জিতেন তেওয়ারি দল ছাড়তেই পাণ্ডবেশ্বরে তৃণমূলের মিছিল
ইঙ্গিত মিলেছিল বুধবারই। সেই জল্পনা সত্যি হল। বৃহস্পতিবার বিকেলে আসানসোল পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দেন জিতেন্দ্র তেওয়ারি (Jitendra Tiwari)। তার কিছুক্ষণ পর দল ছাড়ার কথা ঘোষণা। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে পাণ্ডবেশ্বরের রাস্তায় নামল তৃণমূলের মিছিল। সেই মিছিলে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের উচ্ছ্বাসের ছবি ধরা পড়ে। এছাড়া পাণ্ডবেশ্বরে (Pandaveswar) বিধায়ক কার্যালয়ে দলীয় কর্মীরা তৃণমূলের পতাকা লাগিয়ে অফিসটির দখল নেন। হরিপুরে ওই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কার্যালয়ে এতদিন দলীয় পতাকা ছিল না। এদিন তা তৃণমূলের পতাকায় মুড়ে ফেলা হয়। কার্যালয়ের সামনে মিছিল করে ‘বেইমান’ নিপাত যাক বলে স্লোগান দেন তৃণমূল নেতা কর্মীরা। জেলা সভাপতি দল ছাড়লেও জেলার অধিকাংশ শীর্ষ নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে আস্থা রেখেছেন।
এদিন দুপুরে আসানসোল পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান পদ ছাড়ার পর সেই সময় জিতেন্দ্রবাবুকে প্রশ্ন করা হয় তিনি কি জেলা সভাপতির পদ থেকেও ইস্তফা দেবেন? ধোঁয়াশা জিইয়ে রেখে তাঁর উত্তর ছিল, পুরসভায় বসে রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর দেব না। এমনকী মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে শুক্রবারের বৈঠকে হাজির হবেন কি না সেই উত্তরও স্পষ্ট করেননি। তার কিছুক্ষণ পরেই পরিস্থিতি বদলে যায়। প্রশাসকের পদ থেকে জিতেন্দ্রবাবু ইস্তফা দিয়ে বেরিয়ে আসতেই তাঁর বিধানসভা এলাকা পাণ্ডবেশ্বরের হরিপুরে দলীয় কার্যালয়ে হাজির হন তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজন। শুরু হয় স্লোগান।
তৃণমূল (Trinamool) ব্লক সভাপতি নরেন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে দলীয় কার্যালয় থেকে বিধায়ক কার্যালয় লেখা নেমপ্লেট উপড়ে ফেলা হয়। যে কার্যালয়ে ব্লক সভাপতি কোনওদিন ঢোকেননি, সেই কার্যালয়ে নিজের অনুগামীদের নিয়ে ঢুকে পড়েন ব্লক সভাপতি। কার্যালয় তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকায় মুড়ে ফেলা হয়।
ঘটনার পর জিতেন্দ্রবাবু বলেন, এরপর দলের সঙ্গে আলোচনার কোনও মানে হয় না। আসানসোলের বঞ্চনার কথা বলার জন্য এভাবে কার্যালয় ভাঙচুর করা হল। কলকাতার কিছু নেতার নির্দেশেই এই ঘটনা ঘটেছে। আমি জেলা সভাপতি সহ দলের সব পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। তিনি ইস্তফাপত্র রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির কাছে পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
এদিন বিকেলে পাণ্ডবেশ্বরের হরিপুরে তৃণমূলের মিছিলে দলীয় কর্মীদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এতদিন বিধায়কের ছায়াসঙ্গী বহু নেতা এদিন দল ছাড়ার বদলে জিতেন্দ্রবাবুর সঙ্গ ছাড়ার ইঙ্গিত দেন। বিধায়ক কার্যালয় দখল, মিছিলের উচ্ছ্বাস প্রসঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, দলের সঙ্গে বেইমানি কর্মীরা মানবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে যাঁরা তৃণমূল করতে এসেছিলেন তাঁরা কেউই দল ছাড়বেন না।
জিতেন্দ্রবাবুর অনুগামী হিসেবে পরিচিত হরিপুরের উপপ্রধান গোপীনাথ নাগ বলেন, দল ছাড়ার কোনও প্রশ্নই নেই। দলের জন্যই সব। দলের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটানোর জন্যই মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হয়েছে। তৃণমূল ব্লক সভাপতি বলেন, কার্যালয় কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। আমরা সিপিএমের সঙ্গে লড়াই করে ওঁকে জিতিয়েছি। উনি মুখ্যমন্ত্রীর পিছনে ছুরি মারলেন। ওঁকে কী দেননি নেত্রী? মানুষ এর হিসেব নেবে। এ ব্যাপারে রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন দাসু বলেন, ওঁর বিদায়ে দলের কোনও ক্ষতি হবে না। এবার প্রতি ব্লকেই মিছিল হবে।