ফোবিয়া – আক্রান্ত যখন সামাজিক জীবন

জানেন কি এই মানসিক রোগেরও আছে বহু রকমফের। এক এক মানুষ সারা জীবন ধরে বয়ে বেড়াচ্ছেন এক এক রকমের আতঙ্কের বোঝা! কেউ আবার একাধিক।

January 20, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

ফোবিয়া কথাটির সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত হলেও তার গুরুত্ব বুঝি কতোটুকু! এই রোগে আক্রান্ত কোন মানুষের সাত পাঁচ না ভেবেই আমরা বিচার করে ফেলি। ‘নাটুকে’, ‘ন্যাকা’ এসব কতো আক্ষাই তো দিই। কিন্তু জানেন কি এই মানসিক রোগেরও আছে বহু রকমফের। এক এক মানুষ সারা জীবন ধরে বয়ে বেড়াচ্ছেন এক এক রকমের আতঙ্কের বোঝা! কেউ আবার একাধিক। 

জেনে নিন সেগুলো কী কীঃ 

ক্লস্ট্রোফোবিয়াঃ বদ্ধ বা ছোট জায়গা নিয়ে আতঙ্ক

সীমাবদ্ধতা বা দমবন্ধ হবার ভয় থেকে এই ফোবিয়ার সূত্রপাত ঘটে। এই ফোবিয়াটি নিয়ে বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞগণ বহু গবেষণা করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, শতকরা মাত্র ২ ভাগ ভুক্তভোগীই এর চিকিৎসার শরণাপন্ন হন। ক্লস্ট্রোফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি লিফটে চড়তে ভয় পান, গাড়ির জানালা বন্ধ করতে চান না, সুড়ঙ্গ বা গুহার সম্পর্কে তার মধ্যে চূড়ান্ত ভীতি কাজ করে। এজন্য মাঝে মাঝে সহজ রাস্তা বাদ দিয়ে সময়বহুল পথও বেছে নেন এই ক্লস্ট্রোফোবিকরা।

এস্ট্রাফোবিয়াঃ বজ্রপাত ও বিদ্যুৎ চমকানো নিয়ে আতঙ্ক

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই ঝড়-তুফান, বজ্রপাত, বিদ্যুৎ চমকানো খুব সাধারণ ঘটনা হিসেবে নেয়া হয়। কিন্তু একজন এস্ট্রাফোবিক, তিনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, তার কাছে এগুলো অনেক বেশি ভীতিকর এবং এ থেকে তার উভয় প্রকার শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা হতে পারে। বাচ্চাদের মধ্যে এ আতঙ্কটি বেশি দেখা যায়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক স্তরেও এ আতঙ্ক সমান প্রভাব বিস্তার করে। 

সাইনোফোবিয়াঃ কুকুর নিয়ে আতঙ্ক

অনেকেই আদর করে কুকুর পোষেন। কুকুর দেখলে মনে মায়া কাজ করে এমন মানুষ যেমন আছেন, তেমনি আরেক দলও আছেন, কুকুর দেখলেই আতঙ্কে যাদের গায়ের লোম প্রায় খাড়া হয়ে যায়! এই আতঙ্কটিই ‘সাইনোফোবিয়া’। দেখা গেছে, যারা কুকুর খুব ভয় পান, তাদের অধিকাংশই বেড়ালেও ভয় পান এবং শতকরা ৭৫ ভাগ সাইনোফোবিকই হচ্ছেন নারী। জুফোবিয়ার (পশুপাখি নিয়ে আতঙ্ক) মধ্যে অন্যতম হলো এই সাইনোফোবিয়া। 

এগোরাফোবিয়াঃ খোলামেলা স্থান, মানুষ আর ভীড়ে যে আতঙ্ক    

সামাজিক পরিবেশে বা ভিড়বাট্টা আছে এমন স্থানে যেতে অস্বস্তি বোধ করেন এগোরাফোবিকরা। মানুষজন বেশি আছে এমন পরিবেশ থেকে দ্রুত পালাতে চান তারা। এগোরাফোবিকরা নতুন সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলা, মানুষজনের সাথে প্রসারিত অর্থে মেলামেশা করাকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলেন। এরা ভদ্রতার লেহাজ ততক্ষণ পর্যন্তই রক্ষা করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এই ফোবিয়াটি সহনীয় স্তরে থাকে।

ফোবিয়াটি ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং একসময় ভদ্রতা বা সামাজিক সৌজন্যের সীমানাটুকুও মেনে চলা কঠিন হয়ে যায়। এতে করে তারা দিনে দিনে একঘরে ও হতাশ হয়ে পড়েন, আশেপাশের ঘটনা সম্পর্কে কৌতূহল ও সচেতনতা উভয়েই কমতে থাকে। নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে রাখতে স্বস্তি বোধ করেন এগোরাফোবিকরা। এই আচরণের পক্ষে নিজস্ব কিছু যুক্তিও দাঁড় করিয়ে ফেলেন তারা!

এক্রোফোবিয়াঃ উচ্চতাভীতি

অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের মধ্যেই এই ফোবিয়াটি দেখা যায়। এরোফোবিয়ার সাথেও এর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। উঁচু স্থানে উঠলে, দাঁড়িয়ে থাকলে, এমনকি উঁচু স্থানে অবস্থান না করলেও উঁচু থেকে পরে যাবার যে ভয়, তাকেই বিজ্ঞান বলে ‘এক্রোফোবিয়া’। শুধুমাত্র এই আতঙ্কের কারণেই অনেকে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামার সময় পড়ে যান। প্রতি ২০ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে ১ জন এই ফোবিয়ার শিকার। 

ফোবিয়া বা আতঙ্ক ক্রমেই গ্রাস করে ফেলে ব্যক্তিজীবন, এ আগ্রাসন এর কারণ খুঁজতে গেলে নিজের মধ্যে, আশেপাশের পরিবেশের মধ্যেই তার উত্তর মিলবে; এবং তারপর মিলবে সমাধান। সকল ফোবিয়ার আগ্রাসন থেকে মুক্ত হোক মানবমন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen