শীতের চড়ুইভাতি – বাঙালির নস্ট্যালজিয়া
চড়ুইভাতি, বনভোজন বা পিকনিক যে নামেই ডাকা হোক না কেন শীতকাল এলেই শুরু হয়ে যায় তার তোড়জোড়। তারপর একদিন ভোরবেলায় সদলবলে হুশ করে বেরিয়ে পড়া।
শীতকাল মানেই গাছের পাতায় শিশির, কুয়াশা মাখানো সকাল, উলের জামাকাপড়, কমলালেবু, নলেন গুড় আর মোয়া। শীত পড়তে না পড়তেই, ‘কোথায় পিকনিক হবে’, ‘কখন যাব’, ‘কী কী খাবো’ ইত্যাদি।
শীত মানেই এক কথায় চড়ুইভাতির মরসুম। কলকাতাবাসী এই শীতের ছুটিতে সে আনন্দ থেকে নিজেদের বঞ্চিত করতে নারাজ। আর কেন-ই বা করবে যখন হাতের নাগালেই রয়েছে পিকনিক করার এতো ভালো ভালো জায়গা।
কলকাতার আশেপাশের কিছু পিকনিক স্পট দেখে নেওয়া যাক:
গাদিয়ারা:
শহরের ব্যাস্ততাকে কিছুটা সময়ের জন্যে পিছনে ফেলে কিছুটা সময়ের জন্যে চলে যাওয়াই যেতে পারে কলকাতা থেকে মাত্র ৮৬ কিলোমিটার দূরে গাদিয়ারাতে। প্রকৃতির শান্ত, নির্মল সৌন্দর্য কিছুটা সময়ের জন্যে হলেও ভুলিয়ে দেবে রোজকার ক্লান্তি। এখানকার আকর্ষণ এখানকার নিজস্ব খাবার দাবার এবং নৌকা বিহার। ট্রেন বা বাসে করে হাওড়া পৌঁছে সেখান থেকে ফেরীতে করে গাদিয়ারা পৌঁছতে হবে।
টাকি:
রোজকার কাজের চাপের ফাঁকে কিছুটা সময় ইছামতীর বুকে কাটাতে মন্দ লাগবে না। তারই সঙ্গে বাড়তি পাওনা দুই বাংলার সংস্কৃতি দর্শন। নদীবক্ষে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অবধি যেতে নৈসর্গিক আনন্দ অনুভব হয়। কলকাতা থেকে মাত্র ৬৭ কিলোমিটার দূরে ইছামতী, কিন্তু নাগালের একদম কাছে।গাড়িতে যেতে সময় লাগে ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট। তাছাড়া হাসনাবাদ পর্যন্ত ট্রেন ও আছে।
সবুজদ্বীপ:
কলকাতা থেকে মাত্র ৭৫ কিলোমিটার দূরে হুগলী নদীর ওপর ছোট্ট এই দ্বীপে একটা দিন কাটিয়ে আপনারও নিজেকে মনে হতে পারে ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’। হুগলী জেলায় অবস্থিত সবুজদ্বীপ যেতে হলে হাওড়া বা শিয়ালদা থেকে ট্রেন ধরে সোমরা বাজার পৌঁছতে হবে। সেখান থেকে রিক্সা বা ভ্যানে চড়ে পৌঁছতে হবে সুখাদিয়া গ্রাম। সেখান থেকেই মোটর চালিত নৌকায় পৌঁছনো যাবে সবুজ দ্বীপে। ১৮০ বিঘা বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিস্তৃত সবুজদ্বীপে রয়েছে শিশুদ্যান, পাইন,তাল, মেহগনি গাছের সারি, ফুল বাগান ও ওয়াচ টাওয়ার।
বকখালি:
কলকাতা থেকে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নিরালা সমুদ্র সৈকত। কোলাহল থেকে এখনো খানিকটা আড়ালে। নির্জনে কিছুটা সময় কাটাতে যাওয়া যেতেই পারে বকখালি। বাসে করে সোজাসুজি বকখালিতে পৌঁছনো যায় আর ট্রেনে গেলে নামখানা স্টেশন অবধি গিয়ে সেখান থেকে বকখালি যাওয়ার ভাড়ার গাড়ি পাওয়া যায়। সমুদ্রের হাতছানি, নিরিবিলি এবং নিখাদ আনন্দ এখানে আপনার সঙ্গী। হাতে সময় করে চলে যেতে পারেন হেনরি আইল্যান্ডেও।
বক্রেশ্বর:
দূরত্ব তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি। কলকাতা থেকে প্রায় ২১৬ কিলোমিটার। কিন্তু এখানকার শিব মন্দির, তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প, উষ্ণ প্রস্রবণ ভুলিয়ে দেবে সেই দুঃখ। তাই পিকনিকের জন্যে এই জায়গাটিকেওবাদ দেওয়া যায় না। ট্রেন, বাস সব যোগাযোগই রয়েছে।
বরন্তি:
গ্রামের পরিবেশ কে প্রান ভরে উপভোগ করতে হলে চলে যেতে হবে বরন্তিতে। কলকাতা থেকে ২৩৫ কিলোমিটার দূরে এখানে ছোট পাহাড়, ঘন জঙ্গল – সবেরই দেখা মিলবে। মন চাইলে করে নেওয়া যেতেই পারে ট্রেকিং বা বন ফায়ার। গাড়িতে বরন্তি পৌঁছতে সময় লাগে ৬ ঘন্টা।
পিয়ালী দ্বীপ:
কলকাতা থেকে মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে পিয়ালী নদীর মাঝে ছোট্ট একটা দ্বীপ। নদীর পাড় থেকে দ্বীপে যাওয়ার জন্যে একটি মাত্র ব্রিজ রয়েছে। যারা সুন্দরবন না গিয়েও বনের মধ্যে চড়ুইভাতি উপভোগ করতে চান, তাদের জন্যে উপযুক্ত ঠিকানা। নিজের গাড়ী নিয়ে যাওয়াই সবথেকে সুবিধাজনক। তাছাড়া দক্ষিণ বারাসাত অবধি ট্রেনে গিয়ে সেখান থেকে ট্রেকারে করে যাওয়া যায়।
দারিয়াপুর:
কলকাতা থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দূরে পূর্ব মেদীনিপুর জেলায় অবস্থিত দাড়িয়াপুর পিকনিকের জন্যে হতে পারে এক উপযুক্ত ঠিকানা। ট্রেন বা বাসে করে কন্টাই পৌঁছে সেখান থেকে দাড়িয়াপুরের জন্য ভাড়ার গাড়ি পাওয়া যাবে। নদীর তীরে খানিকটা সময় কাটাতে মন্দ লাগবে না। দেখতে পাওয়া যাবে লাইট হাউস। সব থেকে বড় আকর্ষণ এখান থেকেই মাত্র ১ কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে কপালকুন্ডলা গ্রাম। যেখানে বসে বঙ্কীম বাবু কপাল কুন্ডলা উপন্যাস লিখেছিলেন। ঝালিয়ে নেওয়া যাবে খানিক নস্ট্যালজিয়াও।
ফলতা:
কলকাতা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে হুগলী, দামোদর এবং রূপনারায়ণ নদীর ত্রিবেনী সঙ্গমে অবস্থিত ফলতা। নদী, সবুজ ঘাস, নৌকা বিহার সব মিলিয়ে এক অসাধারণ অনুভূতি। কলকাতা থেকে ট্রেন যোগাযোগ যথেষ্ট ভালো। ট্রেনে করে যেতে সময় লাগে ২ ঘন্টা ১৫ মিনিট।
সোনারপুরে বাগান বাড়ি:
কলকাতার একদম পাশে সোনারপুরে বাগান বাড়িগুলি প্রিয়জনদের সাথে নির্জনে একটা দিন কাটানোর জন্যে হতে পারে খুব ভালো ঠিকানা। প্রতি বাগান বাড়িতেই রয়েছে ছোট-খাটো পার্ক, থাকার জায়গা। ট্রেন,বাস,অটো সবকিছুরই সুবিধা রয়েছে। যেতে সময় লাগে কমবেশি আধ ঘন্টা।