উত্তরবঙ্গে লোকসভার লিড ধরে রাখা নিয়ে সংশয়ে গেরুয়া শিবির
উত্তরবঙ্গে অনেকটাই ঘর গুছিয়ে নিয়েছে ঘাসফুল শিবির। রামে যাওয়া ভোট উদ্ধারে বামফ্রন্টও আদা-জল খেয়ে নেমে পড়েছে ময়দানে।

উত্তরবঙ্গের (North Bengal) বহু বিধানসভা কেন্দ্রে লোকসভা ভোটের লিড ধরে রাখা নিয়ে সংশয়ে পদ্ম শিবির। সম্প্রতি শিলিগুড়ি ও রায়গঞ্জে তাদের যোগদান শিবির কার্যত ফ্লপ হওয়ায় বিজেপির একাংশ এরকমই আশঙ্কা করছে। এই পরিস্থিতি তাদের কাছে সিঁদুরে মেঘের শামিল। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গে অনেকটাই ঘর গুছিয়ে নিয়েছে ঘাসফুল শিবির। রামে যাওয়া ভোট উদ্ধারে বামফ্রন্টও আদা-জল খেয়ে নেমে পড়েছে ময়দানে।
গত লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গের আটটি কেন্দ্রের মধ্যে সাতটিই দখল করেছিল পদ্ম শিবির। প্রাপ্ত ভোটের হিসেবে তারা ৫৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে লিড পায় ৩৭টিতে। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলির মধ্যে শিলিগুড়ি অন্যতম। এখানে গেরুয়া শিবির ৬৫ হাজার ৪৮৬ ভোটে লিড পায়। কয়েকদিন আগে এই শহরেই ‘যোগদান মেলা’ কর্মসূচি করে বিজেপি। তাতে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সহ শীর্ষ নেতারা হাজির ছিলেন। কিন্তু সেই কর্মসূচি কার্যত ফ্লপ হয়। আবার এখানেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক ভট্টাচার্য। কখনও তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসংযোগ করছেন আবার কখনও বুথে বুথে ঝান্ডা লাগানোর পাশাপাশি মিছিল ও পথসভা করছেন। অশোকবাবু জানিয়েছেন, লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের মধ্যে অনেক তফাত আছে। এবারও এই কেন্দ্র বামফ্রন্টের দখলেই থাকবে।
শিলিগুড়ি মহকুমার মধ্যে আরএকটি বিধানসভা কেন্দ্র মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি। এই কেন্দ্রটি কংগ্রেসের দখলে। গত লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে ৯৮ হাজার ৮৯৮ ভোটের লিড পায় বিজেপি। কিন্তু বর্তমানে এখানে সক্রিয় কংগ্রেস ও সিপিএম জোট। ট্রাক্টর মিছিল, সভা, পদযাত্রা সহ তাদের কর্মসূচি অব্যাহত। স্থানীয় বিধায়ক শঙ্কর মালাকার বলেন, এখানে তৃণমূলকে দেখা গেলেও বিজেপিকে দেখা যাচ্ছে না। কাজেই এখানে বিজেপি কিছু করতে পারবে না। লড়াই হবে জোট বনাম তৃণমূলের (Trinamool) । তৃণমূলের ঘাঁটি ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি কেন্দ্রেও লোকসভা ভোটে লিড পায় বিজেপি। সেখানে লিড ছিল প্রায় ৮৬ হাজার ভোটে। গত বিধানসভা ভোটেও এখান থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। বর্তমানে উন্নয়নমূলক কাজকর্ম নিয়ে প্রশাসনিক মিটিং করার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত দলীয়ভাবে মিটিং, মিছিল করছেন। তিনি বলেছেন, এবারও এই কেন্দ্র তৃণমূলের দখলে আসবে। শুধু তাই নয়, গোটা উত্তরবঙ্গেই আমাদের দল ভালো ফল করবে।
শুধু সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলি নয়। কোচবিহার থেকে মালদহ সর্বত্রই প্রায় একই অবস্থা। রবিবার উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে যোগদান মেলা কর্মসূচি করে বিজেপি। সেখানে গেরুয়া শিবিরের হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীরা হাজির থাকলেও উল্লেখযোগ্য কোনও তৃণমূল নেতা যোগ দেননি। কিন্তু সর্বত্র মাটি কামড়ে পড়ে ঘাসফুল শিবির। দুয়ারে সরকার কর্মসূচির পাশাপাশি দলীয়ভাবে বঙ্গধ্বনি যাত্রা, পাড়া বৈঠক, বাড়ি বাড়ি অভিযান, বুথে বুথে ঝান্ডা লাগানো কর্মসূচির মাধ্যমে অনেকটাই চনমনে তৃণমূল শিবির। কংগ্রেস-বামফ্রন্ট জোটের নেতা-কর্মীরাও রয়েছেন ময়দানে।
এই প্রেক্ষাপট নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, আগের থেকে অনেকটাই গোছানো ও ঐক্যবদ্ধ ঘাসফুল শিবির। বিক্ষিপ্ত কয়েকটি জায়গায় গোষ্ঠী কোন্দল থাকলেও সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা বিধানসভা ভোটের ময়দানে ঝাঁপিয়েছেন। তিনজন বিধায়ক দলত্যাগ করার পর উত্তরবঙ্গে তৃণমূলে তেমন ভাঙন ধরাতে পারেনি বিজেপি। লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির (BJP) প্রতি মানুষের আবেগ ছিল। বর্তমানে সেই আবেগ অনেকটাই ফিকে। কাজেই এবার গেরুয়া বাহিনীর কাছে লড়াই অনেকটাই কঠিন। তাদের কাছে অনেক আসনে লোকসভা ভোটের লিড ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ হবে। বিজেপির একাংশ এই সংশয় মেনেও নিয়েছেন। যদিও বিজেপির উত্তরবঙ্গের কনভেনর তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বলেন, সাফ হয়ে যাবে তৃণমূল। ভোটের আচরণবিধি লাগু হওয়ার পর অন্য দল থেকে অনেক বিধায়কই চলে আসবেন বিজেপিতে। লোকসভার মতো বিধানসভা নির্বাচনেও উত্তরবঙ্গে একনম্বর পার্টি হব আমরা।