দরকার লক্ষ কোটি, আম্পানের ক্ষতিপূরণে কেন্দ্রের থেকে এলো মাত্র ২৭০০ কোটি টাকা সাহায্য !
সেটা ছিল ২২ মে। আম্পানের (Amphan) তাণ্ডবের পর বাংলার ক্ষয়ক্ষতি স্বচক্ষে দেখবেন বলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) দ্রুত এসে পড়েছিলেন বাংলায়। হেলিকপ্টারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সেই যৌথ সফরের পর তাৎক্ষণিক বরাদ্দ হিসেবে রাজ্যে দাঁড়িয়েই ঘোষণা করেছিলেন হাজার কোটি টাকার সহায়তা। প্রতিশ্রুতি ছিল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি টিম এসে সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করবে। তারপর আম্পানের বৃহত্তর ক্ষতিপূরণ দেবে কেন্দ্র। সেই টিম সত্যিই এসেছিল। কিন্তু পাঁচ মাস কেটে গেলেও প্রাথমিক ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়া কোনও ক্ষতিপূরণ আর আসেনি।
এই নিয়ে একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রাজ্য সরকার। অবশেষে কেন্দ্রের ‘খয়রাতি’ এল। প্রায় ছ’মাস পর। তাও মাত্র ২৭০৭ কোটি টাকা। কারণ, পর্যালোচনায় আসা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের কাছে রাজ্য সরকার যে ক্ষয়ক্ষতির তালিকাটি ধরিয়েছিল, তার অঙ্ক ১ লক্ষ কোটি। পরে দু’পক্ষই মোটামুটি ৩৬ হাজার কোটি টাকার মতো ক্ষতিপূরণে সহমত হয়। সেখানে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণকে ওয়াকিবহাল মহল ‘খয়রাতি’ ছাড়া আর কিছুই মনে করছে না।
রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) এদিন বলেছেন যে কেন্দ্রীয় সরকার বরাদ্দের কথা এমনভাবে বলছে, যেন এটা তাদের অনুদান। রাজ্যের টাকাই কেটে নিয়ে তারপর আবার রাজ্যকে দেওয়া হয়। এটাই নিয়ম। সুতরাং এই টাকা রাজ্যের প্রাপ্য। আর আম্পানের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের কাজ বহুদিন ধরে চলছে। এতদিন পর এই সামান্য বরাদ্দ দেওয়ার অর্থ হয় না। পশ্চিমবঙ্গ কি ভিক্ষুক নাকি?’
শুক্রবারের ঘোষণায় ওড়িশাকে ১২৮ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। নিসর্গ সাইক্লোনের জন্য মহারাষ্ট্র পাচ্ছে ২৬৮ কোটি টাকা। প্রসঙ্গত মে মাসের পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আম্পান সাইক্লোনের কালান্তক অভিঘাতে গোটা দক্ষিণবঙ্গ একপ্রকার বিপর্যস্ত হয়ে যায়। কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর সফর চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বলেছিলেন প্রায় ৬ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত এই আম্পানের জেরে। সুতরাং, এখনই প্রয়োজন বিপুল অর্থ ও পুনর্বাসনের।
সেই সফরের প্রায় ছ’মাস পর বরাদ্দ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্র স্থির করেছে, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বন্যা ও সাইক্লোন প্রতিরোধ এবং ত্রাণ কেন্দ্র গড়া হবে। এবং তা বাস্তবায়িত হবে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির নজরদারিতে। পশ্চিমবঙ্গেও (West Bengal) এরকম একঝাঁক কেন্দ্র নির্মিত হবে। তবে আম্পানের বরাদ্দ সংক্রান্ত কোনও নির্দেশিকা সন্ধ্যা পর্যন্ত নবান্নে এসে পৌঁছয়নি।
ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া লাখ পাঁচেক মানুষ যেমন ছিলেন, তেমনই রয়েছেন ২৫ লক্ষ ৩০ হাজার কৃষকও, আর এই কৃষকদের মধ্যে আছেন দু’ লক্ষ পানচাষিও। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক ভাবে ১৩৫০ কোটি টাকার আনুমানিক বাজেট করা হলেও এই বাবদ তাঁর সরকার ইতিমধ্যেই ১৪৪৪ কোটি টাকা খরচ করেছে। যদিও তারপরেও একাধিক খাতে আরও বহু টাকা খরচ হয়েছে রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে।
করোনা পরিস্থিতি (Coronavirus) রাজ্যের আর্থিক সংকট থাকলেও শত সমস্যা সত্ত্বেও যে তাঁর সরকার ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে কার্পণ্য করছে না, সে কথাও বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সে জন্যই আম্পানের কয়েক দিনের মাথাতেই ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের জন্য ৬২৫০ কোটি টাকার তহবিল গড়েন তিনি। সেই সূত্রেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার পাঁচ লক্ষ মানুষকে ঘরবাড়ি মেরামতির জন্য তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করেছে, দু’ লক্ষ পানচাষি ছাড়াও আরও ২৩.৩ লক্ষ কৃষককেও অর্থসাহায্য করছে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে।