সিংঘু যাচ্ছেন সিঙ্গুরের ১০০ কৃষক, শোনাবেন জমি আন্দোলনের কাহিনী
সিঙ্গুরের লড়াইয়ের কাহিনি শুনবে সিংঘু। কেন্দ্রীয় কৃষি আইন রদের দাবিতে কৃষক আন্দোলন (Farmers Protest) চলছে। সেই সংগ্রামী কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ের বার্তা দিতে সিংঘু যাচ্ছে সিঙ্গুরের ১০০ জন কৃষক। সিঙ্গুরের চাষজমি ‘দখল’ করে শিল্প গড়ার উদ্যোগ শুরু করেছিল বাংলার তদানীন্তন সরকার। রুখে দাঁড়িয়েছিলেন কৃষকরা। দীর্ঘ আন্দোলনের পর ‘দখল’মুক্ত হয়েছিল কৃষিজমি। বাংলার সেই আন্দোলন নড়িয়ে দিয়েছিল দেশকে। সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটির উদ্যোগে সেই আন্দোলনের কথা শোনাতে এবং কৃষক আন্দোলনের পাশে দাঁড়াতে সিংঘু পাড়ি দিচ্ছেন কৃষকরা। জমিরক্ষা কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৫ জানুয়ারির পর দিল্লি যাওয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে।
সিঙ্গুরের কৃষিজমি রক্ষা কমিটির অন্যতম কর্তা মহাদেব দাস বলেন, কৃষকদের প্রাণে মারতে কেন্দ্রের তৈরি বিলের বিরোধিতায় সিংঘুতে যে আন্দোলন চলছে, তাকে সমর্থন জানাতে যাব আমরা। জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে আমাদের যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। নানা কারণে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিঙ্গুরের আন্দোলনের (Singur Movement) ইতিহাস সকলেরই জানা। সেকথাই আমরা আন্দোলনরত কৃষকদের বলব, শোনাব আমাদের অভিজ্ঞতা। আমাদের সঙ্গে সিঙ্গুরের প্রবীণ বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যও (RabindraNath Bhattacharya) যাবেন বলে জানিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য বলেন, দেশের কৃষকদের পথে বসাতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। বহুজাতিক সংস্থার, খোলা বাজারের পৃষ্ঠপোষকতা করাই এই সরকারের উদ্দেশ্য। যে কৃষকরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের যন্ত্রণা আমরা জানি। কারণ, আমরাও আন্দোলন করেছি।
কেন্দ্রের কৃষি বিল নিয়ে গোটা দেশে ক্ষোভের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। একমাসের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন কৃষকরা। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু মানুষ এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হতে যাচ্ছে সিঙ্গুরের নাম। বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে সিঙ্গুরের পরিচিতি পেয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ও কৃষিজমি রক্ষা কমিটির মরণপণ সংগ্রামের হাত ধরে। সিঙ্গুরের বহু ফসলি জমি ন্যানো কারখানা গড়ার জন্য টাটাদের দিয়ে দেওয়ায় যে আন্দোলন করেছিলেন কৃষকরা, তা দেশের সার্বিক আন্দোলনের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। সেই সিঙ্গুরের কৃষকরা এবার সিংঘুতে কৃষক আন্দোলনে সহমর্মিতা জানাতে পাড়ি দেবেন দিল্লিতে।
সিঙ্গুরের কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সবটাই ছিল তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণে। এখনও তাই আছে। তবে তাঁদের কিছু স্বতন্ত্র কর্মসূচিও ছিল। সম্প্রতি কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সদস্যরা কেন্দ্রীয় কৃষি বিল ও তা নিয়ে দেশজোড়া আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বৈঠক করে। সেই বৈঠকে সংগঠনের সভাপতি তথা সিঙ্গুরের তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যও ছিলেন। সেখানেই কেন্দ্রবিরোধী কৃষক আন্দোলনে পাশে থাকার বার্তা নিয়ে সিংঘু যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ইতিমধ্যেই ১০০ জন কৃষকের নামের তালিকা তৈরি। তাঁদের যাতায়াতের ভাড়াও জোগাড় হয়ে গিয়েছে।
সিঙ্গুরের কৃষকদের সিংঘুতে যাওয়াকে রাজনৈতিকভাবেই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সম্প্রতি কৃষি বিল (Farm Bills) নিয়ে কৃষকদের বোঝানোর কৌশল নিয়েছে বিজেপি। নানাভাবে বাংলার কৃষকদের মন জয়ের চেষ্টা চলছে।