রামপ্রসাদ বিসমিল ও আশফাকুল্লা খানের বন্ধুত্ব জয় করেছিল সাম্প্রদায়িকতাকে
আশফাকুল্লা খান ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। আরেক স্বাধীনতা সংগ্রামী রামপ্রসাদ বিসমিলের সঙ্গে তাঁকে ১৯২৫ সালে কাকোরি ষড়যন্ত্র (ট্রেন লুঠের) মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
১৯০০ সালের ২২ অক্টোবর উত্তর প্রদেশের শাহজাহানপুরে জন্মগ্রহণ করেন আশফাকুল্লা। তিনি যে সময়ে বড় হয়ে উঠছিলেন, সে সময়েই মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছিলেন। ভারতবাসীর কাছে তাঁর আহ্বান ছিল ব্রিটিশদের সঙ্গে কোনওরকম সহযোগিতা না করার, সরকারকে কোনওরকম কর না দেওয়ার।
এই আন্দোলন শুরু দেড় বছরের মধ্যে, ১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গোরখপুরে চৌরিচৌরার ঘটনা ঘটে- বিশাল সংখ্যক অসহযোগীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ও থানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। মারা যান ২২ জন পুলিশ কর্মী। এই হিংসাত্মক আন্দোলনের বিরোধিতায় গান্ধী আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।
প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরোর দেওয়া এক বিবৃতি থেকে জানা যায়, এ ঘটনায় দেশের যুবকদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়, তাঁরা আস্থা হারাতে শুরু কেরন। আশফাকুল্লা ছিলেন এই যুবকদের দলে। এ সময়েই তিনি বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগ দেন এবং বিসমিলের সঙ্গে পরিচিত হন।
২০০৬ সালে বলিউড কাহিনি চিত্র রং দে বাসন্তীতে একটি তথ্যচিত্রে পাঁচ বন্ধুকে চন্দ্রশেখর আজাদ, ভগৎ সিং, শিবরাম রাজগুরু, রামপ্রসাদ বিসমিল ও আশফাকুল্লা খানের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়। আশফাকুল্লা খানের চরিত্রে ছিলেন কুণাল কাপুর ও বিসমিলের চরিত্রে অভিনয় করেন অতুল কুলকার্নি।
আশফাকুল্লা খান ও হিন্দুস্তান সোশালিস্ট রিপাবলিক অ্যাসোসিয়েশন
১৯২০-র দশকের মাঝামাঝি আশফাকুল্লা এবং বিসমিল হিন্দুস্তান সোশালিস্ট রিপাবলিক অ্যাসোসিয়েশন গঠন করতে উদ্যোগী হন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা অর্জন।
১৯২৫ সালে হিন্দুস্তান সোশালিস্ট রিপাবলিক অ্যাসোসিয়েশন দ্য রেভলিউশনারি নামে সংগঠনের ইস্তাহার প্রকাশ করে। এখানে বলা হয়েছিল, “এই বিপ্লবী পার্টির তাৎক্ষণিক লক্ষ্য হল সংগঠিত সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিপাবলিক হিসেবে গঠন করা। এই রিপাবলিকের চূড়ান্ত সংবিধান তখনই প্রস্তুত ও ঘোষণা করা হবে, যখন ভারতের প্রতিনিধিরা সে সিদ্ধান্ত লাগু করতে সমর্থ হবেন। তবে এ রিপাবলিকের মূল ভিত্তি হবে সার্বজনীন ভোটাধিকার এবং মানুষের উপর মানুষের শোষণকারী ব্যবস্থা নাশের মধ্যে দিয়ে। রেল, পরিবহণ ও যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যম, খনি এবং ইস্পাত ও জাহাজ তৈরির মত ভারী শিল্পের জাতীয়করণ করা হবে।”
ইস্তাহারে আরও বলা হয়েছিল, “ভারতের বিপ্লবীরা সন্ত্রাসবাদীও নন, নৈরাজ্যবাদীও নন। তাঁরা কোনওদিন এই ভূমিতে নৈরাজ্য ছড়াবার চেষ্টা করেননি। সন্ত্রাসবাদ কোনওদিনই তাঁদের লক্ষ্য নয়, ফলে তাঁদের সন্ত্রাসবাদীও বলা যাবে না। এঁরা বিশ্বাস করেন না, সন্ত্রাসবাদ একক ভাবে স্বাধীনতা আনতে পারেন। এঁরা কখনওই হিংসার স্বার্থে হিংসা চান না, যদিও বহু সময়ে এ পদ্ধতি কার্যকর হতে পারবে।”
কাকোরি ষড়যন্ত্র
১৯২৫ সালের অগাস্ট মাসে, শাহজাহানপুর থেকে লখনউগামী কাকোরি এক্সপ্রেস লুঠ হয়। ওই ট্রেনে বিভিন্ন রেল স্টেশন থেকে সংগ্রহ করা অর্থ লখনউয়ে জমা করার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
পরিকল্পিত এই কর্মকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল হিন্দুস্তান সোশালিস্ট রিপাবলিক অ্যাসোসিয়েশনের কাজকর্মের অর্থ জোগাড়ের উদ্দেশ্যে। বিসমিল, আশফাকুল্লাসহ ১০ জনেরও বেশি বিপ্লবী ট্রেন থামান এবং যে অর্থ পান, তাই নিয়ে পালিয়ে যান। এ ঘটনার এক মাসের মধ্যে সংগঠনের অনেকেই গ্রেফতার হন।
১৯২৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, বিসমিল গ্রেফতার হলেও আশফাকুল্লা পালিয়ে যান। প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরোর বিবৃতি থেকে যানা যায়, তিনি বাড়ি থেকে আধমাইল দূরে একটি আখের খেতে কিছু সময়ের জন্য গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর প্রথমে বিহার ও পরে দিল্লিতে চলে যান। দিল্লিতেই শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার হন তিনি। মামলা চলেছিল প্রায় দেড় বছর ধরে। ১৯২৭ সালের এপ্রিল মাসে মামলা শেষ হয়। বিসমিল, আশফাকুল্লা, রাজেন্দ্র লাহিড়ি ও রোশন সিংকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। অন্যদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।