পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়েই সৌমিত্রের অন্তিম যাত্রায় হাঁটলেন মমতা
রাজ্য সরকারের তরফে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে (Soumitra Chatterjee) গান স্যালুটে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। গোটা সময়টাই মুখ্যমন্ত্রী শ্মশানেও ছিলেন।

পায়ে ক্রেপ ব্যান্ডেজ বাঁধা। তা নিয়েই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অন্তিম যাত্রায় রবীন্দ্র সদন থেকে কেওড়াতলা মহাশ্মশান পর্যন্ত হাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার সন্ধেয় শোকযাত্রায় ছিলেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তী বা মনোজ ভট্টাচার্যের মতো বাম নেতারাও। কিংবদন্তি অভিনেতার পরিজন এবং অনুগামীদের সঙ্গে পা মেলান মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, তথ্যসংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, সাংসদ মালা রায়। ছিলেন আমলা থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত কলাকুশলীরা। তবে কোভিড পরিস্থিতির জন্য শ্মশান চত্বরে আমজনতার জমায়েত হয়নি। রাজ্য সরকারের তরফে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে (Soumitra Chatterjee) গান স্যালুটে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। গোটা সময়টাই মুখ্যমন্ত্রী শ্মশানেও ছিলেন।
রবিবার সকালে সৌমিত্রের মৃত্যুর খবর পেয়েই নার্সিংহোমে চলে যান মমতা। তাঁর কিছু আগেই চলে আসেন অরূপ বিশ্বাস এবং ইন্দ্রনীল সেন। মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে সদ্য পিতৃহারা পৌলোমী বসু (Poulami Basu) ঘোষণা করেন তাঁর বাবার শেষযাত্রার কর্মসূচি। রাজ্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। মুখ্যমন্ত্রীর পাশে পৌলোমী দাঁড়িয়ে বলেন, ‘রাজ্য সরকার ও হাসপাতাল যে ভাবে বাবাকে সম্মান জানিয়ে তাঁর শেষ দিনগুলিতে পাশে থেকেছে, সেবা করেছে, তা আমাদের পরিবার কোনও দিন ভুলবে না।’ হাসপাতাল সূত্রের খবর, কোভিড-বিধি মেনেই মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসাধীন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে দেখতে আসেননি। তবে প্রতিদিন নিয়ম করে তাঁর খোঁজ নিয়েছেন। প্রয়াত অভিনেতার শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হলেই উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রীর ফোন এসেছে বার বার।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) টুইট করেন, ‘ফেলুদা নো মোর। অপু বলল,গুডবাই…।’ নার্সিংহোমের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘শেষবার ফোনে কথা হয়েছিল। আমি তখন মেদিনীপুরে। বলেছিলেন ওঁর কোভিড (Covid 19) ধরা পড়েছে। বেলভিউয়ে ভর্তি করা হচ্ছে। গলাটা বিষণ্ণ লাগছিল। ওই কথাগুলি এখনও কানে বাজছে। আমার সঙ্গে শ্রদ্ধা ও প্রীতির সর্ম্পক ছিল। আমাদের আমন্ত্রণে বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার গ্রহণ করেছেন।’ মমতা বলেন, ‘কোভিডের কাছে উনি হারেননি। ওঁর কোভিড নেগেটিভ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অন্য কিছু অসুখ ছিল। সবাই মিলে চেষ্টা করেছেন। রাজ্য সরকারের বিশেষজ্ঞরাও ছিলেন। কিন্তু আমরা তাঁকে ধরে রাখতে পারিনি। এই অবস্থায় আমরা মনে করি, জন্ম আছে, মৃত্যু আছে। মৃত্যু নির্মম, কঠিন। তবু বাস্তব। আজকের দিনে আমরা হারালাম এক ইতিহাসকে। তিনি যা দিয়ে দিয়েছেন, তার প্রতিদান দিতে পারব না।’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘শুধু চলচ্চিত্র নয়, অসামান্য বাচিক শিল্পী, কবি, লেখক, নাট্যকার, নাট্যনির্দেশক। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। যে প্রতিভাবান মানুষদের জন্য বিশ্বের দরবারে বাংলা প্রতিনিধিত্ব পেয়েছে, তিনি ছিলেন তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য।’