বড়দিনে এবার বালুচরিতে যীশুচরিত
বাংলার বালুচরি মানেই কাহিনি-কথন। বিষ্ণুপুরের এই তাঁতশিল্পীরা বংশপরম্পরায় সুতোর টানাপোড়েনে বুনে চলেছেন পুরাণ মহাকাব্যের পরিচিত কাহিনি। আঁচল জুড়ে রাম-সীতার বিবাহ, আর বুটিতে তাঁদের মালাবদলের দৃশ্যে সবথেকে জনপ্রিয় বালুচরি। এছাড়া অর্জুনের লক্ষ্যভেদ, দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ, শকুন্তলার অঙ্গুরীয় হারিয়ে যাওয়ার দৃশ্যও অবলীলায় ফুটিয়ে তোলেন বালুচরি-শিল্পীরা। আর আছে বাংলার ট্র্যাডিশনাল কিছু নকশা যেমন, ফুল, লতাপাতা, কলকা, আলপনা ইত্যাদি। তাও বালুচরিকে লাবণ্যময় করে তোলে।
কিন্তু বালুচরিতে যীশুর জীবনকাহিনি ফুটিয়ে তোলার কথা বালুচরি শিল্পীরা কখনও ভাবেননি, ভেবেছেন এক ডিজাইনার বিপাশা ভট্টাচার্য। বাংলার তাঁতশিল্পীদের নিয়ে অনেক ধরনের কাজ করেন তিনি। বালুচরি শাড়ির নকশাতেও কিছু কিছু নতুন মোটিফ বোনাচ্ছিলেন বেশ কয়েক বছর ধরে। লকডাউনের সময় হঠাৎ করেই যীশুর জীবনকাহিনি নিয়ে বালুচরির নকশা তৈরির ভাবনাটা মাথায় আসে। আর তাঁর ক্ষেত্রে ভাবনা মানেই কাজ শুরু।
যীশুর জন্ম, ধর্মপ্রচার, ক্রুশবিদ্ধ হওয়া ও পুনর্জন্ম— এই চারটি ঘটনার পেন্সিল স্কেচ চলতে থাকে। খুব ভালো কাজ করেন এমন বালুচরি শিল্পীর সঙ্গে আলোচনা করে পেন্সিল স্কেচ থেকে গ্রাফে ডিজাইন ট্রান্সফার করা হয়। এরপর দীর্ঘ পাঁচ মাস পরীক্ষানিরীক্ষা। অবশেষে সাফল্য।
‘লাল-সাদা বিষ্ণুপুরি সিল্কের সুতোর সঙ্গে সোনালি জরির সুতোর টানাপোড়েনে আঁচল জুড়ে যীশুর জীবন। বুটিতে ক্রুশবিদ্ধ যীশুর মোটিফ। শিল্পীর বক্তব্য, যীশুর জন্মদিনকে লক্ষ্য রেখেই কাজ শুরু করেছিলাম। জানতাম নতুন কাহিনি নিয়ে বালুচরির নকশা তৈরি খুব কঠিন। শুধু ফিগার বুনলেই তো কাহিনি চিত্রণ হয় না, প্রতিটি চরিত্রের দৈহিক অভিব্যক্তি সঠিক হওয়া দরকার। মুখের এক্সপ্রেশনও খুব গুরুত্বপূর্ণ। পাঁচ মাস ধরে নাওয়া-খাওয়া ভুলে আমার সঙ্গে কাজ করেছেন কয়েকজন বালুচরি শিল্পী।
বারবার সংশোধন করতে করতে শেষ পর্যন্ত তৈরি করতে পেরেছি বালুচরিতে যীশুর জীবন। এছাড়াও বেশ কিছু এক্সক্লুসিভ বালুচরি রয়েছে আমার নতুন কালেকশনে। তার মধ্যে তসর বালুচরি লেটেস্ট।’ বালুচরি ছাড়াও বিষ্ণুপুরের কাতান সিল্ক নিয়েও কাজ করেন বিশাখা। উইভিংয়ের কাজ, হ্যান্ড পেন্টিং কাঁথাকাজ সবরকমই হয় অভিনব ডিজাইনে। শান্তিনিকেতনের নানা ধরনের কাঁথাকাজ তসর ও বিষ্ণুপুরি সিল্কেও করা হয়। রঙের ব্যবহার একেবারে অন্য রকম। বাংলার হ্যান্ডলুম নিয়েও পরীক্ষামূলক কাজ করছেন ডিজাইনার। তবে যীশুর জন্মদিন উদ্যাপনে এমন উদ্যোগ এর আগে আর কেউ করেছেন কি?