পুরসভার অনুমতি ছাড়াই গায়ের জোরে পার্টি অফিস করছে বিজেপি
আরএসপির পর এবার মালদহে পার্টি অফিস নিয়ে বিতর্কে জড়াল বিজেপি। কেন্দ্রের শাসক দল মালদহ জেলা সদরে যে ঝাঁ চকচকে কার্যালয় বানাচ্ছে, সেটির জন্য পুর আইন মোতাবেক কোনও অনুমোদন নেওয়া হয়নি বলে দাবি ইংলিশবাজার পুরসভা কর্তৃপক্ষের। পুরসভার অনুমোদন না নিয়েই পার্টি অফিসের উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে জেলা বিজেপি নেতৃত্বকে লিখিত নোটিস পাঠানো হতে পারে বলেও ইংলিশবাজার পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে পুরসভা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি (BJP)। জেলা বিজেপির দাবি, অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল প্রায় ১৭ বছর আগে। পুরসভার কাছে নথি না থাকা কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা। এই নিয়ে ইংলিশবাজার পুরসভার বিরুদ্ধে বিজেপি আইনি লড়াই লড়তেও প্রস্তুত বলে জানিয়েছে দলের জেলা নেতৃত্ব।
ইংলিশবাজার পুরসভার (English Bazar Municipality) প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন নীহার ঘোষ বলেন, সম্প্রতি জানতে পেরেছি, বিজেপির জেলা কার্যালয়টির উচ্চতা বাড়ানো হচ্ছে। যেকোনও নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণের ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত প্ল্যান পুরসভায় জমা দিয়ে তা অনুমোদন করানোর কথা। অন্তত পুর আইনে তাই বলা রয়েছে। জেলা বিজেপির পক্ষ থেকে এই ধরনের কোনও নকশা জমা দেওয়া বা অনুমোদন নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি বিজেপি নেতৃত্ব একটি বিষয়ে পুরসভায় ডেপুটেশন দিতে এসেছিল। তাঁদেরকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, মালদহ(Malda) শহরের পুরাটুলি বাঁধ রোডে নতুন করে বিজেপি অফিস বানানো হচ্ছে। ছয় কাঠা জায়গায় নির্মিত এই পার্টি অফিসটি এখন তিনতলা করা হচ্ছে। থাকছে ১৫টি ঘর। বিধানসভা নির্বাচন পরিচালনার জন্য এই কার্যালয়টিকেই ‘ওয়্যার রুম’ হিসেবে ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। অরবিন্দ মেনন, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, হরিশ দ্বিবেদীর মতো কেন্দ্রীয় নেতারা বা রাজ্য বিজেপির শীর্ষ পদাধিকারিরা এখন থেকে মালদহে এলে হোটেলের পরিবর্তে নতুন সাজে সেজে ওঠা এই জেলা পার্টি অফিসে থাকবেন বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। ঝকঝকে টাইলস থেকে প্লাস্টার অব প্যারিসে সেজে উঠছে এই কার্যালয়। জেলা সভাপতি গোবিন্দ মণ্ডল, সহ-সভাপতি অজয় গঙ্গোপাধ্যায় সহ জেলা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই ভবনের তদারকিতে ব্যস্ত। বিজেপির এক জেলা নেতা বলেন, এই দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন করবেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জগতপ্রকাশ নাড্ডা। তাই এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। তবে উদ্বোধনের আগেই এই ‘ওয়্যার রুম’ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় নির্বাচনী লড়াই এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। এদিন পুরসভার চেয়ারপার্সনের করা অভিযোগের কথা জানতে পেরেই আসরে নেমে পড়েন বিজেপি জেলা নেতৃত্ব। জেলা কার্যালয়ে চলে আসেন দলের জেলা সভাপতি থেকে শুরু করে একের পর এক নেতানেত্রীরা। চলে আসেন বিজেপি যুব মোর্চার জেলা সভাপতি শুভঙ্কর চম্পটিও।
নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় আলচনা সেরে বিজেপি জেলা সভাপতি গোবিন্দ মণ্ডল বলেন, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছে পুরসভা কর্তৃপক্ষ। ২০০৩ সালে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তপন শিকদারের আমলেই এই ভবনকে বহুতল করার অনুমতি নেওয়া হয়েছিল পুরসভা থেকে। তার ব্লু-প্রিন্টও রয়েছে দলের কাছে। একই ভবনের জন্য বারবার অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। পুরসভা সম্ভবত ওই অনুমতির কপিটি হারিয়ে ফেলে এখন ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে। বিজেপি বেআইনি নির্মাণ করেনি।
তবে ঝাঁঝালো আক্রমণ করেছেন দলের জেলা সহ সভাপতি। তিনি বলেন, পুরসভার বর্তমান কর্তৃপক্ষের বিদায় আসন্ন। নির্বাচন হলেই ইংলিশবাজার পুরসভা দখল করব আমরা। তারপরে তৃণমূল (Trinamool) নেতাদের সব বেআইনি নির্মাণের তালিকা তৈরি করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আসলে তৃণমূলের নিজস্ব দলীয় কার্যালয় নেই। নেতানেত্রীদের বাড়িকেই ওঁরা পার্টি অফিস বলেন। তাই বিজেপির এই সুদৃশ্য পার্টি অফিস দেখে হিংসায় অবান্তর অভিযোগ করছেন তাঁরা।