যন্তরমন্তরে ঢুকতে দেওয়ার দাবীতে অনড় কৃষক সংগঠন
দিল্লির যন্তরমন্তরে ঢুকতে না দিলে সরকারের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা করা হবে না। শনিবার এই দাবিতেই অনড় রইল বিক্ষোভরত কৃষক সংগঠনগুলি। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য দিল্লি-হরিয়ানা সীমানার সিংঘু বর্ডারে পৌঁছলেন সর্বভারতীয় কৃষক সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা। বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, সিংঘু সীমান্ত থেকে আপাতত তাঁরা অন্যত্র সরে যাচ্ছেন না। পরিবর্তে ওই এলাকাতেই অবস্থান বিক্ষোভে শামিল হবেন তাঁরা। এর জেরে আগামী ৩ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সরকারের ডাকা প্রস্তাবিত বৈঠককে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। বিক্ষোভকারীদের দাবি, নতুন করে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলার কিছু নেই। তিনটি কৃষি আইন অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। একমাত্র তাহলেই আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন তাঁরা।
গত দু’দিনের মতো কৃষক বিক্ষোভকে (Farmer’s Protest) ঘিরে শনিবার তুলকালাম না হলেও এদিন দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তের সিংঘু এবং তিক্রিতে উত্তেজনা ছিল যথেষ্টই। যন্তরমন্তরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেওয়ার দাবিতে এদিন আচমকাই সিংঘু বর্ডারে টায়ার জ্বালিয়ে দেন বিক্ষোভরত কৃষকেরা। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারপাশ। মুহূর্তে পজিশন নেয় পুলিস। জলকামান, কাঁদানে গ্যাসের শেল হাতে বিশাল পুলিস বাহিনী ও র্যাফ পরিবেষ্টিত হয়ে গোটা সীমান্ত এলাকা তখন কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রই।
উত্তেজনা ছড়িয়েছে দিল্লি-গাজিয়াবাদ বর্ডারেও। ‘দিল্লি চলো’ (Delhi Chalo) অভিযানে শামিল হতে এদিন উত্তরপ্রদেশ থেকে কয়েকশো কৃষক দিল্লি অভিমুখে যাত্রা করতেই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। যদিও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। সিংঘু বর্ডারে কৃষক আন্দোলনের প্রতিনিধিরা এদিন জানিয়ে দিয়েছেন, প্রতিদিন সকাল ১১টায় তাঁরা ওখানেই নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে দিনের পরবর্তী কর্মসূচি স্থির করবেন। কৃষক বিক্ষোভে কার্যত পিছু হটে শুক্রবারই দিল্লি পুলিস জানিয়ে দিয়েছিল, শান্তিপূর্ণভাবে উত্তর-পশ্চিম দিল্লির নিরঙ্কারি সমাগম গ্রাউন্ডে কৃষকেরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে পারবেন। সেইমতো কয়েকশো কৃষক সেখানে চলেও আসেন। কিন্তু পাঞ্জাবের কৃষকেরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যন্তরমন্তর (Yantar Mantar) ছাড়া তাঁরা অন্য কোথাও বিক্ষোভ দেখাবেন না। ফিরেও যাবেন না।
‘সম্মিলিত কিষাণ মোর্চা’ ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে আন্দোলনের জন্য ‘রামলীলার মতো ময়দান’ দাবি করেছেন। এই কৃষক আন্দোলন কর্মসূচিতে একেবারে প্রথম দিন থেকেই রাজনীতির রং লেগেছে। এদিনও হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর অভিযোগ করেছেন, ‘পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরের আধিকারিকেরাই কৃষক বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিক্ষোভে উস্কানি দিচ্ছেন। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী আমার ফোনও ধরছেন না। হরিয়ানার কৃষকেরা এর বাইরেই রয়েছেন।’ বিক্ষোভকারীদের দাবি, হরিয়ানার কৃষকেরা তাঁদের সচিত্র পরিচয়পত্র সঙ্গেই রেখেছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রয়োজনে তা দেখে নিতে পারেন। একইসঙ্গে শনিবার সিপিএম, সিপিআই, সিপিআই(এমএল), আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, ডিএমকে, এনসিপি এবং আরজেডির পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘কৃষকদের জন্য বুরারির গ্রাউন্ড অত্যন্ত ছোট। অবিলম্বে রামলীলা ময়দান কিংবা এরকম অন্য কোনও বড় ময়দানে কৃষক জমায়েতের অনুমোদন দিক কেন্দ্র। তাঁদের কথা শোনা হোক।’