বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

আজকেই ঈশ্বরের কাছে চলে যান কলকাতার যীশু 

December 25, 2020 | 2 min read

ঠিক দুবছর আগে আজকের দিনেই ঈশ্বরের কাছে চলে যান কলকাতার যীশুর রচয়িতা। বাঙালিকে যিনি প্রশ্ন করতে শিখিয়েছিলেন, রাজা, তোর কাপড় কোথায়? প্রয়াত হন কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, স্বাধীনতা উত্তর যুগে বাংলা কবিতার জগতে যাঁর আবির্ভাবকে আশীর্বাদ বলে মনে করেন অসংখ্য সাহিত্যপ্রেমী । কবির বয়স হয়েছিল ৯৪। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতায় ভুগছিলেন। 

মহিলা-কলেজের সভামঞ্চে ভাষণ দিচ্ছেন ধবধবে সাদা পোশাকের ঋজু এক মানুষ। ঈর্ষণীয় বাকরীতিতে প্রতি মুহূর্তে অনুপম দ্যুতির উদ্ভাস; কথায় কথায় জানালেন তিনি: ‘‘…পড়াশোনায় আমি কোনও দিন দ্বিতীয় হইনি।’’ সামান্য যতি। শ্রোতারা একটু বিস্মিত। উচ্চারিত হল পরবর্তী বাক্যটি: ‘‘অবশ্য প্রথমও হইনি কোনও দিন।’’ তুমুল হাততালি আর হাসিতে ফেটে পড়ল কলেজ-হল।

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জীবন শুরু হয়েছিল আর পাঁচটা সাধারণ শিক্ষিত বাঙালি পরিবারের ঘেরাটোপেই। ১৯২৪ সালের ১৯ অক্টোবর অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার চান্দ্রা গ্রামে তাঁর জন্ম। নীরেন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘‘… সেখান থেকে সব চেয়ে কাছের রেল-ইস্টিশানটিও ছিল চব্বিশ মাইল দূরে।… বাড়ির সংখ্যা বিশ থেকে বাইশের মধ্যে। পাকা বাড়ি কুল্যে একটি। তাও দোতলা নয়, একতলা।…’’ এমন এক পরিবেশই হয়তো সে দিন প্রকৃতি ও মানুষ তাঁর কবিতার এই দুই সত্তাকে রোপণ করে দিয়েছিল তাঁর মধ্যে। পরে এক সময় বলেছিলেন, ‘‘যেমন বিশ্বপ্রকৃতি, তেমনি মানবপ্রকৃতি। এ-দুয়ের যোগসম্পর্ক এতই নিবিড় যে, একটায় যখন আস্থা হারাই, তখন অন্যটাতেও আস্থা থাকে না।’’

তাঁর শৈশবের বেশিরভাগটা কেটেছে বর্তমান বাংলাদেশে। তারপর চলে আসেন কলকাতায়। সেন্ট পলস্ কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর পা রাখেন সাংবাদিকতার জগতে। ১৯৭৪ সালে তাঁর কবিতার বই উলঙ্গ রাজার জন্য পান সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার, পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অ্যাকাডেমির সভাপতি ছিলেন। ৪৭টিরও বেশি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর, যার মধ্যে ১৭টিই শিশুদের ছড়ার বই। ছোটদের পত্রিকা আনন্দমেলার সম্পাদক ছিলেন, টিনটিনের অসামান্য বাংলা অনুবাদও তাঁর হাতে। গোয়েন্দা গল্পও লিখতেন, তাঁর ডিটেকটিভ ছিলেন ভাদুড়ি মশাই। 

বাংলার কবিতা ও সাহিত্যে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর লেখা বেশকিছু ছোটগল্প ও উপন্যাস সাহিত্যপ্রেমীর কাছে কাছে চিরপ্রিয় হয়ে থাকবে। উলঙ্গ রাজা কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯৭৪ সালে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান তিনি। এছাড়াও ১৯৯৪ সালে উল্টোরথ পুরস্কার, ১৯৭০ সালে তারাশঙ্কর স্মৃতি, ১৯৭৬ সালে আনন্দ শিরোমণি পুরস্কার পান তিনি। ২০০৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ডক্টরেট দেওয়া হয় তাঁকে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Nirendranath Chakravarty

আরো দেখুন