আজ থেকে বাংলার দুয়ারে দুয়ারে সরকার
আজ, মঙ্গলবার থেকে রাজ্যজুড়ে শুরু হচ্ছে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি। চলবে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত। নজিরবিহীন এই উদ্যোগে দু’মাস সাধারণ মানুষের বাড়ির কাছেই শিবির গড়বে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর। এক ছাতার তলায় মিলবে সেরা ১১টি প্রকল্পের পরিষেবা। জানানো যাবে যাবতীয় অভাব-অভিযোগ। গৃহীত হবে সরকারি পেনশন, বিধবা বা বার্ধক্যভাতার আবেদনও। সম্ভব হলে চটজলদি নিষ্পত্তিতে উদ্যোগী হবেন প্রশাসনের কর্তারা।
সোমবার নবান্নে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় (Alapan Bandyopadhyay) বলেন, ‘২০ হাজারেরও বেশি শিবির হবে গোটা রাজ্যে। নিচুতলার কর্মীরা থাকবেন সেখানে। বিডিও বা এসডিও পদমর্যাদার আধিকারিকরাও নিয়মিত যাতায়াত করবেন শিবিরগুলিতে। তৃণমূল স্তরে পরিষেবা দেওয়ার এই কাজ কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে, তা তদারকি করবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। সেটা হবে ‘রিয়েল টাইম মনিটরিং’ পদ্ধতিতে। অর্থাৎ পরিষেবা প্রদান সংক্রান্ত কাজ কতটা এগচ্ছে, প্রতি মুহূর্তে তার পর্যালোচনা করা। এর দায়িত্বে থাকবেন দপ্তরের সচিবরা।’
নবান্ন (Nabanna) সূত্রের খবর, শিবিরগুলি হবে সরকারি অফিসের এক একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ। কত সংখ্যক আবেদন জমা পড়ছে, কত অভিযোগের নিষ্পত্তি হচ্ছে, তা দেখভালে তৈরি হয়েছে পরিকাঠামো। মুখ্যসচিবের কথায়, ‘ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম। খোলা হচ্ছে অনলাইন পোর্টালও।’ তিনি জানিয়েছেন, ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে ঘোষিত নির্দিষ্ট প্রকল্পগুলির বাইরে বিভিন্ন সরকারি পেনশন, বিধবা ও বার্ধক্য ভাতার মত সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলির আবেদন গ্রহণ করা হবে।
এদিন, নবান্ন থেকে প্রতিটি জেলার জেলাশাসক, বিডিও এবং মহকুমা শাসকের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন মুখ্যসচিব। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রীও। তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। পরে মুখ্যসচিব বলেছেন, ‘প্রতিটি জেলায় একজন করে নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। যাঁরা পুরো কর্মসূচিটি তদারক করবেন। গড়া হয়েছে টাস্ক ফোর্স। দু’মাসব্যাপী এই উদ্যোগকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে।’ প্রথম রাউন্ড শুরু হচ্ছে আজ। চলবে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই পর্যায়ে মানুষ তাঁদের আবেদন বা অভিযোগ জানাতে পারবেন শিবিরগুলিতে। এখানেই পাওয়া যাবে প্রয়োজনীয় ফর্ম। দ্বিতীয় রাউন্ড শুরু ১৫ ডিসেম্বর। চলবে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই পর্যায়ে সাধারণ মানুষ আবেদনপত্রগুলি পূরণ করে জমা করতে পারবেন। আগামী ২ জানুয়ারি শুরু হবে তৃতীয় রাউন্ড। এখানে গ্রাহকের হাতে সরাসরি পরিষেবা পৌঁছে দেবেন অফিসাররা। এই প্রক্রিয়া চলবে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত। সমস্যা থাকলে তার সমাধান হবে চতুর্থ রাউন্ডে। সেটি চলবে১৮-২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।
মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, রাজ্যের বিভিন্ন পঞ্চায়েত বা পুরসভার ওয়ার্ডগুলিতে ঘুরে ঘুরে শিবির হবে। কবে, কোথায় শিবির হবে, তার রুটিন তৈরি করেছে জেলা প্রশাসন। মানুষের চাহিদা বা প্রয়োজনমতো কর্মীরা যতটা সম্ভব ওখান থেকেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন। এ ব্যাপারে ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর’ তৈরি হয়েছে। মানুষ প্রথম রাউন্ডেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা নথি জমা করলে তাঁকে দ্বিতীয় রাউন্ডের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। এই সংক্রান্ত তথ্য সরকারের ওয়েবসাইট ‘এগিয়ে বাংলা’ (Egiye Bangla) থেকেও পাওয়া যাবে। প্রচার করবেন লোকপ্রসার শিল্পীরাও। আগে স্বাস্থ্যসাথী, কাস্ট সার্টিফিকেট, জয় জোহার, তফসিলি বন্ধু, খাদ্যসাথী, ঐক্যশ্রী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, কৃষক বন্ধু এবং ১০০ দিনের কাজ নিয়ে মোট ১০টি প্রকল্পে পরিষেবা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল নবান্ন। ওই তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে শিক্ষাশ্রী।