বিনোদন বিভাগে ফিরে যান

করোনার বছরে বাজিমাত করল যে ওয়েব সিরিজগুলি

December 31, 2020 | 3 min read

২০২০ সালে সিনেমার চেয়ে বেশি লাইমলাইটে থেকেছে ওয়েব সিরিজ। প্রতিটা OTT প্ল্যাটফর্মে বছরভর চলেছে সিরিজ-যুদ্ধ। কেউ বিগ বুল হয়ে সাফল্যের শিখর ছুঁয়েছে তো কেউ ‘শ্যাডো’য় ঢাকা পড়ে গিয়েছে। ২০২০-র এমনই সেরা ওয়েব সিরিজের রইল।

১. অসুর (Asur): সত্য, ত্রেতা, দাপড় ও কলি। পুরান ও হিন্দু শাস্ত্রমতে কলি যুগের আগমন সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্র ভরে উঠবে হিংসা আর অপরাধে। আর কলির অবতার হিসেবে আবির্ভূত হবে বিষাক্ত কোনও ছায়ামূর্তির। কিংবা এই সমাজেরই কোনও চেনা মুখের আড়ালে লুকিয়ে সেই অসুর! কলিকালকে সার্থক করে তোলাই যার লক্ষ্য। 

এই অদ্ভুত অথচ অত্যন্ত আকর্ষণীয় চিত্রনাট্য নিয়েই তৈরি ওনি সেনের ‘অসুর’। যার প্রতিটা পর্বে টানটান উত্তেজনা। গল্প বলার ধরন, লোকেশনের চয়েজ, সবই ওয়েব সিরিজকে আরও অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করেছে। যদিও প্রথম সিজনের শেষটা আরও খানিকটা মজবুত হতেই পারত।

২. স্পেশ্যাল অপস্ (Special ops): ইনটেলিজেন্স এজেন্সির জঙ্গি দমন মিশন। আপাত দৃষ্টিতে টপিকটি অত্যন্ত চেনা। আর সেখানেই ছিল পরিচালক নীরাজ পাণ্ডের আসল চ্যালেঞ্জ। সন্ত্রাসবাদের রিয়েল আর রিল প্রেক্ষাপটকে অসাধারণভাবে জুড়ে দিয়েই বাজিমাত করেছেন তিনি। একাধিক সন্ত্রাসবাদের মাস্টার মাইন্ডের পিছনে ধাওয়া করেছে একটা টিম। 

বিদেশ-বিভুঁই ঘুরে চলছে জঙ্গিকে শনাক্ত করার কঠিন কাজ। শুধু গায়ের জোরে নয়, চতুর মস্তিষ্কের সঙ্গে লড়তে প্রয়োজন মগজাস্ত্র। স্পেশ্যাল অপসে রয়েছে তারই পারফেক্ট ব্যালেন্স। অকারণ অতিরিক্ত অ্যাকশন কিংবা মেলোড্রামার কোনও জায়গা নেই এখানে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গোটা সিরিজটা দেখে নিতে ইচ্ছে করবে।

৩. স্ক্যাম ১৯৯২: দ্য হার্শাদ মেহতা স্টোরি (Scam 1992: The Harshad Mehta Story): নব্বইয়ের গোড়ার দিকে তোলপাড় হয়েছিল ভারতীয় অর্থনীতি। একলাফে অনেকখানি মাথা তুলেছিল শেয়ার মার্কেট। নেপথ্যে? হারশাদ শান্তিলাল মেহতা। তাঁর ‘স্ক্যাম’ কম-বেশি অনেকেরই জানা। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসে যে ব্যক্তি ধীরুভাই আম্বানির চেয়েও বেশি অঙ্কের আয়কর জমা দিয়েছিলেন, তাঁর জীবনের এত খুঁটিনাটি সত্যিই অজানা ছিল দর্শকদের। 

শেয়ার মার্কেটের কচকচানি নিপুন হাতেই সাধারণের বোধগম্য করে তুলেছেন পরিচালক হানসাল মেহতা। সাল-তারিখ কিংবা চরিত্রের নাম না বদলে এমন একটা বিষয় নিয়ে ওয়েব সিরিজ তৈরির সাহস দেখানোয় কুর্নিশ পরিচালককে। আর অভিনেতা প্রতীক গান্ধীকে সত্যিই সকলে হারশাদ মেহতা নামেই মনে রাখবেন।

৪. আরিয়া (Arya): পারিবারিক সম্পর্কের টানাপোড়েন আর বহির্জগতের অফুরন্ত চাপের মেলবন্ধনেই আরিয়ার কাহিনি বাস্তবের রূপ নিয়েছে। রোম্যান্টিক স্ত্রী, গ্রেসফুল মহিলা, বুদ্ধিমতী ব্যবসায়ী আর সাহসী মায়ের ভূমিকায় সুস্মতি সেন ওরফে আরিয়া সঠিক চয়েস। স্বামীর খুনিকে খুঁজে বের করতে গিয়ে এমন কঠোর বাস্তবের সামনে পড়তে হবে, কল্পনাও করেনি সে। সিরিজের চিত্রনাট্য কিছু কিছু জায়গায় স্লথ হলেও এর শেষ টুইস্টটি দেখতে বাধ্য হবেন।

৫. আশ্রম চ্যাপ্টার ১ (Ashram chapter 1): স্বঘোষিত ধর্মগুরুর আশ্রমের চাকচিক্যের আড়ালের কর্মযজ্ঞ, ধর্ষণ-নির্বীজকরণ, মাদকের ব্যবসার সঙ্গে রাজনৈতিক তরকা লাগিয়ে দুর্দান্ত একটি রেসিপি পরিবেশন করেছেন পরিচালক প্রকাশ ঝা। ববি দেওয়ল, ত্রিধা চৌধুরি, অদিতি পোহনকর, দর্শন কুমার নিজনিজ চরিত্রে অসাধারণ। তবে সিরিজের সেরা পাওনা চন্দন রায় সান্যাল ওরফে ভোপা ভাই। প্রথম সিজনে কাহিনি নানা মোড় নিয়ে দেখার আগ্রহ বাড়িয়ে তুলেছিল। যদিও দ্বিতীয় সিজন সেভাবে মন ভরাতে পারেনি। 

৬. পাতাল লোক (Pataal lok): কুখ্যাত সাইকো কিলার কেন বিখ্যাত সাংবাদিককে মারতে চায়? এই প্রশ্ন দিয়ে কাহিনির ভিত তৈরি হয়। তবে এ প্রশ্নর উত্তর খুঁজতে গিয়ে একেবারে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়ে। পুলিশ অফিসার হাতিরামের চরিত্রে জয়দীপ আহওয়ালাত কিংবা হাতোড়া ত্যাগী হিসেবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এককথায় অনবদ্য। রিয়েল লোকেশন, চাঁচাছোলা সংলাপ আর গ্ল্যামারের মেকি মুখোশটা ছিঁড়ে ফেলে পাতাল লোকের ভয়াবহতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন পরিচালক। 

৭. বন্দিশ ব্যান্ডিট (Bandish Bandit): আদ্যোপান্ত সংগীতের মোড়কে বাঁধা দুর্দান্ত একটি ওয়েব সিরিজ। ক্লাসিক্যাল আর রক সং সব ফ্লেভারই পাবেন। রক্ষণশীল গায়ক পণ্ডিতের পরিবারের ছেলে আধুনিক গানের গায়িকার প্রেমে পড়লে কীভাবে ছন্দপতন ঘটতে পারে, সে গল্পই ফুটে উঠেছে। তবে সিরিজের সুরে তাল কাটেনি বিন্দুমাত্র। শঙ্কর-এহসান-লয়ের মিউজিক সিরিজকে অন্যমাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। নাসিরুদ্দিন শাহর অভিনয়, রাজস্থানী ঘরানার মিউজিক আর কমপ্লিকেটেড লাভস্টোরি এবছরের পছন্দের তালিকায় থাকবেই।

৮. পঞ্চায়েত (Panchayat): গ্রামীণ ভারতবর্ষের ছবি একাধিকবার বড়পর্দায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন বহু পরিচালক। কিন্তু সাদামাটা বিষয়টি নিয়ে ইন্টারেস্টিং একটা সিরিজ বানানো বেশ কঠিন। তবে সিদ্ধহস্তেই তা করে দেখিয়েছেন পরিচালক দীপক কুমার মিশ্র। 

শহুরে সুযোগ-সুবিধা ছাড়াও অজ-গাঁয়ে কীভাবে জীবনকে সেলিব্রেট করা যায়, সেই ফ্লেভারই আর পাঁচটা কাহিনি থেকে পৃথক করেছে পঞ্চায়েতকে। পিছিয়ে পড়া গ্রামের নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়ে তা সমাধানের যে অভিনব পথ দেখিয়েছেন সচিবজী, তা দেখতে দারুণ মজা লাগে। দুশ্চিন্তা দূরে ঠেলে দর্শককে মাটির কাছাকাছি এনে দেন পঞ্চায়েত।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Web Series, #2020 web series

আরো দেখুন