কেন্দ্রের বঞ্চনায় থমকে সুন্দরবনের রেল প্রকল্প
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) রেলমন্ত্রী (RailMinister) থাকাকালীন সুন্দরবনে (Sundarban) ট্রেন (Train) চালানোর যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাতে জল ঢেলে দিয়েছে কেন্দ্রের মোদি সরকার (Modi Govt)। শুধু স্বপ্ন নয়, তাকে বাস্তব রূপ দিতে ২০১১ সালের আগে রেল বাজেটে (Rail Budget) প্রকল্প পাশ করিয়ে সমীক্ষা পর্যন্ত করিয়েছিলেন তিনি। বরাদ্দ হয়েছিল টাকা, হয়েছিল শিলান্যাসও। তারপর কেন্দ্রের বঞ্চনায় থমকে গিয়েছে সব কিছু।
শিয়ালদহ থেকে ক্যানিং পর্যন্ত গিয়েই থমকে গিয়েছে রেলের চাকা। এই চাকাকেই সুন্দরবনের অন্দরে টেনে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্দেশ্য ছিল, প্রত্যন্ত মানুষের কাছে এই পরিষেবাকে পৌঁছে দেওয়া। একইসঙ্গে পর্যটকদেরও ট্রেনে করে অরণ্যের গহীনে নিয়ে যাওয়া। আখেরে বিকাশ ঘটত পর্যটন শিল্পের।
ক্যানিং থেকে মাতলা পেরিয়ে ভাঙনখালি, সেখান থেকে বাসন্তী হয়ে সোজা যাওয়ার কথা ছিল ঝড়খালি। সব মিলিয়ে ৪২.১৪ কিমি পথ। এর মধ্যে ক্যানিং-ভাঙনখালি অংশ ৪.৮৪ কিমি। এই যাত্রাপথের সমীক্ষার কাজ সারা। মাতলার উপর সেতু নির্মাণের শিলান্যাস হয়েছিল ২০০৯ সালে। ক্যানিং থেকে ডকঘাট পর্যন্ত ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কংক্রিটের বড় বড় ২১টি পিলারও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তারপর মাঝপথে তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ট্রেনে চেপে সরাসরি কলকাতায় আসার স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে সুন্দরবনবাসীর। কলকাতায় আসতে হলে এখন সেখানকার মানুষকে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ক্যানিংয়ে এসে ট্রেন ধরতে হয়, নচেৎ সারাদিনের নাম করে সড়কপথে বেরিয়ে পড়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। এই বঞ্চনার কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের গাফিলতিকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন সুন্দরবনের মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, এর ফলে সুন্দরবনের পর্যটন শিল্প ও আর্থিক পরিকাঠামো অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে।
২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর একের পর এক লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু সেই প্রকল্প এখনও বাস্তব রূপ পায়নি। ভাঙনখালি থেকে বাসন্তীর দূরত্ব ১৪.৩ কিমি। আর বাসন্তী থেকে সুন্দরবনের পর্যটন কেন্দ্র ঝড়খালির ব্যবধান ২৩ কিলোমিটার। সমগ্র রেলপথের জন্য সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। ক্যানিং থেকে ভাঙনখালি এই অংশেই যেটুকু কাজ হওয়ার হয়েছে। ভাঙনখালি থেকে ঝড়খালি পর্যন্ত সমীক্ষার কাজও শেষ। এ নিয়ে দীর্ঘ কয়েক বছর রেলমন্ত্রক থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেশ কয়েকবার দরবার করেছিলেন সুন্দরবন বিষয়ক দপ্তরের প্রাক্তন সদস্য লোকমান মোল্লা। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে লোকসভার তদানীন্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় যখন সুন্দরবন কৃষ্টি মেলায় এসেছিলেন, তখন তাঁর হাতে রেললাইন স্থাপনের জন্য দু’লক্ষ মানুষের সই সহ দাবিপত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল। কেন্দ্র রাজ্য সরকারের উপর দায় চাপিয়ে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, রেলপথ নির্মাণের ব্যাপারে কেন্দ্রের নজর নেই। একাধিকবার আন্দোলন করেও কাজ হয়নি। সাধারণ গরিব মানুষকে গাঁটের কড়ি খরচ করেই যাতায়াত করতে হচ্ছে। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় ট্রেন এলে সমগ্র অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিবেশ পাল্টে যেত। সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল বলেন, সংসদের অধিবেশনে এই দাবির কথা একাধিকবার জানানো হয়েছে। মোদি সরকার কর্ণপাত করছে না। বঞ্চিত হচ্ছেন সুন্দরবনের মানুষ।