আরামবাগে দিলীপের সভা ঘিরে বিভক্ত রাজ্য বিজেপি
সেখানে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ সরকারি সুবিধা পেতে ভিড় জমাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে দিলীপ ঘোষের সভায় কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি ঘিরে অস্বস্তি বেড়েছে গেরুয়া শিবিরে।

আজ, বৃহস্পতিবার আরামবাগ শহর সংলগ্ন বিক্রমপুরের মাঠে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সভা করার কথা রয়েছে। কিন্তু, তার আগেই গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে গেরুয়া শিবিরের। ওই সভা ঘিরে আড়াআড়ি বিভক্ত বিজেপির আরামবাগ জেলা সংগঠন। দলের পুরনো দিনের কর্মী-সমর্থকদের একাংশ তথা বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী ওই সভা বয়কটের ডাক দিয়েছে। এরই মধ্যে মহকুমার ছ’টি ব্লক ও একটি পুরসভায় শুরু হয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ডের ‘দুয়ারের সরকার’ কর্মসূচি। সেখানে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ সরকারি সুবিধা পেতে ভিড় জমাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে দিলীপ ঘোষের সভায় কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি ঘিরে অস্বস্তি বেড়েছে গেরুয়া শিবিরে।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আরামবাগে বিজেপির (BJP) আদি ও নব্য গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এর আগে মণ্ডল সভাপতি নির্বাচন নিয়ে খানাকুল, আরামবাগ সহ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে অশান্তি, হিংসার ঘটনা ঘটেছে। এমনকী আরামবাগ কোর্ট চত্বর, বিজেপি পার্টি অফিসে সাংগঠনিক জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে পোস্টারও পড়েছিল। তাছাড়া বছরখানেক আগেই দলের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার বিক্ষুব্ধদের একাংশ ‘বিজেপি বাঁচাও কমিটি’ তৈরি করেছিল। যদিও সেই কমিটির নাম বদলে এখন নামকরণ হয়েছে ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’। ওই মঞ্চের আরামবাগ বিধানসভার কনভেনর অরবিন্দ সমাজি। তিনি বলেন, দলের স্বার্থে আমরা কাজ করে চলেছি। আমরা চাই, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় আসুক। তার জন্য দলের নির্দেশে যা যা করা প্রয়োজন, তাই তাই করব। আরামবাগ সাংগঠনিক জেলায় বর্তমানে যাঁরা নিজেদের বিজেপি নেতা বলে দাবি করছেন, তাঁরা দিলীপবাবুর (Dilip Ghosh) সভা করা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি। এমনকী আরামবাগে দলের রাজ্য সভাপতি আসার বিষয়টিও আমাদের জানানো হয়নি। লোকমুখে ও পোস্টার, হোর্ডিং দেখে আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি। তাই আমরা কোনওভাবেই ওই সভায় উপস্থিত থাকব না। ইতিমধ্যেই বিষয়টি আমরা দলীয় উচ্চ নেতৃত্বকে জানিয়েছি।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই ওই প্রতিবাদী মঞ্চ তাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করার কাজ শুরু করেছে। বিজেপির আরামবাগ জেলা সংগঠনের মতো তারাও সংগঠনকে ঢেলে সাজাচ্ছে। আরামবাগ মহকুমার চারটি বিধানসভা, তারকেশ্বর এবং হরিপাল বিধানসভা এলাকায় সদস্যপদ সংগ্রহের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ওই সংগঠনে প্রায় ১০ হাজার সদস্য নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন।
বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষ বলেন, আমাদের দলে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। আদি ও নব্য বলেও কিছু নেই। দু’-একজন কী বলছে, তাতে গুরুত্ব দিতে চাই না। তাছাড়া ‘দুয়ারে সরকার’ (Duare Sarkar)কর্মসূচি নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। কারণ, সাধারণ মানুষ খুব ভালো করেই জানেন, তৃণমূল সরকার ২০২১এর ভোটের আগে মিথ্যা নাটক শুরু করেছে। উল্লেখ্য, কয়েক দিন আগে শহরের গড়বাড়ি মাঠে সভা করেছিলেন যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তারপরই বিজেপি দিলীপ ঘোষের পাল্টা জনসভার সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া লকডাউনের আগে এনআরসি (NRC) ও সিএএ-র (CAA) মতো ইস্যুতে অনেকটাই কোণঠাসা হয়েছিল বিজেপি। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই সভার মধ্যে দিয়ে ফের কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে চাইছে গেরুয়া শিবির।