বাংলার সাবাই ঘাসের সামগ্রীর জিআই পেতে আবেদন করবে গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ
আর পাঁচটা সাধারণ ঘাস নয়। সাবাই ঘাসের কদর সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই। তখন শুধুমাত্র তৈরি হতো দড়ি। আজ সেই ঘাস দিয়ে হচ্ছে ব্যাগ, টেবিল ট্রে সহ ঘর সাজানোর হরেক সামগ্রী। গ্রামবাংলার রুজিরুটিতে এই হস্তশিল্পের ভূমিকাও নেহাৎ কম নয়। এবার সাবাই ঘাসের সামগ্রীর জন্য জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (জিআই) আদায়ে উদ্যোগী হল রাজ্যের খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ (Grameen Shilpa Parishad)।
বাংলায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সুনাম বিশ্বব্যাপী। বাঁকুড়ার টেরাকোটার ঘোড়া থেকে মেদিনীপুরের মাদুর, কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল থেকে বর্ধমানের ডোকরা। বাংলাতেই ‘গজিয়ে ওঠা’ সাবাই ঘাসও (Sabai Grass Products) আজ শিল্পের আঙিনায় নিজগুণে জায়গা করে নিয়েছে। কয়েক হাজার শিল্পীর রুজিরুটি এই ঘাসকে ঘিরেই আবর্তিত। অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভের পথও দেখাচ্ছে। তাই বিশ্বের দরবারে সাবাই ঘাসকে তুলে ধরতে পর্ষদের এই প্রচেষ্টা।
বাংলার রসগোল্লার কপালে আগেই জুটেছে জিআই (GI) ট্যাগ। এবার সেই তালিকায় সাবাই ঘাসের সামগ্রীকে অন্তর্ভুক্ত করতে যাবতীয় নথি সংগ্রহের কাজ চলছে জোরকদমে। জানা গিয়েছে, সেই কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে। দিন কয়েকের মধ্যেই জিআই ট্যাগের জন্য আবেদন জানানো হবে। পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদের চেয়ারম্যান গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, ‘বৃহত্তর অংশের মানুষের কাছে পৌঁছনোই আমাদের লক্ষ্য।’ সিইও মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘খাদির মসলিনের জন্য জিআই ট্যাগের আবেদন আগে জানানো হয়েছে। সেটি পর্যালোচনার মধ্যে রয়েছে। এবার সাবাই ঘাসের সামগ্রীর জন্য জিআই ট্যাগের আবেদন জানানো হচ্ছে।’
পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে সাবাই ঘাস সবথেকে বেশি পাওয়া যায়। এই ঘাস থেকে তৈরি হচ্ছে দড়ি, কারুকাজ করা বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, টেবিল ট্রে, পেন স্ট্যান্ড, পোস্টার ম্যাট, ডাস্টবিন, কন্টেনার, পাপোশ সহ একাধিক সৌন্দর্যায়নের সামগ্রী। আরামদায়ক বিছানা তৈরিতেও এই ঘাস ব্যবহার করা হচ্ছে। খাদি ও হস্তশিল্পের বিভিন্ন মেলাতে সাবাই ঘাসের সামগ্রীর চাহিদাও বেশ ভালো।
জিআই ট্যাগ পেতে অধ্যাপক দিব্যেন্দুবিকাশ দত্ত যাবতীয় নথি সংগ্রহের কাজ করছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘বাংলার সাবাই ঘাসের ইতিহাস সুদীর্ঘ। প্রামাণ্য তথ্য অনুসন্ধান করে দেখা গিয়েছে ব্রিটিশ আমলে পেপার পাল্ক, দড়ি তৈরি হয়েছে এই ঘাস থেকে। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে এই ঘাসের ব্যবহার বহুবিধ। সবচেয়ে বড় কথা, এটি পরিবেশবান্ধব। ফলে বিশ্বব্যাপী যাতে সমাদৃত হয়, তাই জিআই ট্যাগের জন্য আবেদন জানানো হবে।’ এর জন্য প্রায় ২০০ পাতার ছবি সহ তথ্য সমৃদ্ধ নথিপত্র তৈরি করা হয়েছে। তা দিন কয়েকের মধ্যে চেন্নাইতে পাঠানো হচ্ছে। স্বীকৃতি পাওয়া গেলে অর্থনৈতিক দিক থেকে শিল্পীরা আরও লাভবান হবেন এবং সাবাই ঘাসের পরিচিতি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন দিবেন্দুবাবু।