স্বাস্থ্যসাথী কার্ড বিলিতে রাজ্যে এগিয়ে মুর্শিদাবাদ
দুয়ারে সরকার (Duare Sarkar) কর্মসূচিতে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড (Swasthya Sathi Card) পেয়েছেন মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দারা। কয়েকটি জেলার থেকে প্রায় দ্বিগুণ কার্ড এখানে দেওয়া হয়েছে। মুর্শিদাবাদের ধারেপাশে রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪পরগনা। বাকি জেলাগুলি বহু পিছিয়ে রয়েছে। আধিকারিকদের অবশ্য দাবি, অন্যান্য জেলার তুলনায় মুর্শিদাবাদে জনসংখ্যা বেশি। সেই কারণে উপভোক্তার সংখ্যাও বেশি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে একমাসের মধ্যে ২জানুয়ারি পর্যন্ত দু’লক্ষ ১৮হাজার ২৭৫টি কার্ড এই জেলায় দেওয়া হয়েছে। সেখানে মালদহে মাত্র ৫২হাজার ৭৮৪জন কার্ড পেয়েছেন। বীরভূমে ৫৪হাজার ৮৮৯, পূর্ব মেদিনীপুরে ৮৩হাজার ৪৩৭ জন কার্ড পেয়েছেন।
মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মীনা বলেন, প্রতিটি ব্লকেই কার্ড দেওয়া হচ্ছে। আবেদন করার পর সবকিছু তথ্য কম্পিউটারে আপলোড করা হচ্ছে। পরে কবে কোথায় ছবি তুলে কার্ড দেওয়া হবে তা উপভোক্তাদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, কার্ড পাওয়ার পর চিকিৎসা পরিষেবা পেতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তারজন্য সরকার নজরদারি বাড়িয়েছে। সম্প্রতি কয়েকটি জেলা থেকে অভিযোগ ওঠে, কার্ড থাকা সত্ত্বেও কিছু হাসপাতাল বা নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা পরিষেবা না দিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এরপরেই রাজ্য সরকার সেইসমস্ত হাসপাতালগুলিকে কড়া বার্তা দিয়েছে। তারপর থেকে সমস্যা অনেকটাই মিটে গিয়েছে বলে আধিকারিকদের দাবি। মুর্শিদাবাদের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিক শুভদীপ গোস্বামী বলেন, কার্ড পেতে উপভোক্তাদের যাতে সমস্যা না হয় তারজন্য বেশকিছু পঞ্চায়েত এলাকাতেও মেশিন বসিয়ে কার্ড দেওয়া হচ্ছে। ভালোভাবেই কাজ এগচ্ছে। নথি ঠিক থাকলে কার্ড পেতে সমস্যা হচ্ছে না। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর (Self Help Group) সদস্যরা বাড়িতে বাড়িতে কুপন পৌঁছে দিচ্ছেন। কবে কার্ড দেওয়া হবে তা ওই কুপনেই লেখা থাকছে। সেটি নির্দিষ্ট দিনে নিয়ে এলেই কার্ড তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। সালারের বাসিন্দা রিন্টু শেখ বলেন, আবেদন করার ১৭-১৮দিনের মধ্যেই কার্ড পেয়ে গিয়েছি। গ্রামের অনেকেই আবেদন করার কিছুদিনের মধ্যেই তা পেয়ে গিয়েছেন। এবার প্রয়োজনে বাইরে গিয়েও চিকিৎসা করানো যাবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মুর্শিদাবাদের মতো আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা জেলার বাসিন্দাদের কাছে এই কার্ড খুব গুরুত্বপূর্ণ। টাকার অভাবে অনেকেই ভালো জায়গায় চিকিৎসা করাতে পারতেন না। এবার থেকে তাঁরাও কলকাতার বেশকিছু নামী হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন।
প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) পাশাপাশি দুই ২৪পরগনাতেও লক্ষাধিক উপভোক্তা কার্ড হাতে পেয়ে গিয়েছেন। ২জানুয়ারি পর্যন্ত উত্তর ২৪পরগনায় এক লক্ষ ৮৩ হাজার ৩০৮ জন ও দক্ষিণ ২৪পরগনায় এক লক্ষ ৮৯ হাজার ২৭জনকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়া হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে কার্ড বিতরণের সংখ্যা আরও বাড়বে। মুর্শিদাবাদের প্রতিটি ব্লকে প্রথম দিন থেকেই বিপুল সংখ্যায় আবেদন জমা পড়েছে। তারমধ্যে একই পরিবারের একাধিক আবেদনও জমা পড়েছিল। বিভিন্ন কারণে বেশকিছু আবেদনপত্র বাতিলও হয়েছে। এক আধিকারিক বলেন, এই জেলা কাস্ট সার্টিফিকেট দেওয়ার ক্ষেত্রেও এগিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে বহরমপুর এবং কান্দি মহকুমায় সবচেয়ে বেশি কাস্ট সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। এই জেলায় আড়াই লক্ষের বেশি পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন। বাইরে থাকায় তাঁরা বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা পেতেন না। তাঁদেরও অনেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড বা কাস্ট সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করেছেন।