চূড়ান্ত ভ্যাকসিন প্রস্তুতি নিতে রাজ্যকে নির্দেশ কেন্দ্রের
প্রস্তুত থাকুন! যে কোনও মুহূর্তে আসতে পারে ‘সারপ্রাইজ’। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে আশ্চর্য বস্তু তো একটাই—করোনা ভ্যাকসিন। রাজ্যের সঙ্গে পরপর দু’দিন ভিডিও কনফারেন্সে এমনই সুখবর দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পদস্থ কর্তারা। ফলে টিকার ব্যবস্থাপনা নিয়ে এখন হাই অ্যালার্ট পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য প্রশাসনে। অনলাইন ট্রেনিং শুরু হয়ে গিয়েছে আগেই। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে জেলায় হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে। বোলপুরের ট্যুরিস্ট লজে চলবে দু’দিনের এই শিবির। ভ্যাকসিন সংরক্ষণের বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহারের ট্রেনিং নেবেন দুই বর্ধমান, বীরভূম, রামপুরহাট, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও পুরুলিয়া স্বাস্থ্য জেলার আধিকারিকরা। তাঁরা ফিরে গিয়ে জেলায় বাকিদের শেখাবেন। রাজ্যজুড়ে পাঁচটি টাস্ক ফোর্স গোটা বিষয়ে নজরদারি করছে।
কেন্দ্রের বার্তার কথা স্বীকার করেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ অজয় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘ওরা আমাদের জানিয়েছে, যে কোনও সময় সুখবরের জন্য প্রস্তুত থাকুন। পাঁচ থেকে সাতদিনের মধ্যে তো বটেই, এমনকী যে কোনও মুহূর্তে যে কোনও ‘সারপ্রাইজ’ আসতে পারে। তখন যেন চটজলদি ভ্যাকসিন রাখা, বণ্টন ইত্যাদি বিষয়ে কোনও সমস্যা না হয়। আমরা সেইমতো সমস্ত আয়োজন করে রাখছি।’ মঙ্গল ও বুধবার করোনা টিকার প্রস্তুতি নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রক ও দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকরা। স্বয়ং জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের প্রকল্প অধিকর্তা তথা অতিরিক্ত স্বাস্থ্যসচিব বন্দনা গুরনানি ছিলেন সেই অনলাইন বৈঠকে। তিনি এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় পদস্থ কর্তা স্পষ্ট জানান, ভ্যাকসিন এলে সুষ্ঠু বণ্টন ব্যবস্থার জন্য প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর যেন অভাব না হয়। সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে রাজ্যকে। যেভাবেই হোক, আগামী ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণপর্ব শেষ করতে বলেছেন কেন্দ্রীয় কর্তারা। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জানিয়েছেন, প্রথম দফায় প্রায় ২০ হাজার এবং দ্বিতীয় দফায় আরও ২৫ হাজার—সব মিলিয়ে ৪৫ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে তৈরি রাখছি আমরা। এদিন ব্লক স্তরের টাস্ক ফোর্স গঠিত হয়েছে।
করোনা ভ্যাকসিন (Corona Vaccine) কী, কত ধরনের, কত ডিগ্রি তাপমাত্রায় কীভাবে সংরক্ষণ করতে হয়—এরকমই নানা বিষয় নিয়ে চলছে প্রশিক্ষণ। স্বাস্থ্যভবনের শীর্ষকর্তা থেকে শুরু করে প্রান্তিকস্তরের স্বাস্থ্য পরিষেবায় যুক্ত স্বাস্থ্যকর্মী—সর্বস্তরে জোরকদমে ট্রেনিং চলছে। ফি বছর অন্যান্য টিকাকরণ কর্মসূচির কারণে রাজ্যের কোল্ড চেইন ব্যবস্থা এমনিতেই চাঙ্গা থাকে। কোল্ড স্টোরেজ পয়েন্টগুলির আধুনিকীকরণের কাজ, দামি ওয়াক-ইন কুলার, ফ্রিজার আনার কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই ছয় লক্ষের বেশি স্বাস্থ্যকর্মীর তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের কাছে। ভ্যাকসিন রাজ্যে ঢুকলে তাঁদেরই প্রথম টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপর প্রবীণ নাগরিক এবং অন্যান্য রোগ বা কো-মরবিডিটি থাকা মানুষ টিকা পেতে পারেন। এই প্রসঙ্গে আইসিএমআরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা এভাবেই প্রাধান্যের তালিকা তৈরি করেছি। তবে ভুলে যাবেন না, স্বাস্থ্য রাজ্যের বিষয়। এ বিষয়ে শেষ কথা বলবে রাজ্য সরকারই। এব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের বিকল্প ইতিমধ্যেই ভেবে রেখেছে স্বাস্থ্যভবন। বছরভর ছোটদের টিকাকরণ করেই থাকেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। অন্যদিকে বেশ কিছু জেলায় কেন্দ্রীয় কার্যক্রম অনুযায়ী বয়স্কদের জাপানিস এনসেফেলাইটিস ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। ফলে সে ব্যাপারে সিদ্ধহস্ত রাজ্য।