ধর্মঘটে আটকে পড়লেন ধর্মঘটি শ্রমিকরাই, সাহায্যে যাত্রীরা
শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা বনধে রেল অবরোধের জেরে বিধ্বস্ত শ্রমিকদেরই জীবন। অবরোধের ফলে আটকে থেকে কাজে যেতে পারলেন না মজুরদের অনেকেই। ফলে ক্ষোভের বশে তাঁরাই অবরোধ তুলে ফেললেন অনেক জায়গায়। তবে একাধিক জায়গায় অবরোধকারীদের ভাঙচুরে আহত হয়ছেন রেলকর্মীরা।
ভোরের প্রথম ট্রেন ধরে খুব সকালে কলকাতায় বাবুদের বাড়ি এসে কাজ শুরু করেন ক্যানিং এর চন্দনা, বাণী, রমলারা। একইরকম ভাবে বেতবেরিয়া, ঘোলা, ডায়মন্ড হারবারের চৈতালি, মুন্নিরাও কলকাতায় আসেন একই কাজের জন্য। এদিন ট্রেন ধরেও কর্মস্থলে পৌঁছতে পারেন নি তাঁরা। ভোররাতে অবরোধের ফলে স্তব্ধ হয়ে যাওয়ায় অসংখ্য যাত্রী আটকে পড়েন ট্রেনগুলিতে। ডায়মন্ড হারবার (Diamond Harbour) শাখার হোটর, লক্ষ্মীকান্তপুরে ওভারহেড তারে কলাপাতা ফেলে দেওয়ায় ট্রেন আটকে পড়ে ভোর সাড়ে চারটা থেকেই। এরপর একে একে মথুরাপুর, দক্ষিণ বারাসত, সংগ্রামপুরে অবরোধ শুরু হয়। লাইনে স্লিপার, গাছের ডাল ফেলে তার উপর বসে পড়েন বনধ সমর্থকরা। বেলার দিকে বীতশ্রদ্ধ যাত্রীরাই বারুইপুর প্রতিবাদ করে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ সমর্থকদের তাণ্ডব শুরু হয়ে যায়। উত্তর থেকে দক্ষিণ সব শাখায় শুরু হয়ে যায় অবরোধ। বেলঘরিয়া, ইছাপুর, নিউ বারাকপুর, দমদম ক্যান্টনমেন্ট, পলতা অবরোধে ট্রেন আটকে পড়ে। হাওড়া ডিভিশনের শ্রীরামপুর, চন্দননগর, নালিকুল ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের একাধিক স্টেশনে দীর্ঘক্ষণ অবরোধ চলে। বেশ কিছু স্টেশনে তাণ্ডব চালান অবরোধকারীরা। হাবড়া স্টেশনে বুকিং কাউন্টারে ভাঙচুরের সময় এক বুকিং কর্মী কাচ ভেঙে জখম হন। তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদিকে অশোকনগরে ভিড়ে ট্রেনে চড়তে গিয়ে পড়ে গুরুতরভাবে আহত হন সুন্দরবনে (Sundarbans) পোস্টেড এক পুলিশ কনস্টেবল। নাম জয়ন্ত রায়চৌধুরী। বাণিপুরের বাসিন্দা তিনি। দুর্ঘটনার পর তাঁকে বারাসত হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে।
আগাম প্রস্তুতি সত্বেও সকাল থেকে অবরোধ চললেও তা তুলতে দীর্ঘক্ষণ লেগে যায়। পূর্ব রেল জানিয়েছে, শিয়ালদহ (Sealdah) ডিভিশনে কয়েক জায়গায় ওভারহেড তারে কলাপাতা ফেলায় তা সরাতে টাওয়ার ভ্যানকে যেতে হয়। সমস্ত অবরোধ সরিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হতে বেলা সাড়ে দশটা বেজে যায়। অসংখ্য ট্রেন আটকে থাকায় ট্রেন চলাচল অনিয়মিত হয়ে পড়ে। ফলে বেলা পর্যন্ত শিয়ালদহে ৭০টি, হাওড়ায় ১০টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।
বাম-কংগ্রেস শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা বনধের ফলে বৃহস্পতিবার অবরোধ করা হয় ট্রেন। দীর্ঘ লকডাউন (Lockdown), কোভিডের (Covid 19) মতো চরম সংকটকালে যখন সাধারণ মানুষ দিশেহারা তখন এই বনধ অমানবিক বলে দাবি করেন যাত্রীরা। রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করে বারুইপুর অবরোধকারীদের উপর পালটা চড়াও হয়ে অবরোধ তুলতে বাধ্য করেন যাত্রীরাই। ক্ষুব্ধ যাত্রীদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন কাজ নেই, ‘দিন আনা দিন খানার’ মতো কাজ করতে কলকাতা যেতে হচ্ছে। তাও যাওয়া যাচ্ছে না অবরোধের ধাক্কায়। ট্রেন অবরোধের সঙ্গে স্টেশনে হকারদের তাড়িয়ে দেয় অবরোধকারীরা।
এদিকে এমনিতেই ট্রেন সংখ্যায় কম। তার ওপর বাতিলের হিড়িকে এদিন রাত পর্যন্ত ট্রেন চলাচল অনিয়মিত হয়ে পড়ায় দূরের জেলাগুলোর মানুষজন কাজে কম এসেছিলেন। রাতে বাড়ি ফিরতে পারবেন কি না, এই দোটানায় অনেকেই অবরুদ্ধ স্টেশন থেকেই বাড়ি ফিরে যান। দূরপাল্লার বেশ কিছু ট্রেন অবরোধে আটকে থাকার পর হাওড়া আসে। ট্যাক্সি কম থাকায় যাত্রীদের হয়রান হতে হয়েছে। হাওড়ার রেল পুলিশ সুপার পঙ্কজ দ্বিবেদী বলেন, অনেক স্টেশনে অবরোধ হলেও ঝামেলা কোথাও হয়নি।