শ্যামল মিত্র: কীভাবে হয়ে উঠেছিলেন অবিস্মরণীয় গায়ক
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাংলা ছবির স্বর্ণযুগের অন্যতম মাইলস্টোন শ্যামল মিত্র। তাঁর গলায় সৃষ্টি হয়েছিল একের পর এক অবিস্মরণীয় গান। একটা সময় শ্যামল মিত্রের রেকর্ড বাজারে ছিল হট কেক। তাঁর জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানারকম গপ্প।
শ্যামল মিত্র বলছিলেন তাঁর জীবনের গল্প। আর গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার একটা দিস্তা খাতায় সেই জীবনের গল্প লিখে চলেছিলেন। কী সেই জীবন? আসলে শ্যামল মিত্রর বাবা ছিলেন রাশভারী ডাক্তার। চাইতেন ছেলেও ডাক্তার হোন। কিন্তু শ্যামল মিত্রর চোখে তখন গায়ক হওয়ার স্বপ্ন। তাঁর সেই স্বপ্নকে বাড়িয়ে তুলেছিলেন সলিল চৌধুরি, মৃণাল কান্তি ঘোষ প্রমুখ।
ফলে একদিন দারুণ রেগে গিয়ে শ্যামল মিত্রর বাবা বললেন, গান গাইতে হলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও। শ্যামল মিত্র নৈহাটির বাড়ি ছেড়ে চলে এলেন কলকাতায়। একটা মেসে থাকতেন, বঙ্গবাসী কলেজে পড়তেন আর সুধীরলাল চক্রবর্তীর কাছে গান শিখতেন।পরে তাঁর জীবনেরই এই অংশটা ভরে দেওয়া হয়েছিল ‘দেয়া নেয়া’ ছবিতে।
সেই সময়ে মনে করা হত উত্তমকুমারের লিপে গান না গাইলে একটা জায়গায় পৌঁছনো যেত না। কিন্তু উত্তমকুমারের লিপে তখন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জয়জয়কার। লোকে বলত উত্তমকুমার আর হেমন্তর গলাটা যেন একই। ফলে বেসিক গানে হেমন্ত ও শ্যামল দুজনেই বহু হিট গান দিলেও সিনেমার গানে সেই জায়গাটা পাচ্ছিলেন না শ্যামল মিত্র। হেমন্তর অনুপস্থিতিতে গেয়েছিলেন ‘সাগরিকা’ ছবিতে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত উত্তমকুমার আর হেমন্ত জুটিতে ফাটল ধরল। সেটা ‘বিশ সাল বাদ’ সিনেমা নিয়ে। এই ছবি প্রযোজনা করছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ঠিক ছিল মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করবেন উত্তমকুমার। কিন্তু উত্তমকুমার ডেট দিতে পারছিলেন না বলে তাঁর জায়গায় চলে আসেন বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এখানেই একটা ফাটল তৈরি হল উত্তমকুমার ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মধ্যে। এইভাবেই উত্তমকুমারের লিপে চলে এল শ্যামল মিত্রর গান।
এমনিতে উত্তমকুমার এবং শ্যামল মিত্র ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সিনেমায় দুই বন্ধুর যুগলবন্দীও কম আকর্ষণীয় নয়। ১৯৬২ থেকে প্রায় ১৯৭২ পর্যন্ত সিনেমায় উত্তমকুমারের লিপে বহু গান ছিল শ্যামল মিত্রর। এইভাবেই একদিকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও অন্যদিকে মান্না দে-র গানের মাঝখানে বাংলা সিনেমায় চলে এল শ্যামল মিত্রর গান আর উত্তমকুমারের লিপ। বাংলা ছবির দর্শকদের কাছে উত্তমকুমারের লিপে স্মরণীয় হয়ে থাকল শ্যামল মিত্রর গানও।