ইলিশের স্বাদ অটুট রাখতে নয়া উদ্যোগ রাজ্যের
বাঙালির সঙ্গে ইলিশের সম্পর্ক চিরন্তন। পয়লা বৈশাখ, জামাইষষ্ঠী, বিজয়া দশমী তো আছেই, হাজার মেনুর ভিড়ে বাঙালির পাতে এক টুকরো ইলিশ এখনও ‘অমৃতসমান’। আর তা যদি গঙ্গার ইলিশ হয়, তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু, দিন দিন গঙ্গায় কমছে ইলিশের জোগান। যা উদ্বেগের বিষয়। তাই গঙ্গায় ইলিশের উৎপাদন বাড়িয়ে বাঙালির পাতে রুপোলি স্বাদ অটুট রাখতে নয়া উদ্যোগ নিল বারাকপুরের সিফরি (আইসিআর-সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারি রিসার্চ ইনস্টিটিউট)। আগামী তিন বছর ধরে গঙ্গার বিভিন্ন পয়েন্টে ৩০ হাজার ইলিশের চারা ছাড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সিফরি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ রাজ্যে ফারাক্কা ব্যারাজের ডাউন স্ট্রিমের গঙ্গায় সবচেয়ে বেশি ইলিশ পাওয়া যায়। আট-দশ বছর আগেও ফারাক্কা ব্যারাজের উপরের দিকে অর্থাৎ আপ স্ট্রিমে বিহারের সাহেবগঞ্জ, উত্তর প্রদেশের বারাণসী, এমনকী এলাহাবাদেও প্রচুর ইলিশ উঠত জালে। বর্তমানে এ রাজ্যের গঙ্গায় যেমন ধীরে ধীরে ইলিশ কমে যাচ্ছে, তেমনই আপ স্ট্রিমেও খুব কম সংখ্যক ইলিশের দেখা মিলছে। তাও বিহার পর্যন্ত। উত্তরপ্রদেশের গঙ্গায় আর ইলিশ দেখতে পাওয়া যায় না। এর মূল কারণ, ছোট জাল ব্যবহার করে মৎস্যজীবীরা যথেচ্ছভাবে খোকা ইলিশ ধরে ফেলছে। বড় হওয়ার সুযোগই পায় না রুপোলি শস্য। ফলে, বংশবৃদ্ধিও হয় না।
গঙ্গায় (Ganga) ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে তিন বছরের প্রকল্প হাতে নিয়েছে সিফরি। এর আগে ২০১৮ সালে ছ’মাসের জন্য ইলিশের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল তারা। সেই সময় ফারাক্কা ব্যারাজের ডাউন স্ট্রিম থেকে সাড়ে তিন হাজার ইলিশের চারা সংগ্রহ করে আপ স্ট্রিমে ছাড়া হয়েছিল। তিন বছরের নতুন প্রকল্পটি গত নভেম্বর মাস থেকে শুরু হয়েছে। এক মাসেই ডাউন স্ট্রিম থেকে ছ’হাজার ইলিশের চারা সংগ্রহ করে আপ স্ট্রিমে ছাড়া হয়েছে। নতুন প্রকল্পে বড় ইলিশ ধরে তাদের ব্রিডিং করানো হবে। তারপর ডিমপোনা থেকে উৎপাদিত ইলিশের চারা ১৭০ গ্রাম থেকে ২৫০ গ্রাম ওজনের হলে ছাড়া হবে গঙ্গায়। ওই চারাগুলি ডাউন স্ট্রিম ও আপ স্ট্রিম দু’জায়গাতেই ছাড়া হবে। এ রাজ্য ছাড়াও বিহারের সাহেবগঞ্জ, রাজমহল, উত্তরপ্রদেশের বারাণসী ও এলাহাবাদে চারা ছাড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে সেখানে বংশবৃদ্ধি করতে পারে তারা।
সিফরি সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিমপোনা থেকে প্রথম এক বছরে ইলিশ মাছ মাত্র ২০০-২৫০ গ্রাম ওজনের হয়। ডিমপোনা থেকে এক কেজি ওজনের হতে সময় লাগে এক বছর। দেরিতে বাড়লেও ইলিশ মাছ (HilsaFish) সবচেয়ে বেশি ডিম দেয়। একটি মাছ ৯-৩০ লক্ষ ডিম দেয়। সিফরির দাবি, ৩০ হাজার মাছের মধ্যে পাঁচ শতাংশ মাছও যদি বাঁচে, তাহলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই গঙ্গায় ফের ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মিলবে। আইসিআর-সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ডঃ বসন্তকুমার দাস বলেন, গঙ্গায় ইলিশ কমছে। বাংলার মানুষ তার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, মৎস্যজীবীরাও ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তাই ইলিশকে রক্ষা খুবই প্রয়োজন। সেই কারণে গঙ্গায় ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোরও একটি বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আগামী ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্প চালু থাকবে।