সিনেমা হলেও নস্টালজিয়া, পুনর্মুক্তি সৌমিত্রের ছবি
তাঁর শেষযাত্রায় করোনাকে অগ্রাহ্য করে সাধারণ মানুষ যেরকম স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছেন, শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, তাতেই প্রমাণ হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে মানুষ কতটা ভালবাসেন। এখন যদি আবার তাঁর আগের কিছু অসাধারণ ছবি আমরা দেখাতে পারি, তাহলেই সৌমিত্রবাবুকে যথার্থ সম্মান জানাতে পারব আমরা। দর্শকরাও আর একবার বড়পর্দায় তাঁর সেই সব দু্র্দান্ত অভিনয় দেখে মুগ্ধ হতে পারবেন।
সশ্রদ্ধভাবে এই কথাগুলো বললেন মিনার, বিজলী, ছবিঘরের কর্ণধার সুরঞ্জন পাল। একইরকম বক্তব্য কলকাতার বেশ কয়েকটি সিনেমা হলের কর্মকর্তাদের। অনেকে উদ্যোগ নিতে শুরু করেছেন। কিন্তু বহু পুরনো ছবির ডিজিট্যাল প্রিন্ট না পেলে সেটা ‘ইউ এফ ও’ কিংবা ‘কিউব’–এ ডাউনলোড করা যাবে না, বললেন সুরঞ্জনবাবু। আর, সেটা করা না গেলে সিনেমা হলে ছবিগুলো দেখানো মুসকিল। এই আধুনিক প্রযুক্তির উপযোগী করে তুলতে একটু সময় লাগবে।
কিন্তু, বেশ কিছু ছবির ডিজিট্যাল প্রিন্ট (Digital Print) আছে। উঠে–পড়ে লাগলে পছন্দসই ছবিগুলোর ডিজিট্যাল প্রিন্ট করে ফেলা সম্ভব বলেই সুরঞ্জনবাবুর অভিমত।
সেই ভাবনাচিন্তা চলছে। যোগাযোগ করা হচ্ছে প্রযোজক এবং ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে। কিন্তু আগামী শুক্রবারই যাতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কোনও ছবির পুনর্মুক্তি ঘটানো যায়, তার জন্যে উদ্যোগী হয়েছেন কয়েকজন হল মালিক।
ইতিমধ্যে প্রস্তাব পেয়েছেন প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরি এবং তিনি সানন্দে রাজি। তাই তাঁর প্রযোজিত ‘সাঁঝবাতি’ এই শুক্রবারই কলকাতার বেশ কয়েকটি সিঙ্গল স্ক্রিন ও মাল্টিপ্লেক্সে পুনর্মুক্তি পেতে চলেছে। লীনা গঙ্গোপাধ্যায় ও শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত এই ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন লিলি চক্রবর্তী, পাওলি দাম এবং দেব।
অতনু রায়চৌধুরি বললেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chatterjee) কিংবদন্তি অভিনেতা। তিনি বাঙালির গর্ব। তাঁকে শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাতে এটা একটা সুন্দর উদ্যোগ। তিনি জানালেন, বেশ কয়েকটা সিনেমা হলেই নতুন করে মুক্তি পাচ্ছে সাঁঝবাতি’।
এদিকে, আজ বুধবার ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সমিতির বৈঠকেও এই প্রসঙ্গটি উঠবে বলে জানা গেছে। ইম্পার কোষাধ্যক্ষ শান্তনু রায়চৌধুরি বললেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আমাদের গর্ব। আমরা চাই তাঁর অসাধারণ কিছু ছবি আবার বড়পর্দায় দেখানো হোক। শান্তনুবাবু বললেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রযোজনায় তাঁর দুটি সুপারহিট সিনেমার পুনর্মুক্তির জন্য আমরা বুধবার আলোচনা করব। ছবি দুটি হল ‘হীরক রাজার দেশে’ এবং ‘গণদেবতা’। শান্তনুবাবু বলেন, ইম্পার বৈঠকে তিনি এই প্রস্তাব আনবেন। যদি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়, তাহলে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করা হবে এই দুটি ছবির কোনও একটা যদি নতুন করে সিনেমা হলে রিলিজের ব্যবস্থা করা যায়।
এখন করোনা–আবহে সিনেমা হলে (Cinema Hall) খুব বেশি দর্শক আসছেন না। কিন্তু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অসাধারণ অভিনয়–সম্পন্ন ভাল ছবি যদি আবার সিনেমা হলে আসে, তাহলে দর্শকরাও করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আসন ভরিয়ে দেবেন, এমনটা আশা করছেন কিছু হল–মালিক। সুরঞ্জন পাল বললেন, ক্লাসিক ছবির প্রতি বাঙালির ভালবাসা চিরকালীন। আশা করা যায়, তার ফল মিলবে সৌমিত্রবাবুর ছবির পুনর্মুক্তি হলে।
আপাতত, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পুরনো ছবির ( Bengali Movie) পুনর্মুক্তি শুরু হচ্ছে দু’দিন পরেই, শুক্রবার। সাঁঝবাতির আলোয় কতটা আলোকিত হন দর্শকরা, হল কর্তৃপক্ষ সেদিকেই তাকিয়ে।