“নিজের ঘর ফাঁকা বলে অন্যের ঘর ভাঙাচ্ছে বিজেপি”, আক্রমণাত্মক পার্থ চট্টোপাধ্যায়
আজ সাংবাদিক বৈঠক থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায় শুভেন্দু অধিকারীকে তোপ দেগে বলেন, “লোকে দেখুক কারা এধরনের কথা বলছে। যিনি ১০ বছর মন্ত্রিত্ব সামলালেন, তৃণমূলের হয়ে জেলায় জেলায় ঘুরলেন, যিনি বেশ কিছু দফতরের মন্ত্রী থাকলেন, থাকার পর ৩ মাস আগে গিয়ে বুঝলেন যে তৃণমূল কংগ্রেস নাকি ভালো না।” তৃণমূল মহাসচিব যোগ করেন, “মানুষ ঠিকই উত্তর দেবেন। কে ভোগী আর কে ত্যাগী আর কে সর্বস্ব ত্যাগী হয়ে যাবে তা মানুষই বিচার করবেন।” প্রসঙ্গত গতকাল পূর্বস্থলির সভা থেকে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করেন।
শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মফুলে নাম লিখিয়েছেন আরও অনেকে। সেই দল ছাড়া নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। দিলীপ ঘোষকে নিশানা করে পার্থর খোঁচা, ‘নিজেদের সংগঠনের জোর নেই, তাই ঘর ভাঙছে’। অমিত শাহের ভোজন রাজনীতি নিয়ে পার্থর খোঁচা, ‘‘ডাল-ভাত খেয়ে বাংলার সংস্কৃতি বদলানো যাবে না।’’ বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূলের এক গুচ্ছ কর্মসূচির ঘোষণাও করেছেন পার্থ।
ভোটের আগে রাজ্যের মণীষী, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে জমজমাট রাজনীতি। শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর জন্মদিনে এ রাজ্যে এসেছিলেন অমিত শাহ। আবার নেতাজির জন্মদিনেও রাজ্যে আসতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি আগে কোনও দিন এই সব মণীষীদের গুরুত্ব দেয়নি। ভোটের সময় নানা অনুষ্ঠান করছে। এই প্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার একগুচ্ছ দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন পার্থ, যাতে গুরুত্ব পাচ্ছে মণীষী-স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। পার্থ জানিয়েছেন, ১ থেকে ৭ জানুয়ারি রাজ্যের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মান জানানো হবে। বিবেকানন্দ, গাঁধীজি, বি আর আম্বেডকরদের স্মরণ করা হবে এই সময়ে। এ ছাড়া ১ জানুয়ারি পালিত হবে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস। ২৬ জানুয়ারি জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হবে প্রজাতন্ত্র দিবস। দুঃস্থ মানুষদের সাহায্য করা, হাসপাতালে ফল ও বস্ত্র বিতরণ করা হবে। ৩০ জানুয়ারি গাঁধীজির প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে ব্লকে ব্লকে শদীদ দিবস পালন করা হবে।
অমিত শাহের (Amit Shah) দু’বারের রাজ্য সফর নিয়ে কটাক্ষ করে পার্থ বলেন, ‘‘প্রথমে আদিবাসীর বাড়ি গিয়েছিলেন। সেখানে কিছু পাননি। নাটক করলেন। বাউলের ঘরে গিয়েও গান শুনে নাটক করলেন। কিন্তু তাঁর ‘মন কি বাত’ কেউ শুলনেল না। সব বাহুবলি নেতা। মানুষের অগাধ আস্থা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর। তাই গিয়ে ভাত খেয়ে, ডাল খেয়ে বাংলার সংস্কৃতি বদলানো যাবে না। আর মানুষের কথা না শুনে নিজেদের কথা বলা, প্রচার করা বাংলার মানুষ মেনে নেবে না।’’
বৃহস্পতিবার জাতীয় কৃষক দিবস (National Farmers Day)। বুধবার দিল্লির সিঙ্ঘু সীমানায় আন্দোলনকারী কৃষকদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। টুইট করেও কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। তবে এ রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি প্রকল্প কার্যকর না করা নিয়ে লাগাতার রাজ্য সরকারকে তোপ দাগছে বিজেপি। তার জবাবে রাজ্যের কৃষকদের অবস্থা বোঝাতে একাধিক তথ্য তুলে ধরেন। বলেন, ‘‘২০১১ থেকে ১৮ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় এ রাজ্যে তিন গুণ হয়েছে। কিসান ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা আড়াই গুণ বেড়েছে। কৃষকবন্ধু প্রকল্পে ৭৩ লক্ষ কৃষক উপকৃত। করমুক্ত করা হয়েছে কৃষি জমিকে। ফসল বিমার পুরো খরচ বহন করে রাজ্য সরকার। বাংলা টানা ৬ বার কৃষি পুরস্কার পেয়েছে।’’
দলবদল নিয়ে দিলীপ ঘোষকে (Dilip Ghosh) নিশানা করে পার্থ বলেন, ‘‘দিলীপ ঘোষদের নিজেদের সংগঠনের কোনও জোর নেই। তাই ঘর ভাঙছে। এখন নিজেদের ঘরের যা অবস্থা, আগে সেটা সামলাক। পরে অন্যের ঘরের দিকে দেখবে।’’