প্রত্যন্ত চর এলাকাতেও মার্চের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে
রাজ্যের প্রায় সব জনবসতি এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে গিয়েছে। বাকি ছিল নদীর প্রত্যন্ত চর এলাকাগুলি। সেখানেও বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলতি আর্থিক বছরের মধ্যেই কাজটি শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি। কিছু নদীর চর এলাকা খুবই প্রত্যন্ত হওয়ার কারণে সেখানে গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পাঠানো সম্ভব নয়। তাই ওই চরগুলিতে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সোলার ফটোভোলটাইক টেকনোলজি (এসপিভি) ইউনিট থেকে ওই চরগুলিতে বসবাসকারী মানুষের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। এই ইউনিটের সঙ্গে ব্যাটারি ব্যাক-আপ থাকবে। সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য মোট ১১১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
বণ্টন কোম্পানি সূত্রে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭ সালে রাজ্যের ৭টি জেলায় মোট প্রায় ৭ হাজার জনের বসতিযুক্ত ৭৫টি নদীর চরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। জেলাগুলি হল মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, মালদহ, কোচবিহার, বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া। মুর্শিদাবাদ ও মালদহ ছাড়া বাকি জেলাগুলিতে চর এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজ প্রায় শেষ। বাকি দু’টি জেলায় কাজ চলছে। মুর্শিদাবাদে নদীর চরে সবথেকে বেশি প্রায় ৬ হাজার জনের বসতি আছে।
চর এলাকা ছাড়া রাজ্যের অনেক প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে দক্ষিণ ২৪ পরগণায় এই ধরনের ১৪টি গ্রামে বিদ্যুৎ (Electricity) সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আংশিকভাবে বিদ্যুৎ পৌঁছেছিল জেলার এরকম ৫৯টি গ্রামে এই কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে। গ্রামগুলি সুন্দরবন এলাকার। কোচবিহারের ছিটমহলগুলিতেও বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। সেখানে দারিদ্র্য সীমার নীচের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে সংস্থা। প্রসঙ্গত, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে কয়েক বছর আগে ছিটমহলগুলির হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এরপর ভারতীয় ছিটমহলগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু করা যায়। প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে লম্বা লাইন টেনে নিয়ে যেতে হয়েছে। বণ্টন কোম্পানি সূত্রে জানা গিয়েছে, দার্জিলিং জেলার নকশালবাড়ি ব্লকের রঘুরামের ছাতিন গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে ৪.২ কিমি দীর্ঘ হাইটেনশন ওভারহেড লাইন টানতে হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কেন্দ্রীয় প্রকল্পটিতে রাজ্যের জন্য মোট বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৪২৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৮৪৪ কোটি টাকা। চলতি আর্থিক বছরে খরচ হবে বাকি প্রায় ১৩২৪ কোটি টাকা। মোট খরচের ৪০ শতাংশ বহন করতে হচ্ছে রাজ্যকে।
বণ্টন কোম্পানি সূত্রের খবর, গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ার পর দারিদ্র্য সীমার নীচের মানুষদের বাড়িতে বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী গরিবরা মাশুলেও বিশেষ ছাড় পান। তা সত্ত্বেও আর্থিক কারণে প্রত্যন্ত এলাকায় অনেকে এখনও বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেননি। সবার বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়াটাই এখন সরকারের লক্ষ্য।