টুম্পা গানের বাস্তব রূপ জলপাইগুড়ির রাস্তায়
‘ঘুম থেকে উঠে দেখি বৌ পালাল জানলা দিয়ে।’ খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে না? ওয়েব সিরিজ আরআইপি-রেস্ট ইন প্রেম-এর এই টুম্পাগান আমাদের দারুণ মজিয়েছে। হয়তো শিলিগুড়ির বাসিন্দা ছেলেটিকেও। কিন্তু অন্যের মতো নিজের বৌও য়ে একদিন পালাতে পারে তা ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি। তাও আবার জানলা দিয়ে নয়, এক্কেবারে সামনে দিয়ে। বৃহস্পতিবার রাত। খুব ঠান্ডা পড়েছে। শিলিগুড়ির বাসিন্দা যুবকটি জলপাইগুড়িতে অষ্টমঙ্গলা সেরে নতুন বৌকে নিয়ে গাড়িতে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎই ফাঁকা রাস্তায় দুই যুবক সামনে এসে ব্রেক চেপে বাইক দাঁড় করায়। বাধ্য হয়ে গাড়িটিকেও থামতে হয়। দরজা খুলে নতুন বৌয়ের হাতে সজোরে টান দুই যুবকের। নতুন বর বাধা দিতে গিয়ে সজোরে ঘুসি খেলেন। মুহূর্তের মধ্যেই পিছনে নববধূকে বসিয়ে বাইক পগারপার। জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি রোডের এই খবর ভাইরাল হতে বেশি সময় নেয়নি। চলন্ত গাড়ি থেকে বৌ ছিনতাইয়ের ঘটনাটি জানিয়ে শিলিগুড়ির বাসিন্দা ওই যুবক পুলিশে অভিযোগ করেন। তবে এরপরও যাকে বলে কাহানি মে টুইস্ট। সংসার করবেন তাই নিজের ইচ্ছায় তিনি প্রেমিকের সঙ্গে চলে যাচ্ছেন বলে জলপাইগুড়ির বাসিন্দা ওই নববধূ পুলিশকে জানিয়েছেন। দুই পক্ষের অভিযোগ জমা পড়ার পর গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে কোতোয়ালি থানার আইসি বিপুল সিনহা জানিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এদিন যাঁদের ছাড়াছাড়ি হল তাঁদের মধ্যে এক বছর আগে পরিচয়। দেখাশোনা করে শিলিগুড়ি (Jalpaiguri) ও জলপাইগুড়ির বাসিন্দা এই ছেলেমেয়েদের পরিবার তাঁদের বিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। আগে বিয়ের কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতি তাতে বাধ সাধে। বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় দুই পরিবার মিলে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে। তিন মাস আগে সব কিছু পাকা হয়। ফোনে ছেলেটি আর মেয়েটির সম্পর্ক নিবিড় থেকে নিবিড়তর হয়। বেসরকারি সংস্থার কর্মী যুবকটি সম্প্রতি জলপাইগুড়ির ওই যুবতীকে বিয়ে করেন। বিয়েতে পাত্রের কোনও দাবিদাওয়া ছিল না। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার হলেও মেয়ের পরিবারের সদস্যরা সবার আদর আপ্যায়নে কোনও ত্রুটি রাখেননি। পাত্রপক্ষ বেশ জাঁকজমক করে বৌভাতের আয়োজন করে। সেখানেও আদর আপ্যায়নের কোনও ত্রুটি ছিল না। বিয়ের নিয়ম মেনে দুজনে অষ্টমঙ্গলায় জলপাইগুড়িতে মেয়ের বাড়িতে ফেরেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অষ্টমঙ্গলার নিয়ম সম্পন্ন হয়। নবদম্পতিকে শিলিগুড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এদিন বিকেলে পাত্রের দুই আত্মীয় একটি গাড়ি নিয়ে পাত্রীর বাড়িতে হাজির হন। তারপর সবাই মিলে শিলিগুড়িতে (Siliguri) রওনা হওয়া।
এই পর্যন্ত সব কিছুই ঠিকঠাক। মেয়ের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঘন কুযাশার মধ্যে গাড়ি যখন শিলিগুড়ির দিকে ছুটছে তখনই ঘটনাটি ঘটে গেল। আচমকাই নববধূর প্রাক্তন প্রেমিক বন্ধুকে বাইকে বসিয়ে গাড়ির পথ আটকাল। প্রেমিকাকে হাত ধরে টেনে বাইকে বসানোর চেষ্টা। বাধা দিতে গিয়ে বর বাবাজি সজোরে ঘুসি খেলেন। স্ত্রী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে ভেবেছিলেন। কিন্তু তাঁর আচরণ বরকে খুবই অবাক করে। অভিযোগ, স্ত্রীর গলায় তখন প্রাক্তন প্রেমিকের জন্য ভালোবাসার সুর। একঝটকায় স্বামীর হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে প্রেমিকের বাইকের পিছনে উঠে বসেন। মুহূর্তে প্রেমিক-প্রেমিকা বাইক নিয়ে উধাও। তাঁদের বন্ধু অন্ধকারে সরে পড়েন। পরে প্রেমিক-প্রেমিকা কোতোয়ালি থানায় হাজির হন। তিনি প্রাপ্তবয়স্কা আর নিজের ইচ্ছায় প্রেমিকের সঙ্গে চলে গিয়েছেন বলে ওই যুবতী জানিয়ে দেন। ভালোবাসার প্রেমিককেই তিনি বিয়ে করবেন বলে জানান। থানার গেট থেকে বের হওয়ার মুখে তাঁর সঙ্গে পাত্র ও তাঁর পরিবারের দেখা হয়। তাঁরা ওই যুবতীকে বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে শিলিগুড়ির বাসিন্দা ওই যুবক থানায় স্ত্রী ছিনতাইয়ের অভিযোগ দায়ের করেন।
জানলা দিয়ে যার বৌ পালিয়েছিল সে জীবনে টুম্পাকে (Tumpa) পেয়েছিল। তারপর থেকেই জীবন দারুণ। শিলিগুড়ির যুবকটির জীবনেও এমন এক টুম্পা নিশ্চিতভাবে আসবে, প্রত্যয়ী পরিবার।