‘অন্তত ২২০টা আসন আমরা পাবোই’ – এক্সক্লুসিভ অনুব্রত মন্ডল
অনুব্রত মন্ডল। যাঁর নাম শুনলে বীরভূমে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খায় বলে প্রবাদ। বিভিন্ন সময়ে নানা উক্তির জন্য সংবাদ শিরোনামে এসেছেন তিনি। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে দৃষ্টিভঙ্গির মুখোমুখি হলেন ‘কেষ্টদা’।
প্রশ্নঃ ২০২১ এর নির্বাচন আসন্ন। খুব স্বাভাবিকভাবেই চারিদিকে ভোটের হাওয়া, হাওয়া গরম। কী মনে হচ্ছে? বীরভূমের ১১টার ১১টা আসনে কি ঘাসফুল ফুটবে না কি?
অনুব্রত: বীরভূম জেলার ১১টা আসন আমার দায়িত্ব আছে। প্লাস বর্ধমানের তিনটে, মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম, আউশগ্রাম। ১৪টা সিটেই আমি জিতবো।
প্রশ্নঃ এতটা আত্মবিশ্বাস?
অনুব্রত: কেন আত্মবিশ্বাসের ব্যাপার তো নেই। পশ্চিম বাংলাতে ২২০ থেকে ২৩০টা আসন পাবো। ১৬তে বলেছিলাম ২১০ থেকে ২২০, ২১১ হয়েছিল। কেন হবে না?
বিজেপির লোকরা এখানে আসছে বাইরে থেকে, তারা বাংলার সংস্কৃতি জানে না, বাংলার সম্বন্ধে জানে না। যা খুশি তাই বলে দিচ্ছে, তাতে তো লাভ হবে না। আর মমতা ব্যানার্জির এই উন্নয়নকে মানুষ ভুলে যাবে? চৌত্রিশ বছর মানুষ কষ্ট পেয়েছে, ৭০ বছরের কংগ্রেসে কষ্ট পেয়েছে, তারপর যদি মানুষ আবার মমতা ব্যানার্জিকে হারায়? অন্য রাজ্যে তো আছে বিজেপি। সেখানে কী করতে পেরেছে? সেখানে কন্যাশ্রী আছে? সেখানে যুবশ্রী আছে? সেখানে রূপশ্রী আছে? সেখানে খাদ্যসাথী আছে? সেখানে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে? জয় বাংলা আছে? জয় জহর আছে? দুয়ারে সরকার আছে?
প্রশ্নঃ এতকিছুর পরেও যে লোকজন বলছে বিজেপি আসতে পারে এবার, বিজেপি আসতে পারে
অনুব্রত: এটা একমাত্র তারাই বলছে যারা বিজেপির নেতা। কোনও সাধারণ কর্মী কিন্তু একথাটা বলছে না। আর সাধারণ কর্মীরা বলবেও না। কেননা সাধারণ কর্মী জানে যে নরেন্দ্র মোদী কি মাইক ধরে বলবে যে ৬৯টা প্রকল্প আমরা এলেও রাখবো? আগে এটা বলুক যে ৬৯টা প্রকল্প রাখবো কিনা? এটা যদি নরেন্দ্র মোদী বলতে পারবে, তারপর এনআরসি। এখনও পর্যন্ত বলতে পারলো না যে না এনআরসি আমি আর করবো না। পারছে বলতে? পারছে না।
প্রশ্নঃ অমিত শাহের যে এই যে সভা হল, তাতে এতো লোক গেলো, কী বলবেন আপনি?
অনুব্রত: কোথায় লোক? আসানসোল কি বীরভূম জেলা? পান্ডবেশ্বর কি বীরভূম জেলা? বাঁকুড়া কি বীরভূম জেলা? পুরুলিয়া কি বীরভূম জেলা? ঝাড়খণ্ড কি বীরভূম জেলা? মুর্শিদাবাদ কি বীরভূম জেলা? কাটোয়া কি বীরভূম জেলা?
আর আমি বোলপুর সাবডিভিশনের লোকে ৪ লাখ লোকে ভরিয়ে দিয়েছিলাম। এছাড়াও সিউড়ি, রামপুরহাট ব্লক থেকে যারা এসছিল, সেটা নয় নয় করে ২ লক্ষ লোক। ৬ লক্ষ লোক হয়েছিল। ৬ লক্ষের মধ্যে সাড়ে ৪ লক্ষ মানুষ ভেতরে ঢুকতে পেরেছিল, বাইরে অনেকে থেকে গেছে।
প্রশ্নঃ রাজ্যে কটা আসন তৃণমূল কংগ্রেসের হতে পারে? বিজেপিই বা কটা পেতে পারে?
অনুব্রত: রাজ্যে আমি তোমাকে পরিষ্কার বলছি, তৃণমূল কংগ্রেস ২২০টা আসন পাবেই। কেউ রুকনেওয়ালা নেই। তুমি মিলিয়ে নেবে আমার কথাটা। আমাকে এই কথা ১৬-তে এবিপি আনন্দও বলেছিল, যে এটা একটা গল্প হচ্ছে না, এটা একটা অবাক কাণ্ড করা হচ্ছে না যে সবাই যেখানে ভয় পাচ্ছে সেখানে আপনি এই কথা বলছেন? তাদের কোনও আইডিয়া নেই। আবার বলে রাখছি আমি ২২০টা আসন পাবো।
প্রশ্নঃ এই যে আপনি কঙ্কালিতলায় যজ্ঞ করলেন, এতো ঘি, কাঠ সব দিয়ে
অনুব্রত: এ তো আমি বরাবরই করি।
প্রশ্নঃ এটা কি কোথাও আত্মবিশ্বাসের …
অনুব্রত: না না না। আমি বাড়িতেও করিছি। শান্তি যজ্ঞ, বিরাট যজ্ঞ করেছি, এই ব্রাহ্মণরাই এসেছিলেন। আমি কঙ্কালিতলায় আগেও করেছি। আমাদের মনে আছে কি জানি না, আমি কঙ্কালিতলায় যজ্ঞ করেছিলাম ১৪তে, ১৯শে করেছিলাম। ১৯শে তারাপীঠে করেছিলাম। ১৬তে কঙ্কালিতলায় করেছিলাম।
প্রশ্নঃ বীরভূমে জনসংযোগ এখনও পর্যন্ত কতটা ঠিকঠাক আছে? ফাঁক কি কোথাও রয়ে গেছে?
অনুব্রত: কীসের ফাঁক? কীজন্য ফাঁক? কেন ফাঁক থাকবে? মমতা ব্যানার্জির উন্নয়নের কাছে সবাই হার। আচ্ছা আপনি আমায় একটা কথা বলুন না এই স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডটা নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালে যখন এলেন তখন বললো আমি ২ কোটি করে চাকরি দোবো আর ১৫ লক্ষ করে টাকা দোবো। আর কৃষিদের ঋণ মুকুব করে দোবো, কৃষিদের ভাতা দোবো, সবটাই তো চেঞ্জ হয়ে গেল। কোনটাই তো কিছু করলেন না আর মমতা ব্যানার্জি কী বললেন? যে আমার সাধারণ মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ, আমার দিনমজুর, মধ্যবিত্ত ঘরের ফ্যামিলিরা, মেন তো মধ্যবিত্ত ঘরের ফ্যামিলিদের কি হিন্দু কি মুসলিম কি সব সমাজেরই, তাদের তো কষ্টটা বেশি। সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করে দিলেন।
হিসেব করতে পারেন, পাঁচ বছরে যদি কারোর কার্ডের এক বছর পর ৫ লক্ষ টাকা না থাকে, আবার ঢুকিয়ে দেওয়া হবে? পাঁচ বছরে সে ২৫ লক্ষ টাকা পাবে। আজকে তো আমি বলছি না। ভেলোরে যারা দেখাতে গিয়েছিল মোটামুটি আড়াই থেকে তিন হাজার, ওখানকার চেয়ারম্যান বলেছে, আমরা যত কার্ডে দেখছি সব কার্ডেই ৫ লাখ টাকা করে ঢুকে আছে। এ তো আমার কথা নয়, এ তো মানুষের কথা।
প্রশ্নঃ আপনি মানুষের কথা বলছেন, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের কথা বলছেন। আমরা দেখেছি যে রাজ্যে বিরোধীতা চলছে। দিলীপ ঘোষ বিভিন্ন কথা বলছেন। দিলীপ ঘোষের পরিবারের লোকজনও স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করিয়েছে। কী বলবেন?
অনুব্রত: ছোট করলাম না। দিলীপ ঘোষের পরিবারের সবাই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়েছেন এবং ওনাকে নাকী প্রশ্নও করা হয়েছিল যে কেন এই কার্ডটা নিচ্ছেন? বলেছেন, এটা তো মমতা ব্যানার্জি দুর্দান্ত কাজ করেছেন। কেন নোবো না? এখনও তো বিজেপি কিছু দিতে পারে নাই। ওনারই তো খুড়তুতো কাকা বলেছেন। ওপেন বলেছে। ওরা দিয়েছে কী? ২ কোটি করে চাকরি কোথায়? ১৫ লক্ষ করে টাকা কোথায়?
তাও তো মমতা ব্যানার্জি আজ আমাদের এই করোনা ভাইরাসে যে লকডাউন ছিল, আজকে আমরা না খেয়ে মরে যেতাম সাধারণ মানুষ, গরীব মানুষ, সব শ্রেণির মানুষ, মজুর, খেটে খাওয়া মানুষ, দিনমজুর সবাই আজকে মমতা ব্যানার্জি চাল দিয়েছে বলে বেঁচে গেছে। তিনমাস চাল দিয়ে ব্যাক করলো। মমতা ব্যানার্জি বললো না, আমার জুন মাস পর্যন্ত থাকবে। মমতা ব্যানার্জি ব্যতিক্রম। আজকে বলুন না স্বাস্থ্য কার্ডে আপনি দেখবেন বিশ্বের বুকে মমতা ব্যানার্জি ফার্স্ট হবে। মিলিয়ে নেবেন আমার কথাটা। আজ বলে রাখছি।
প্রশ্নঃ বাংলার গর্ব বিশ্বভারতীতে পাঁচিল বিতর্ক, হোর্ডিং- এ বানান বিতর্ক থেকে শুরু করে সরণি উদ্বোধন থেকে শুরু করে, বিরভূম জেলার সভাপতি হিসেবে কি বলবেন?
অনুব্রত: বিশ্বভারতীর যিনি ভিসি এসেছেন, এরকম পাগল ভিসি এর আগে কখনো আসেননি। সম্পূর্ণ মানসিক রোগী। উনি কখন কি করেন জানেন না। বলে দিলেন, রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর বহিরাগত। আবার কেউ কেউ বলছে রবীন্দ্র নাথের জন্ম বোলপুরে। একি বলা যায়! রবীন্দ্র নাথ সম্মন্ধে জানে না। বাংলার ঐতিহ্য জানে না, বাংলার ভাষা সম্মন্ধে জানে না। কাল বিজেপির একজন নেতা এলেন, তিনি বললেন, উনিশে তৃণমূল হাফ হয়ে গেছে, একুশে বিজেপি সাফ হয়ে যাবে।
প্রশ্নঃ এতো উন্নয়ন হয়েছে বলছেন, তাও দলের বেশ কিছু নেতা সাংসদদের আটকে রাখা গেল না কেন?
অনুব্রত: তৃণমূল দলে নেতাদের কোন দাম নেই। এখানে কর্মীদের দাম দেওয়া হয়। আমি অনুব্রত মন্ডল কর্মী না থাকলে কিসের নেতা? দুপয়সার দাম নেই। তৃণমূল দলে কর্মীরাই শেষ কথা বলে। কর্মীরা মমতা ব্যানার্জীকে দেখে দল করেন। কে গেল কে এলো তাতে কি এসে যায়। হাওড়া স্টেশনে গেলেও দেখবেন ট্রেন আসছে আর যাচ্ছে। হাজার হাজার লোক উঠছে আর নেমে যাচ্ছে।
প্রশ্নঃ আপনি এতো দিন ধরে জেলার দায়িত্ব পালন করে এসেছেন, কখনো মন্ত্রী হতে ইচ্ছে করেনি? এবার ভোটে দাঁড়াবেন?
অনুব্রত: না। ভোটে দাঁড়িয়ে কি হবে? মন্ত্রীদের দেখুন না এতো খাওয়া দাওয়া, এতো পড়াশোনা। তারপর দেখুন না কি রেজাল্ট? একদম জিরো। কখনো বলছে ভাত ভালো লাগে না, কখনো বলছে রান্না ভালো হয়নি। না! এই বাড়িতে আর থাকব না, অন্য বাড়িতে যাই।
প্রশ্নঃ আপনার সেরকম কোন পরিকল্পনা নেই?
অনুব্রত: না। দরকার নেই। কর্মী আছি, কর্মী হয়েই থাকতে চাই।
প্রশ্নঃ চরাম চরাম, পাঁচন, গুড় বাতাসা এগুলো তো অতীত। এবার কেষ্ট দার ভোকাল টনিক কি?
অনুব্রত: একটা গ্রাম্য ভাষা আছে। বিজেপিকে ঠেঙিয়ে পগার পার করে দেব। চ্যালেঞ্জ করলাম।