গরু পাচারকাণ্ডে বিএসএফ কমান্ডান্টের স্ত্রীর সম্পত্তির উৎস জানতে তদন্তে সিবিআই
গরু পাচারকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত বিএসএফ কমান্ডান্ট সতীশ কুমারের স্ত্রীর সম্পত্তির উৎস সন্ধানে নামল সিবিআই। তাঁর ব্যাঙ্ক ‘লকার’ই এবার তদন্তের কেন্দ্রবিন্দুতে। এর আগে ধৃতের শ্বশুরের অ্যাকাউন্টের ১২ কোটি টাকা ও ছেলে ভুবন ভাস্করের এনামুলের কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও স্ত্রী তানিয়া সান্যাল ছিলেন আড়ালেই। এদিন সিবিআই জানিয়েছে, স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে থাকা চার কোটি টাকারও যোগ রয়েছে গোরুপাচারের সঙ্গে। পাশাপাশি সতীশের স্ত্রীর স্টেট ব্যাঙ্কে যে লকার রয়েছে, তা সার্চ করার জন্য বুধবার আসানসোলের সিবিআই আদালতে আর্জি জানান তদন্তকারী অফিসাররা। ১৪দিন নিজেদের হেফাজতে রাখার পর এদিন অভিযুক্ত সতীশ কুমারকে আদালতে তুলে জেল হেফাজতে পাঠানোর আর্জি জানান সিবিআইয়ের আইনজীবী।
যদিও সিবিআই অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে কোনও তদন্তের অগ্রগতি করেনি বলে দাবি জানিয়ে জামিনের জোরালো আবেদন করেন ধৃতের আইনজীবীরা। জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে ফের সেই প্রভাবশালী তত্ত্বকেই সামনে আনেন সিবিআই (CBI) আইনজীবী রাকেশ কুমার। তিনি আবেদন জানান, এই চক্রের সঙ্গে তিনি সরাসরি যুক্ত। এই চক্রের বিএসএফের অনেক উচ্চপদস্থ আমলাদের জড়িয়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই জামিন হলে তা তদন্তে প্রভাব ফেলবে। দু’পক্ষের সাওয়াল শুনে বিচারক অভিযুক্তর ১০ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
বুধবার আসানসোলের সিবিআই আদালতে গোরুপাচারে অভিযুক্ত বিএসএফ (BSF) আধিকারিক সতীশ কুমারকে তোলা হলেও ঘটনাচক্রে এজলাসে বার বার শিরোনামে চলে আসে তাঁর স্ত্রী তানিয়ার নাম। এজলাসে ফোন বেজে ওঠার জন্য প্রাথমিকভাবে আদালত তাঁর ফোন জমা নিয়ে নেয়। পরে ক্ষমাপ্রার্থনার পর তিনি তা ফেরত পান। তবে, সিবিআই তদন্ত তাঁর দিকেই ঘুরে গিয়েছে। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন তদন্তকারীরা সতীশ কুমারের জামিনের বিরোধিতা করতে গিয়ে জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রীর কাছে থাকা চার কোটি টাকার উৎস জানা প্রয়োজন। এর পাশাপাশি সিবিআইয়ের নজর তাঁর স্টেট ব্যাঙ্কে থাকা লকারের দিকে। তদন্তকারীদের ধারণা, সেই লকার থেকেই বেরিয়ে আসতে পারে বহু অজানা তথ্য। সেই কারণে এদিন বিচারকের কাছে লকার সার্চ করার অনুমতি চায় সিবিআই। কথা প্রসঙ্গে আগের স্বামীকে ডিভোর্স না দিয়েই সতীশ কুমারকে বিয়ে করার প্রসঙ্গও টেনে আনেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। যদিও অভিযুক্তর আইনজীবীরা দাবি করেছেন, তিনি অভিনেত্রী। তাই তাঁর কাছে নিজের উপার্জিত টাকা থাকতেই পারে। বিচারক লকার সার্চ করার অনুমতি দিয়েছেন। এপ্রসঙ্গে সতীশ কুমারের আইনজীবী শেখর কুণ্ডু বলেন, অভিযুক্তর ১০ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। ওঁর স্ত্রীর লকার সার্চ করার অনুমতিও বিচারক দিয়েছেন।
তবে এদিন অভিযুক্তর পুত্রের চাকরি ও তাঁর শ্বশুরমশাইয়ের অর্থের তদন্ত নিয়ে সিবিআইকে তীব্র আক্রমণ করেন ধৃতের আইনজীবীরা। তাঁরা বলেন, ভুবন ভাস্কর একজন ইঞ্জিনিয়ার। কোনও বেসরকারি সংস্থায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বেতন পাওয়া কি অস্বাভাবিক? এছাড়া অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর অর্থ সূত্র কীভাবে প্রকাশ্যে আনতে পারে সিবিআই। জেলে পাঠালে করোনা হতে পারে ৫৭ বছরের সতীশ কুমারের। এই যুক্তিও দেন তাঁর আইনজীবীরা। কিন্তু সিবিআইয়ের দাবি ছিল, তিনি সরাসরি চক্রের সঙ্গে যুক্ত। এতে আইজি, ডিআইজি (DIG) পদমর্যাদার আধিকারিকদের যোগসূত্র পেতে বিএসএফের কাছে নথি চাওয়া হয়েছে। এই সময় তিনি জামিন পেলে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। অবশেষে জেলা হেফাজত হয় ধৃতর।