রানি রাসমণি নির্মাণ করেন দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি। উত্তর চব্বিশ পরগনার হুগলি নদীর তীরে দক্ষিণেশ্বরে অবস্থিত। রামকৃষ্ণ পরমহংসের সাধনাস্থল এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন । এই মন্দিরে দেবী কালীকে “ভবতারিণী” রূপে পুজা করা হয়।

আদ্যাপীঠ

কোনও শক্তিপীঠ নয়, তবু দক্ষিণেশ্বরের অনতি দূরে দেবীর অন্য একটি বিখ্যাত মন্দির আদ্যাপিঠ। মা এখানে আদিশক্তি বা আদ্যা মা। মায়ের মূর্তির উৎস বর্তমান ইডেন উদ্যানের জলাশয়। শিব জ্ঞানে জীব সেবাই এই মন্দিরের উদ্দেশ্য।

ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি

ঠনঠনিয়ার সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির একটি প্রাচীন কালী মন্দির। জনশ্রুতি অনুসারে ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে উদয়নারায়ণ ব্রহ্মচারী নামে জনৈক তান্ত্রিক মাটি দিয়ে সিদ্ধেশ্বরী কালীমূর্তি গড়েন। ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে শঙ্কর ঘোষ নামে জনৈক ধনাঢ্য ব্যক্তি বর্তমান কালীমন্দির ও পুষ্পেশ্বর শিবের আটচালা মন্দির নির্মাণ করেন ও নিত্যপূজার ব্যয়ভার গ্রহণ করেন।

ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি

কলকাতার বউবাজারে বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিটে অবস্থিত এই ৫০০ বছরের প্রাচীন কালী মন্দির। জনশ্রুতি অনুযায়ী, মন্দিরটি অ্যান্টনি নামে একজন পর্তুগীজ সাহেব বা ফিরিঙ্গি এই মন্দিরে আসতেন। তাই এই মন্দিরটি ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি নামে পরিচিত।

ডাকাতকালী মন্দির

হুগলীর সিঙ্গুরের কাছে পুরুষোত্তমপুরে অবস্থিত একটি বিখ্যাত সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির। এই মন্দির ডাকাত সনাতন বাগদী না গগন সর্দার না রঘু ডাকাত নির্মাণ করেছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কথিত আছে, অসুস্থ রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবকে দেখতে যাওয়ার পথে সারদা দেবীকে এই স্থানে দুই ডাকাত আটক করলে স্বয়ং কালী দেখা দেন ও তাঁকে রক্ষা করেন। এই অলৌকিক ঘটনায় ভয় পেয়ে ডাকাতরা এখানে কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করে।

রঘু ডাকাতের কালীমন্দির

হুগলীর বাসুদেবপুর গ্রামে অবস্থিত একটি প্রাচীন কালী মন্দির। একচূড়াবিশিষ্ট ডাকাত কালীমন্দির বিখ্যাত রঘু ডাকাতের ভাই বুধো নামক এক ডাকাত প্রতিষ্ঠা করেন। বুধো ডাকাতের প্রতিষ্ঠিত হলেও এই কালী রঘু ডাকাতের কালী নামে জনপ্রিয় ও সিদ্ধেশ্বরী কালী হিসেবে পূজিতা হন।

তারাপীঠ

বীরভূমের রামপুরহাটের কাছে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র মন্দির নগরী। পাগলা সন্ন্যাসী” বামাক্ষ্যাপার লীলাক্ষেত্র এই শহর তন্ত্রের দেবী মা তারার মন্দির ও মন্দির-সংলগ্ন শ্মশানক্ষেত্রের জন্য বিখ্যাত ও একান্ন সতীপীঠের অন্যতম।

করুণাময়ী কালীমন্দির

মুঘল সম্রাট আকবরের রাজপুত সেনাপতি মানসিংহ বারাসাতের আমডাঙায় সূক্ষ্মাবতী নদীর তীরে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই মন্দিরের প্রথম পুরোহিত ছিলেন রামানন্দ গিরি গোস্বামী যার নামানুসারে এই অঞ্চলের নাম হয় ‘রামডাঙা’। পরে রামডাঙা কথাটি লোকমুখে বিকৃত হয়ে হয় ‘আমডাঙা’। করুণাময়ী কালীমূর্তিটি মন্দিরের দোতলায় প্রতিষ্ঠিত।

চীনা কালী মন্দির

কলকাতার ট্যাংরায় চায়না টাউনের কাছে প্রায় ৬০ বছর পুরনো এই বিখ্যাত কালী মন্দির। নিত্য দিনের পূজা একজন বাঙ্গলী পুরোহিত করে থাকেন। এখানকার অধিকাংশ অধিবাসীরা খ্রীষ্টান এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হলেও এই কালী মন্দিরের খুব ভক্ত। কালী পূজা উপলক্ষে প্রায় ২০০০ চীনা মানুষ সমবেত হন এই মন্দির চত্বরে। মায়ের পূজোর প্রসাদ হল নানা চীনা খাবার যেমন চাউমিন বা নুডলস ইত্যাদি।

কঙ্কালীতলা মন্দির

বোলপুরের কাছে বোলপুর-লাভপুর রোডের পাশে এই শক্তিপীঠ। কথিত আছে, দক্ষযজ্ঞের পর এখানে দেবী পার্বতীর কঙ্কাল পড়েছিল। এখানে দেবীর নাম দেবগর্ভা।

হংসেশ্বরী মন্দির

হুগলীর বাঁশবেড়িয়ায় দুশো বছরের পুরনো একটি বিখ্যাত কালী মন্দির। ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে রাজা নৃসিংহদেব হংসেশ্বরী কালীমন্দিরের নির্মাণ শুরু করেন এবং তাঁর মৃত্যুর পর ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর বিধবা পত্নী রাণী শঙ্করী মন্দির নির্মাণ সম্পন্ন করেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Kali Mandir, #Kali Puja 2020

আরো দেখুন