সম্পত্তির হিসেব চেয়ে মুকুলকে নোটিস ইডি-র
পত্র বা ব্যাঙ্ক আমানতের যে-সব তথ্য তিনি আগে পেশ করেছেন, তা আংশিক বলে জানিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। এ বার বিজেপি নেতা মুকুল রায় আর তাঁর স্ত্রীর সম্পত্তির পূর্ণ হিসেব এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সবিস্তার বিবরণ চেয়ে নোটিস পাঠাল তারা। মৌখিক ভাবে মুকুলকে সিবিআইয়ের সঙ্গেও যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে।
ইডি সূত্রের খবর, নোটিস-সহ চিঠিটি ৯ নভেম্বর লেখা হলেও ছুটি থাকায় সেটি পাঠানো হয়েছে খুব সম্প্রতি। তাতে বলা হয়েছে, ৩ জুলাই ই-মেল করে যে-সব নথিপত্র চাওয়া হয়েছিল, ৩১ জুলাই ই-মেল করে তিনি তার অনেকটা জানিয়ে দেন। কিন্তু কিছু নথি বাকি আছে। মাত্র একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথি দিয়েছেন তিনি। এ বার তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য চাই। চাই ২০১৭-১৮ এবং ২০১৯-২০ সালের আয়কর রিটার্নও। ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষ থেকে অদ্যাবধি তিনি যত সম্পত্তি কিনেছেন, তারও হিসেব দিতে হবে চিঠি পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে। “এমন কোনও চিঠির কথা আমি জানি না। অফিসে গিয়ে দেখতে হবে কিছু এসেছে কি না। কিছু জানতে চাইলে জানিয়ে দেওয়া হবে,” সোমবার বলেন মুকুলবাবু।
বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থা সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছে মুকুলবাবুর। সেই সময় তিনি ছিলেন তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা। রাজ্য পুলিশ ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল কাশ্মীরে সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন, ওই সংস্থার অন্যতম কর্ত্রী দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে। পরে সিবিআই তদন্তভার নেয়। অভিযোগ: যে-গাড়িচালক সুদীপ্তদের কলকাতা থেকে কাশ্মীরে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই অরবিন্দ সিংহ চৌহান সিবিআই-কে জানান, সুদীপ্ত কলকাতা ছাড়ার পরে তাঁর সঙ্গে লাগাতার যোগাযোগ ছিল মুকুলবাবুর। পুলিশি তদন্তের সময় মুকুল-ঘনিষ্ঠ এক পুলিশকর্তা বহু নথি নষ্ট করে ফেলেন বলেও পরে অভিযোগ তোলে সিবিআই।
বেশ কয়েক বার নোটিস পাঠানোর পরে ২০১৫-র জানুয়ারির শেষে কলকাতায় সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে মুকুলবাবুকে একটানা জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই অফিসারেরা। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পরে তদানীন্তন মন্ত্রী মদন মিত্রকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। তবে মুকুলবাবুকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরে নারদ মামলাতেও নাম জড়ায় মুকুলবাবুর। নারদ স্টিং অপারেশনে সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েল ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে বাংলার বহু নেতা-মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন এবং ব্যবসায় সুবিধা পেতে ঘুষ দেন। গোপন ক্যামেরায় সেই টাকা দেওয়ার ছবি তুলে পরে তা সম্প্রচার করা হয়। ম্যাথু দেখা করলেও মুকুলবাবুকে টাকা নিতে দেখা যায়নি। কিন্তু ছবিতে আইপিএস অফিসার এসএমএইচ মির্জাকে বলতে দেখা ও শোনা গিয়েছে, মুকুলবাবুর নির্দেশেই টাকা নেওয়া হচ্ছে।
২০১৭-র ৩ নভেম্বর মুকুলবাবু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেন। রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন ওঠে, সারদা-নারদ মামলা থেকে বাঁচতেই তিনি বিজেপির শরণ নিয়েছেন। সম্প্রতি তাঁকে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি করা হয়েছে। তদন্তকারীদের একাংশের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই মুকুলবাবুর বিরুদ্ধে যে-সব তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, তাতে সারদা মামলা থেকে তাঁর ছাড় পাওয়া মুশকিল। তবে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ মনে করে, বিজেপি-র ছত্রচ্ছায়ায় থাকলে ছাড় পেয়ে যেতে পারেন তিনি। রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা ভোটের কাজে লাগানোর লক্ষ্যে বিজেপি তাঁকে গুরুত্ব দিয়েই রাখতে চাইবে। রাজনৈতিক শিবিরের অন্য অংশের মতে, নির্বাচনের মুখে সারদা মামলায় মুকুলবাবু যদি গ্রেফতার হয়ে যান, তা হলে আখেরে সুবিধা বিজেপিরই। মুকুলবাবু জেলে গেলে তারা প্রচার করবে, সততা, নৈতিকতা, দুর্নীতির ক্ষেত্রে বিজেপি যে আপস করে না, মুকুল-কাণ্ডই তার প্রমাণ।
Mukul Roy BJP Enforcement Directorate ED