ত্রিপুরায় আত্মঘাতী কর্মচ্যুত শিক্ষকের চিতায় শুয়ে স্ত্রীর সহমরণের দাবি

আসলে ত্রিপুরায় বাম আমলে ২০১০ থেকে ২০১৪ সালে বিভিন্ন সময়ে ১০,৩২৩ জন শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু পরে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গলদের দরুন তাঁদের চাকরি বাতিল করে দেয় ত্রিপুরা হাই কোর্ট। সেটা ২০১৪ সাল। তখন থেকেই সমস্যায় শিক্ষকরা।

January 3, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

নিয়মের গেরোয় পড়ে চাকরি খুইয়েছেন। পরিবারে মা, বোন, স্ত্রী, দুই সন্তান। মানুষগুলোর মুখে খাবার তুলে দেওয়ার সংস্থানটুকু নেই। তার উপর মাথার উপর পাহাড়প্রমাণ ঋণের বোঝা। পাওনাদারদের চাপ, ব্যাংকের চিঠি। দিশেহারা, উদভ্রান্ত হয়ে শেষপর্যন্ত আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার চাকরিচ্যুত শিক্ষক। স্বামীর মৃত্যুতে দিশেহারা স্ত্রীও চান সহমরণ। স্বামীর ফেলে যাওয়া দায়িত্ব, আর ঋণের বোঝা বয়ে বেড়ানোর থেকে মৃত্যুকেই শ্রেয় মনে করছেন উত্তম ত্রিপুরার স্ত্রী শেফালি ত্রিপুরা। সেই সঙ্গে যাদের জন্য আজ তাঁদের পরিবারের এই পরিস্থিতি, তাদের বিচারও চাইছেন তিনি।

আসলে ত্রিপুরায় বাম (Left Front) আমলে ২০১০ থেকে ২০১৪ সালে বিভিন্ন সময়ে ১০,৩২৩ জন শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু পরে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গলদের দরুন তাঁদের চাকরি বাতিল করে দেয় ত্রিপুরা হাই কোর্ট (Tripura High Court)। সেটা ২০১৪ সাল। তখন থেকেই সমস্যায় শিক্ষকরা। হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে এই শিক্ষকদের অ্যাড হক ভিত্তিতে পুনরায় নিয়োগ করে ত্রিপুরা সরকার। কিছু শিক্ষককে নিয়োগ করা হয় সরকারের অন্যান্য বিভাগে। গত মার্চ মাসে এই অ্যাড হক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তারপর থেকেই কর্মহীন প্রায় ৮-৯ হাজার শিক্ষক। ক্ষমতায় আসার আগে এই শিক্ষকদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দিলেও, আসলে কিছুই করে উঠতে পারেনি ত্রিপুরার বিজেপি (BJP) সরকার। চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে ৭ ডিসেম্বর থেকে লাগাতার গণবস্থান করছেন এই শিক্ষকরা। শীতের মধ্যে তাঁরা গত ২৮ দিন ধরে আগরতলার প্যারাডাইস চৌমুহনীতে ধরনায় বসে।

দক্ষিণ ত্রিপুরা (Tripura) জেলার উত্তম ত্রিপুরাও এই কর্মহীনদের মধ্যেই একজন। ৯ মাস কর্মহীন থাকার দরুন তাঁর সংসারের অভাব-অনটন চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। পাওনাদারদের গঞ্জনা আর স্ত্রী-সন্তানদের মুখে খাবার তুলে না দিতে পারার ব্যর্থতা বুকে নিয়ে শুক্রবার রাতে আত্মহত্যা করেন তিনি। শনিবার তাঁর শেষকৃত্যের সময় আরও এক মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকলেন তাঁর প্রতিবেশীরা। দাহ করার আগে স্বামীর চিতার উপর লাফিয়ে শুয়ে পড়েন তাঁর স্ত্রী। সঙ্গে তাঁর আর্তনাদ,” আমাকেও স্বামীর সঙ্গে পুড়িয়ে দাও। আমি এর বিচার চাই।” শেফালি ত্রিপুরা নিজের আবেগকে যেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না। শেষপর্যন্ত প্রতিবেশীরা কোনওরকমে তাঁকে নিরস্ত করেন। কিন্তু এরপর? সরকার কোনও ব্যবস্থা না করলে এই পরিবারের কারও মুখে এরপর হয়তো অন্নও জুটবে না।


TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen