দেশ বিভাগে ফিরে যান

কৃষক আন্দোলনের জেরে দিশাহারা কেন্দ্র

December 1, 2020 | 2 min read

কৃষি বিল প্রত্যাহার নিয়ে দিল্লি সীমানায় আন্দোলনকারী কৃষকদের মঙ্গলবার বৈঠকের জন্য আহ্বান জানালো কেন্দ্র সরকার। মঙ্গলবার বিকেল ৩টের সময় দিল্লির বিজয় ভবনে এই বৈঠক হবে বলে জানানো হয়েছে। ৩ ডিসেম্বর বৈঠকের জন্য দিন নির্দিষ্ট ছিল আগেই। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতি এবং উত্তরভারত জুড়ে চলা শৈত্যপ্রবাহের উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমার বৈঠকের দিন এগিয়ে নিয়ে আসার কথা জানান কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিদের।

কৃষি আন্দোলন ইস্যুতে ক্রমশ উত্তাল হচ্ছে রাজধানীর সীমানা। উত্তাল হচ্ছে রাজনীতি। দিল্লিতে আসার পাঁচ পথ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন আন্দোলরত কৃষকরা। আটকে দেওয়া হতে পারে জাতীয় সড়কও। স্রেফ দু’দিনের আন্দোলন কর্মসূচি। কিন্তু সবটাই নির্ভর করছে, সরকার তাঁদের দাবি মানবে কি না। কেন্দ্র মাথা নত না করলে? এই অবস্থান চলতে পারে ছ’মাসও। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আর তাই কপালের ভাঁজ বাড়ছে সরকারের। সিঁদুরে মেঘ দেখছে তারা… শাহিনবাগের। সিএএ বিরোধী অবস্থান-বিক্ষোভ যে কোন জায়গায় যেতে পারে, তা দেখিয়ে দিয়েছে শাহিনবাগ। তার উপর চাপ বাড়িয়েছেন রাজস্থানের এমপি তথা এনডিএ (NDA) শরিক রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টির সদস্য হনুমান বেনিওয়াল। কীভাবে সামাল দেওয়া যাবে এই বিক্ষোভ? এরই উত্তর খুঁজতে কালঘাম ছুটছে বিজেপি সরকারের। আন্দোলনকারীদের বৈঠকে বসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও (Amit Shah)।

এরই মধ্যে আজ, মঙ্গলবার দুপুর তিনটেয় কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিদের আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার। আগে ওই বৈঠক ৩ ডিসেম্বর হওয়ার কথা ছিল।
কৃষি আইন ইস্যুতেই দীর্ঘদিনের শরিকি সম্পর্ক ছেদ করেছে শিরোমণি অকালি দল। এবার রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টির বেনিওয়ালের গলাতেও হুঁশিয়ারির সুর। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি মোটেই সন্তোষজনক নয়। শেষ পর্যন্ত আসরে নামতে হয়েছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকেও। রবিবার ‘মন কি বাত’-এ (Maan Ki Baat) তিন কৃষি আইন নিয়ে সাফাই দেওয়ার পর সোমবারও ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টাচরিত্র করেছেন তিনি। বারাণসী-প্রয়াগরাজ জাতীয় সড়ক ১৯-এর ছয় লেনে প্রশস্ত করার প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তিনি।

সেখানে বেশিরভাগ সময়ই খরচ করলেন তিনি নয়া এই আইন নিয়ে। চেষ্টা একটাই, এক ঢিলে দুই পাখি মারতে হবে—উন্নয়নের ঢাক পেটানো এবং বিরোধীদের আক্রমণ। কংগ্রেস এবং তৃণমূলকে টার্গেট করলেন তিনি কৃষক-বিরোধী তকমায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতদিন কৃষকদের নামে স্রেফ প্রকল্প ঘোষণা হয়েছে, এমএসপি (ন্যূনতম সহায়ক মূল্য) নিয়ে ছলনা হয়েছে। কৃষি ঋণ মাফ করা নিয়েও ছলচাতুরি চলেছে। আমরা তা করিনি। সারের কালোবাজারি বন্ধ করেছি। একইভাবে খাদ্যশস্য সংগ্রহও বহুগুণ বেড়েছে। এমএসপি ব্যবস্থা অটুট আছে। থাকবেও।’

নাম না করে কংগ্রেসকে (Congress) বিঁধে তিনি বলেন, ‘এতদিন যারা কৃষকদের নামে প্রকল্প ঘোষণা করে এক টাকার মধ্যে মাত্র ১৫ পয়সা দিত, তাদের তো আজ কৃষকদের বিভ্রান্ত করা ছাড়া গতি নেই। কৃষকরাও দীর্ঘদিন ঠকেছেন। তাই আশঙ্কায় ভুগছেন। কিন্তু এই সরকারের আমলে তা হবে না।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দশকের পর দশক কৃষকদের নিয়ে ছলনা হয়েছে। কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য গঙ্গাজলের মতো পবিত্র।’

মোদির ওই কটাক্ষের পাল্টা জবাব দিয়েছে দু‌ই
বিরোধী দলও। ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক চাষিদের ঋণ মকুবের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী। পাশাপাশি কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন রাহুল, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। প্রশ্ন তুলছেন, নতুন আইনে আসলে কাদের পাশে মোদি সরকার, গরিব কৃষক? নাকি পুঁজিবাদী বন্ধু ব্যবসায়ী? তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়ানও ছেড়ে কথা বলেননি। প্রধানমন্ত্রীর কটাক্ষে তাঁর জবাব, শত চেষ্টাতেও তৃণমূলকে কৃষক-বিরোধী প্রমাণ করতে পারবেন না। সিঙ্গুর আন্দোলন থেকে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এসে কৃষকদের উপার্জন তিনগুণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) প্রমাণ করে দিয়েছেন, তাঁর কর্মসূচিতে জুমলা নেই।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Farmers' protest, #central government

আরো দেখুন