পর্যটনে বাংলার সংস্কৃতির প্রদর্শনের সুযোগ করে দিচ্ছে পর্যটন মন্ত্রক
ফের বেড়াতে যাওয়ার উৎসাহ জোগাতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে কেন্দ্র। পর্যটন মন্ত্রকের অধীন কলকাতা ট্যুরিজম (Tourism) রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত ছোট অথচ মনোরম পর্যটনকেন্দ্রগুলিকে ঘিরে হরেক পরিকল্পনা করছে। তাতে পর্যটকরা শুধু যে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দে মাতবেন তা নয়, পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা অন্যান্য শিল্পচর্চার সঙ্গী হতে পারবেন। বাংলার কোণে কোণে যে কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক পরম্পরা রয়েছে, তাকে ফের একবার চেখে দেখতে পারবেন পর্যটকরা।
আনলক পর্বে (Unlock) পর্যটনের দরজা খুললেও বহু মানুষ এখনও বেড়াতে যাওয়ার সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারছেন না। করোনা সংক্রমণের ভয় সর্বত্র। তাই এক-দু’দিনের জন্য যাতে তাঁরা কাছেপিঠে বেড়ানোর পরিকল্পনা করেন, তার জন্য এগিয়ে এসেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক। রিজিওনাল ডিরেক্টর সাগ্নিক চৌধুরী বলেন, আমরা কয়েকটি উদ্দেশ্য নিয়ে পুরো বিষয়টি ছকেছি। প্রথমত, পর্যটকরা যাতে খুব কাছাকাছি অথচ রোমাঞ্চকর জায়গায় বেড়াত যেতে পারেন, তেমনই পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাঁরা যাতে শুধু পর্যটনের বাইরেও বাড়তি কিছু পান, তার জন্য আমরা বিভিন্ন আঞ্চলিক শিল্পীকে সঙ্গে নিয়েছি। তাঁদের পারিশ্রমিক সরকার দিচ্ছে। কিন্তু দর্শক বিনামূল্যে তাঁদের অনুষ্ঠান বা কৃতিত্ব উপভোগ করতে পারবেন। পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন ট্যুর অপারেটরকে সঙ্গে রেখেছি, যাঁরা আমাদের এই উদ্যোগের মাধ্যমে কিছুটা ব্যবসা করতে পারবেন। তাছাড়া যেসব হোম স্টে বা পযর্টন আবাস আছে, সেসবের সন্ধানও পর্যটকদের দিচ্ছি। এতে স্বল্প সময়ের বেড়ানোয় স্বাচ্ছন্দ্য তাঁরা পাবেন। এরপরও কোভিড থেকে দূরে থাকার সবরকম ব্যবস্থাও থাকবে। অর্থাৎ সরকারি নিয়ম ও বিধির মধ্যে থেকে পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত সবমহলের জন্যই এই উদ্যোগ। দাবি সাগ্নিকবাবুর। তিনি জানান, সোশ্যাল মিডিয়া-সহ নানা মাধ্যমে এর প্রচারও চালানো হবে।
কীভাবে সাজানো হয়েছে বিষয়টি? দপ্তরের কর্তাদের কথায়, পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার কথাই ধরা যাক। পটচিত্রের জন্য নামডাক আছে। ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারির মধ্যে যদি এখানে কেউ বেড়তে যান, তাহলে তিনি কোথায় থাকবেন, কী দেখবেন, তার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই ক’দিন তাঁরা সেখানকার শিল্পীদের সঙ্গে বসে পটচিত্র আঁকা দেখতে পারবেন, শিখতে পারবেন। রহিম চিত্রকর, বাহাদুর চিত্রকর বা স্বর্ণ চিত্রকরের মতো শিল্পীরা পর্যটকদের কৌতূহল মেটাবেন। সরকার তার ব্যবস্থা করেছে। ঠিক একইভাবে পুরুলিয়ার চড়িদায় যাঁরা মুখোশ তৈরির গ্রাম দেখতে আসবেন, তাঁদের জন্য ফাল্গুনী সূত্রধর বা ধর্মেন্দ্র সূত্রধরের মতো শিল্পীরা হাতেকলমে মুখোশ তৈরি করে দেখাবেন। পাশাপাশি পুরুলিয়া ভ্রমণ বিষয়ক খুঁটিনাটি তো থাকছেই। এভাবেই জয়দেবের কেঁদুলি, সুন্দরবনের পাখিরালয় বা বাঁকুড়ার ডোকরা শিল্পীদের গ্রামে ঘুরে আসতে পারবেন পর্যটকরা। এলাকা ভেদে তাঁরা উপভোগ করবেন রায়বেঁশে, বাউল, ঝুমুর, ভাটিয়ালি বা বনবিবির পালা। দক্ষিণবঙ্গে বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের বেশকিছু অফ বিট এলাকায় ছোট ট্যুরের সন্ধান দিচ্ছে কেন্দ্র। জানুয়ারির নানা সময়ের জন্য রুটিন তৈরি করেছে কলকাতা ট্যুরিজম, যেখানে গেলে বাংলার সংস্কৃতির বৈচিত্র খুঁজে পাবেন পর্যটকরা।