রাজ্যে ৭ দফায় বিধানসভা ভোট, এপ্রিলে শুরুর কথা ভাবছে কমিশন
এপ্রিলের গোড়া থেকে সাত দফায় পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচন (West Bengal Assembly Election 2021) করার কথা ভাবছে কমিশন। করোনা-আবহে ভিড় কমানোর যুক্তি তুলে বুথ বা ভোটকেন্দ্রের সংখ্যাও অনেক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে ভোটকেন্দ্র ছিল প্রায় ৭৮ হাজার। ভিড় ও সংক্রমণ এড়াতে আরও ২৮ হাজার বুথ বাড়াচ্ছে কমিশন।
রাজনৈতিক হিংসার কারণে পশ্চিমবঙ্গে নির্বিঘ্নে ভোট করানোটা কমিশনের কাছে পরীক্ষা। ইতিমধ্যেই শাসক দলের বিরুদ্ধে হিংসার অভিযোগ এনে কমিশনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বিজেপি। ডিসেম্বরে পশ্চিমবঙ্গ সফরে যাওয়া উপনির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈনের কাছে হিংসার অভিযোগ জানিয়েছিল অন্য বিরোধী দলগুলিও। কমিশন চাইছে, মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ কাটতেই নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করে দিতে, যাতে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে পশ্চিমবঙ্গে ভোট পর্ব শুরু করে দেওয়া যায়। এক মাসের মধ্যে তা শেষ করে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করে দেওয়াই কমিশনের লক্ষ্য। প্রাথমিক ভাবে গত বারের মতো পশ্চিমবঙ্গে সাত দফায় ভোট করানোর কথা ভেবেই এগোচ্ছেন কমিশন-কর্তারা। তবে কমিশন (Election Commission of India) সূত্রের মতে, উপনির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈনের রিপোর্ট, রাজ্যে ভোটে হিংসার সম্ভাবনা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পর্যবেক্ষণ এবং পাঁচ রাজ্যে একসঙ্গে ভোটের কারণে কত আধা সামরিক বাহিনী পাওয়া যাবে— তার উপরে ভিত্তি করে শেষ পর্যন্ত ভোটের দফা কত হবে, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
রাজনৈতিক হিংসা ও মাওবাদী সমস্যার কথা মাথায় রেখে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন ও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন সাত দফায় করেছিল কমিশন। এ বারে মাওবাদীদের উপদ্রব সেই অর্থে না-থাকলেও করোনা সংক্রমণের কারণে বুথ পিছু ভিড় কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অতীতে বুথ পিছু গড়ে প্রায় ১৫০০ ভোটার ভোট দিতেন। সংক্রমণ এড়ানোর উদ্দেশ্যে সেই সংখ্যাটি কমিয়ে হাজারের কাছাকাছি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার ফলেই ২৮ হাজার মতো বুথ বাড়তে চলেছে রাজ্যে। পাল্লা দিয়ে বাড়বে আধা সামরিক জওয়ানের সংখ্যাও।
গত বছর অতিমারির আবহেই বিহারে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে। নরেন্দ্র মোদী সরকার জানুয়ারি মাস থেকে গণটিকাকরণ অভিযান শুরু করার পরিকল্পনা নিলেও, প্রথম ৩০ কোটি দেশবাসীকে প্রতিষেধকের আওতায় নিয়ে আসতে সময় লেগে যাবে জুলাই মাস পর্যন্ত। টিকাকরণ প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হওয়ায় তা শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা না-করে নির্দিষ্ট সময়ে, অর্থাৎ মে মাসের মধ্যে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন সেরে ফেলার পরিকল্পনা নিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা। অসম, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, পুদুচেরি ও কেরল— এই পাঁচ রাজ্যে ভোট প্রক্রিয়া যথাসময়ে শেষ করতে নেমে পড়েছেন কমিশন কর্তারা। কমিশন সূত্রের খবর, বিহার নির্বাচনে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। কী ভাবে করোনার সুরক্ষাবিধি সংক্রান্ত নির্দেশকা মেনে ভোটারদের বুথে যাওয়ার প্রশ্নে উৎসাহিত করা যায়, সেটিই ছিল বড় পরীক্ষা। আশঙ্কা ছিল করোনার কারণে ভোটের হার কমে যেতে পারে। কিন্তু বিহারে করোনা আবহে ভোটের হার বাড়ায় উৎসাহিত কমিশন ভোটমুখী রাজ্যগুলিতেও বিহারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাইছে।