হাঁকডাক যতই করুক, জিতব আমরাই: মমতা

এরইমধ্যে এদিন সকালে সোনাঝুরির হাটে অমিত শাহের সফরের প্রতিবাদে মুখে কালো কাপড় বেঁধে ও হাতে পোস্টার নিয়ে অবস্থান বিক্ষোভ করেন পড়ুয়া, হস্তশিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। তাঁদের দাবি, রবীন্দ্রনাথের ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছে।

December 21, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

‘বহিরাগত’ এনে মিছিল ভরিয়ে রবিবার বোলপুরে কার্যত দাদাগিরি দেখালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এদিন এক কিলোমিটার রাস্তায় র‌্যালিতে বোলপুর শহরের একাংশ স্তব্ধ হয়ে যায়। সেই ভিড়ের বড় অংশই এসেছিল ভিন জেলা বা রাজ্য থেকে। ঝাড়খণ্ড থেকে আসা সমর্থকেও ভরেছে রোড-শো। লোক আনা হয়েছে বাস ভর্তি করে। তাহলে কি যতটা ‘বিজেপি হাওয়া’র জিগির উঠছে, ততটা এখনও রাজ্যে নেই? তাই বাইরে থেকে লোক এনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রোড-শো ভরাতে হচ্ছে? এই প্রশ্ন কিন্তু ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে। ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Mamata Banerjee) স্পষ্ট জানিয়েছেন, যা দেখা যাচ্ছে, পুরোটা ঠিক নয়। তৈরি করা ভিড় দিয়ে জনপ্রিয়তা প্রমাণ করা যায় না। ওরা এখন যতই হাঁকডাক করুক না কেন, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসই (Trinamool Congress) জিতে ফিরবে।

রবিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বোলপুর-শান্তিনিকেতনে কাটান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর সফরে নিরাপত্তায় যাতে কোনও ধরনের ত্রুটি না থাকে, সেজন্য ব্যাপক পুলিস মোতায়েন করেছিল প্রশাসন। এদিন সকালে বিশ্বভারতীর হেলিপ্যাডে নেমে তিনি ক্যাম্পাসে উত্তরায়ণ, উপাসনা গৃহ ও সঙ্গীতভবনে যান। পরিদর্শন করেন বিশ্বভারতী। পাশাপাশি সঙ্গীতভবনে রবীন্দ্রসঙ্গীতও শোনেন। এরইমধ্যে এদিন সকালে সোনাঝুরির হাটে অমিত শাহের সফরের প্রতিবাদে মুখে কালো কাপড় বেঁধে ও হাতে পোস্টার নিয়ে অবস্থান বিক্ষোভ করেন পড়ুয়া, হস্তশিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। তাঁদের দাবি, রবীন্দ্রনাথের ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছে।

পরে দুপুরে শ্যামবাটির সুভাষপল্লিতে বাসুদেব দাস বাউলের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজন। বাসুদেববাবু সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে গানও শোনান। বাউলশিল্পী বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমার বাড়ি আসায় খুবই ভালো লাগছে। তিনি নিজে রুটি চেয়ে খেয়েছেন। গান শুনেও আপ্লুত হয়েছেন। লকডাউনে বাউলদের অসুবিধা নিয়ে বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কথা বলার সুযোগ হয়নি।

এরপরই অমিত শাহ (Amit Shah) বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠের কাছে চলে আসেন। সেখান থেকে সুসজ্জিত গাড়িতে শুরু হয় র‌্যালি। ডাকবাংলো থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত চলে এই রোড-শো। রাস্তার দু’পাশে তখন লোকজনের জমায়েত ছিল চোখে পড়ার মতো। তাঁর উদ্দেশে পুষ্পবৃষ্টিও হয়। বিজেপি আগে থেকেই বিভিন্ন জায়গায় ঢাক বাজানোর ব্যবস্থা করে রেখেছিল। ভিড় দেখে গাড়ি থেকে অমিত শাহ বলেন, ‘এটা মোদিজির প্রতি জনতার বিশ্বাস’। যদিও র‌্যালি শেষ হতেই ভিড় ফিকে হয়ে যায়। বিভিন্ন জেলা থেকে বাস, ছোট গাড়িতে চেপে কর্মী-সমর্থকরা এসেছিলেন। তারপর আর সেই দাঁড়িয়ে থাকা বাস-গাড়ির ভিড় নজরে আসেনি। শ্রীনিকেতন পল্লি এলাকায় এমন বহু গাড়িতে করে সমর্থকদের ফিরতে দেখা যায়। এব্যাপারে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘বহরমপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়খণ্ড থেকে লোক এনে এদিন রোড-শো করেছেন অমিত শাহ। কর্মী-সমর্থকরা বাসে করে বোলপুরে এসেছে। সেইসব বাসের ছবি আমাদের কাছে আছে। এদিনের কর্মসূচিতে স্থানীয় মানুষ সেভাবে ছিল না। তাই ফ্লপ। আমরা স্থানীয়দের নিয়ে সভা করি। বাইরে থেকে লোক আনতে হয় না।’

বিজেপির (BJP) জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল অবশ্য বলেন, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছেন। তাই জেলাবাসীর কাছে তা গর্বের। তৃণমূলের খেয়েদেয়ে কাজ নেই, তাই উল্টোপাল্টা কথা বলছে। সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে অমিত শাহও বলেন, ‘মমতা দিদি যখন কংগ্রেসে ছিলেন, তখন ইন্দিরা গান্ধী এ রাজ্যে আসতেন। তখন তিনি কী বলতেন? আপনি কি এমন রাজ্য চান, যেখানে ভিনরাজ্য থেকে কেউ আসবে না?’ এর উত্তর অবশ্য দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেন, ‘ইন্দিরা গান্ধী আসতেন। সভা করতেন। কিন্তু অমিত শাহের মতো হিংসা বা বিভাজন ছড়াতেন না। আর ওঁর এখন কাজই কি ২৯টি রাজ্যকে ছেড়ে শুধু বাংলা নিয়ে পড়ে থাকা? তিনি তো বিজেপির সভাপতি নন! কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।’ বিভাজন প্রশ্নে এদিন আবার উঠে আসে নাগরিকত্ব ইস্যু। তাতেও কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খুব স্বস্তির বাণী শোনাননি। বলেছেন, ‘সিএএ রুলস তৈরি এখনও বাকি আছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এব্যাপারে ভাবা যাবে।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen