পরিযায়ী দুর্গার স্থান পাচ্ছে নিউটাউনে
সেই ‘পরিযায়ী’ দুর্গা (Migrant Durga) কৈলাসে ফিরে যাননি। তিনি থাকছেন নিউটাউনের ইকো পার্কে (Eco Park)। বছরভর খোলা আকাশের নীচে তাঁর দর্শন মিলবে। আগামী দিনে নিউটাউনের কোনও আইল্যান্ডে তাঁকে রাখা হতে পারে।
দুর্গাপুজোয় সাড়া ফেলেছিল শিল্পী পল্লব ভৌমিকের তৈরি বেহালা বড়িশা ক্লাবের এই দুর্গামূর্তি। করোনাকালে তিনি পরিযায়ী শ্রমিকের দুঃখ-দুর্দশার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। সেই প্রতিমা মনে ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee)। তিনিই মূর্তিটি সংরক্ষণের নির্দেশ দেন। তারপর রবীন্দ্র সরোবরে কেএমডিএ-র ‘মা ফিরে এল’ প্রদর্শনীকক্ষে রাখা হয় সেই প্রতিমা। কিন্তু বর্তমানে রবীন্দ্র সরোবরে সারাদিন ঘুরে বেড়ানো বারণ। ঘোরার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সেভাবে লোকজনও আর আড্ডা মারতে আসে না। প্রদর্শনীকক্ষের দিকেও মানুষের ভিড় কম। ‘বিশ্ব বাংলা শারদ সম্মান’ পুরস্কার প্রদানের সময় বড়িশা ক্লাবের তরফ থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সুদীপ পোল্লে মুখ্যমন্ত্রীকে এই প্রতিমা অন্য কোথাও বসানোর অনুরোধ জানান। এমন জায়গায় বসাতে হবে, যেখানে মূর্তিটি সকলের গোচরে আসে। সেই আর্জিতে সাড়া দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। রাজ্যের পুর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম বিশেষ উদ্যোগী হয়েছেন। তাঁর নির্দেশে রবীন্দ্র সরোবর থেকে প্রতিমা এসেছে হিডকোতে। আপাতত ইকোপার্কে নতুন ঠাঁই হচ্ছে প্রতিমার। প্রকৃতির মাঝে সেখানকার ‘স্কাল্পচার’ পার্কে মূর্তিটি বসানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, ‘আপাতত ইকো পার্কে এই দুর্গা মূর্তি থাকবে। সেখানে আরও কয়েকটি পুরনো প্রতিমা আছে। সেগুলির সঙ্গেই এই প্রতিমাটিও রাখা হবে।’
সরকারি উদ্যোগে উচ্ছ্বসিত বড়িশা ক্লাবের অন্যতম উদ্যোক্তা দেবপ্রসাদ বসু। তিনি বলেন, ‘আমরা রোমাঞ্চিত। একটা বার্তা সমাজের কাছে দিতে চেয়েছিলাম। লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা, কখনও তাঁদের উপর দিয়ে ট্রেন চলে যাচ্ছে, কখনও সরকার তাঁদের উপর কীটনাশক ছড়াচ্ছে, যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ছিল। সবাই প্রতিবাদ করেছে। আমরাও সেই প্রতিবাদ আমাদের দুর্গাপুজোর মাধ্যমে করেছিলাম। সেই প্রচেষ্টাকে রাজ্য সরকার সম্মান জানিয়েছে।’ থিম মেকার রিন্টু দাস জানিয়েছেন, শিল্পীর যে কোনও কাজ তাঁর কাছে সন্তানের মতো। যখন তাকে সবাই ভালো বলে, স্বাভাবিকভাবেই গর্ব হয়। প্রতিমা শিল্পী পল্লব ভৌমিক সরকারের এই উদ্যোগে খুশি। তিনি বলেন, ‘সরকার সংরক্ষণ করছে আগেই শুনেছিলাম। কিন্তু নিউটাউনে সেটা বসানো হবে, আপনার কাছ থেকে জানতে পারলাম। আরও বেশি করে মানুষের কাছে আমার কাজ স্বীকৃতি পাবে, সেটা অবশ্যই আনন্দের।’
প্রশাসন সূত্রে খবর, চলতি সপ্তাহে ফিরহাদ হাকিমের (Firhad Hakim) সঙ্গে দেবাশিস সেনের বৈঠক হওয়ার কথা। আগামী দিনে সেই প্রতিমা নিউটাউনের কোনও একটি আইল্যান্ডে রাখার ভাবনা চিন্তা রয়েছে। যাতে চলতি পথে লকডাউনের সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবন সংগ্রাম মানুষের স্মরণে থাকতে পারে। আগামী প্রজন্ম জানতে পারে তার ইতিহাস।