বড়দিনে জনপ্লাবিত শহর
আতঙ্ক নয়। আবেগে মাতল তিলোত্তমা। বড়দিনে (Christmas) ‘ফেস্টিভ মুডে’ পাওয়া গেল শহরবাসীকে। দিনভর জমজমাট বড়দিনের প্রাণকেন্দ্র পার্ক স্ট্রিট (Park Street) চত্বর। রং-বেরঙের সোয়েটার-জ্যাকেট, আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া, হই-হুল্লোড় সবই চলল সারাদিন। সঙ্গে সেলফি-গ্রুফি মাস্ট। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে কালো মাথার ঢেউ।
কেউ আবার মাথা ঢেকেছেন সান্তার টুপিতে। সন্ধ্যার সময় অ্যালেন পার্ক (Allen Park) সংলগ্ন এলাকা কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে যায় মানুষের ভিড়ে। প্রত্যেকেই তাঁদের প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। রেস্তরাঁ, পানশালাগুলির সামনে মানুষকে প্রবেশের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে দেখা গিয়েছে। পার্ক স্ট্রিট ছাড়াও শহরের অন্যান্য বিনোদন পার্ক, পর্যটন কেন্দ্রগুলিতেও জনসমাগম ছিল ঠাসা। চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া, ইকো পার্ক, সায়েন্স সিটি, নিক্কো পার্ক, প্রিন্সেপ ঘাট— সর্বত্রই মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ভিড় লক্ষ্য করা গিয়েছে।
ঘড়ির কাঁটায় সকাল দশটা। আলিপুর পশুশালা টিকিট কাউন্টারে তখন লম্বা লাইন। বেলা যত গড়িয়েছে, লাইনে দাঁড়ানো মানুষের সংখ্যা ততই বেড়েছে। কোভিড পরিস্থিতিতেও চিড়িয়াখানায় পর্যটকের সংখ্যা এবছরের সব রেকর্ড কার্যত ভেঙে দিয়েছে। পশুশালা কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, এদিন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ প্রবেশ করেছিলেন চিড়িয়াখানায়। এই মরশুমে এটাই সর্বোচ্চ। গত রবিবার এই সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার।
পর্যটক টানার বিষয়ে চিড়িয়াখানাকে টেক্কা দিয়েছে ইকোপার্ক। সন্ধ্যা পর্যন্ত ইকো পার্কে প্রায় ৫৬ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে। যা কোভিড পরিস্থিতিতে অভূতপূর্ব বলে মনে করছে ইকো পার্ক কর্তৃপক্ষ। হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতেও ৫৬ হাজার মানুষ নিউটাউনের প্রকৃতিতীর্থে এসেছেন। যা করোনা পরিস্থিতিতে রেকর্ড। তবে গত বছর এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৭৭ হাজার।
বড়দিনের সন্ধ্যায় পূর্ব কলকাতার মানুষদের উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল শ্রীভূমি মোড় সংলগ্ন এলাকা। সান্তার মূর্তি, আলোকসজ্জায় সেজে উঠেছিল এলাকা। প্রচুর মানুষকে সেখানে সান্তার মূর্তির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে দেখা গিয়েছে। মানুষের ঢল এতই বেশি ছিল যে, গোটা ভিআইপি রোডে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে, রবীন্দ্র সদন, ময়দান, বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়াম, ক্যাথিড্রাল চার্চ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ইলিয়ট পার্ক সংলগ্ন চত্বরে প্রচুর মানুষ জমায়েত হন। মানুষের সুরক্ষার জন্য কলকাতা ট্রাফিক পুলিসের তরফ থেকে বানানো হয় ‘ওয়াচ টাওয়ার’। নজরদারি চালানো হয় সেখান থেকে। ভিক্টোরিয়ায় এদিন শুধুমাত্র বাগানের অংশ খোলা রাখা হয়। বন্ধ ছিল মিউজিয়াম। এদিন বিধান শিশু উদ্যানে কচিকাঁচা মিলিয়ে ভিড় হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার। যা এই পরিস্থিতিতে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। ১ জানুয়ারি এখানে শিশুদের জন্য অনুষ্ঠান হবে বলে উদ্যান সূত্রে খবর।