রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

দলবদলু নেতাদের নিয়ে বিজেপিতে অসন্তোষ

January 12, 2021 | 2 min read

পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ভগবানপুর, নন্দীগ্রাম সহ বিভিন্ন জায়গায় দলবদলু নেতাদের নিয়ে বিজেপির অন্দরে জোর খেয়োখেয়ি শুরু হয়েছে। একসময় হামলা, বাড়ি ভাঙচুর, ঘরছাড়া এবং জরিমানা আদায়ে জড়িত নেতাদের দলে অন্তর্ভুক্তি কোনওভাবেই কর্মীরা মানতে রাজি নন বলে ভগবানপুর-২ব্লকের বিজেপি নেতারা সরব হয়েছেন। শুধু ভগবানপুর নয়, একই রোষ ছড়িয়ে পড়েছে নন্দীগ্রাম (Nandigram), খেজুরি বিধানসভা এলাকাতেও। যেকারণে ভোটের মুখে অস্বস্তি বাড়ছে গেরুয়া শিবিরে। ভোট যত এগিয়ে আসবে, আদি বিজেপি এবং নব্য বিজেপির এই সংঘাত তত বাড়বে বলে অনেকেই মনে করছেন।

কট্টর অনুগামী হিসেবে পরিচিত ভগবানপুর-২ব্লক তৃণমূল (Trinamool) সভাপতি মানব পড়ুয়া এবং নন্দীগ্রাম-১ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাদ পালকে সরিয়ে দেয় নেতৃত্ব। পদ খোয়ালেও অনুগামীর খোলস থেকে দু’জনের কেউই বের হননি। গত ৮জানুয়ারি নন্দীগ্রামে মহাযোগদান মেলায় তাঁরা উভয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। মানববাবু জেলা পরিষদ সদস্য। তাঁর সঙ্গে ভগবানপুর-২ব্লকের বাসুদেববেড়িয়া অঞ্চল যুব তৃণমূল সভাপতি মহাদেব মাইতিও বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। মানববাবু এবং মহাদেব মাইতিদের নিয়ে ভগবানপুর-২ব্লকের বিজেপির ঘরে জোর অশান্তি লেগেছে। গত ৯জানুয়ারি স্থানীয় এক বিজেপি নেতা মানববাবুর সঙ্গে গোপনে দেখা করায় ওই দিন মুগবেড়িয়ায় কর্মীরা সেই নেতাকে হেনস্তা করেন বলে অভিযোগ। তাতে সতর্ক হয়ে গিয়েছেন আদি বিজেপি নেতারা। ওই ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় ধারাবাহিক রাজনৈতিক হানাহানি চলছে। এনিয়ে মানব পড়ুয়া এবং তার সহযোগী মহাদেবের বিরুদ্ধে গোড়া থেকেই অভিযোগ ছিল বিজেপির। ঘটনাচক্রে তাঁরা শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর ভগবানপুর-২ব্লকের আদি বিজেপি কর্মীরা কিছুতেই মানতে পারছেন না।

এব্যাপারে বিজেপির ভগবানপুর-২ পূর্ব মণ্ডলের সভাপতি মৌলেন্দুবিকাশ ভুঁইঞা বলেন, আমি এই বিষয়টা নিয়ে প্রচণ্ড চাপে আছি। উপরে অনেককিছু করা যায়। কিন্তু, গ্রাউন্ড লেভেলটা অত সহজ নয়। দলের ওই মণ্ডল কমিটির সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ মাইতি বলেন, মানববাবুর দলে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আমরা কিছুই জানি না। তাঁকে দলে নেওয়ার ক্ষেত্রে দলের কর্মীরাই শেষকথা বলবেন।

নন্দীগ্রামে একঝাঁক নেতা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে (BJP) যোগ দিয়েছেন। সেই তালিকায় পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান এবং সাংগঠনিক নেতারা রয়েছেন। ওই নেতাদের বিরুদ্ধেও নন্দীগ্রামে আদি বিজেপি কর্মীদের মধ্যে বিদ্রোহের চোরাস্রোত বইছে। এই অবস্থায় কোন নেতার বিরুদ্ধে কী ধরনের অভিযোগ, তা নিয়ে পার্টি কর্মীদের কাছ থেকে মতামত সংগ্রহে নেমেছে বিজেপি। সেই তালিকা জেলা নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জি জানানো হবে। বিজেপির নন্দীগ্রাম-২ দক্ষিণ মণ্ডলের সহ সভাপতি নিশীথবরণ দাস বলেন, দলবদল করে যাঁরা আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের অনেকেই সামাজিক উন্নয়নের টাকা নয়ছয় করেছেন। অনেকে আমাদের নিচুস্তরের কর্মীদের উপর শারীরিক নির্যাতন করেছেন। তাই নিচুতলায় ক্ষোভ থাকাটা স্বাভাবিক। এই অবস্থায় নানা অভিযোগে দুষ্ট নেতাদের নিয়ে আমরা ‘চার্জশিট’ বানাচ্ছি। সেই চার্জশিট জেলা নেতাদের হাতে তুলে দিয়ে কর্মীদের ক্ষোভের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করা হবে।

খেজুরিতে ক্ষোভ আরও বেশি। গত লোকসভা ভোটের সময় থেকে খেজুরিতে (Khejuri) বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে এলাকা দখলের লড়াই চলছে। একাধিক খুন, জখমের ঘটনা ঘটেছে। সিপিএমের একটা বড় অংশ জার্সি বদলে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এখন তাঁদের পক্ষে তৃণমূল নেতাদের গেরুয়া শিবিরে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে তীব্র আপত্তি তোলা হয়েছে। যেকারণে ৮জানুয়ারি নন্দীগ্রামে ‘মহাযোগদান মেলা’য় চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। খেজুরির কয়েকজন নেতাকে ঘিরেই ঢিল মারা ও চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ির ঘটনা ঘটেছিল। খেজুরিতে এখন গেরুয়া শিবিরেই গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Nandigram, #bjp

আরো দেখুন