বাংলার বাসন্তী পুজোর ইতিহাস
দুর্গা পুজো বাংলার প্রধান অনুষ্ঠান। জাতিধর্ম নির্বিশেষে এই অনুষ্ঠানে মাতে সবাই। কথিত আছে বাংলায় এই দুর্গা পুজোর প্রচলন করেন রাজা সুরথ। মেধা মুনির থেকে তিনি এবং বৈশ্য সমাধি মেধাসাশ্রমে দীক্ষা নিয়ে গোটা বিশ্বে দুর্গা পুজোর প্রবর্তন করেন।
রাজা সুরথ চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষে প্রথম দুর্গা পুজো শুরু করেন বলে এই পূজা বাসন্তী পুজো নামে পরিচিত হয়। দেবী দুর্গার প্রথম পুজোরী হিসাবে চন্ডীতে রাজা সুরথের উল্লেখ রয়েছে।
ক্ষত্রিয় বংশের রাজা সুরথের সুশাসক ও যোদ্ধা হিসেবে বেশ সুখ্যাতি ছিল। কোন যুদ্ধে তিনি কখনো হারেননি। কিন্তু প্রতিবেশী রাজ্য যবন একদিন তাঁকে আক্রমণ করে এবং সুরথ পরাজিত হন। আর এই সুযোগ নিয়ে তাঁর সভাসদরা তাঁর ধনসম্পত্তি লুট করে। কাছের মানুষদের এরকম আচরনে স্তম্ভিত হয়ে যান রাজা। সর্বহারা হয়ে বনে ঘুরতে ঘুরতে তিনি মেধাসাশ্রমে যান।
ঋষি তাঁকে সেখানেই থাকতে বলেন, কিন্তু সেখানে থেকেও রাজা সবসময় অস্থির থাকতেন। সবসময় রাজ্য, প্রজাদের নিয়ে দুশ্চিন্তা করতেন। এরকমই একদিন তাঁর সমাধির সাথে দেখা হয়ে যায়। তিনি জানতে পারেন সমাধিকেও তাঁর স্ত্রী এবং ছেলে সম্পত্তির দখল নিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তবুও তিনি বৌ-ছেলের ভালো মন্দ এখনো ভেবে চলেছেন।
তাঁরা দুজনেই তখন ভাবলেন যারা তাদের সর্বহারা করেছে তাদের শুভচিন্তাই আজও তারা করে চলেছেন। তারা ঋষিকে একথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন সবই মহামায়ার ইচ্ছা। এরপর ঋষি মহামায়ার কাহিনী বর্ণনা করেন। ঋষির উপদেশেই রাজা কঠিন তপস্যা শুরু করেন।
পরবর্তীকালে মহামায়ার উদ্দেশ্যেই বসন্ত কালের শুক্ল পক্ষে রাজা পুজো শুরু করেন। এই পুজো এখন কয়েকটি বনেদি বাড়িতেই হয়।
অন্যদিকে কৃত্তিবাসীয় রামায়ণে বলা হয়েছ শ্রী রামচন্দ্র রাবণকে হারিয়ে সীতাকে উদ্ধার করতে শরৎকালে মহামায়ার অর্চনা করেছিলেন। সেই পুজোই এখন গোটা বিশ্বে প্রসিদ্ধ বাংলার দুর্গা পুজো। এই পুজোটি অকালে হয়েছিল বলে একে অকাল বোধন বলা হয়।