শালবনির যে বাড়িতে খেয়েছিলেন অমিত, সেই বিজেপি পরিবারেরও স্বাস্থ্যসাথীতে আস্থা
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁর বাড়িতে এসে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন। শালবনী ব্লকের কর্ণগড় পঞ্চায়েতের বালিজুড়ি গ্রামের সেই বিজেপি কর্মীর পরিবারও এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের (Swasthya Sathi Project) উপর আস্থা রাখলেন। পরিবারের সদস্যরা মাসখানেক আগেই ‘দুয়ারে সরকার’ (Duare Sarkar) কর্মসূচিতে গিয়ে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন। বিজেপির রাজ্য নেতারা বিভিন্ন জনসভায় গিয়ে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করে কোনও লাভ নেই বলে প্রচার করছেন। কিন্তু, রাজ্য নেতাদের সেই কথা যে দলের নিচুতলার কর্মীরা আমল দিচ্ছেন না। এই ঘটনা তারই প্রমাণ।
কর্ণগড় পঞ্চায়েতের প্রধান প্রতাপ জাসু বলেন, সরকারি পরিষেবা এবং উন্নয়নমূলক কাজে তৃণমূল সরকার কখনও দলবাজি করে না। এই ঘটনা তার জ্বলন্ত উদাহরণ। ওঁরা আবেদন করেছিলেন। আমাদের কাছে তাঁদের সকলের কার্ড চলে এসেছে। আগামী ২ ফ্রেব্রুয়ারি ওই পরিবারের হাতে এই কার্ড তুলে দেওয়া হবে।
গত ১৯ ডিসেম্বর বালিজুড়ি গ্রামের বিজেপি কর্মী সনাতন সিংয়ের বাড়িতে আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আসার আগেই দলীয় ওই কর্মীর মাটির বাড়ি সুন্দরভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। সনাতনবাবুর স্ত্রী সরস্বতী সিং নিজের হাতে রান্না করেছিলেন। মাটির বারান্দায় বসিয়ে তিনি পরিপাটি করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে খাইয়েছিলেন। গ্রামের অনেকে আশা করেছিলেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাড়িতে আসায় সনাতনবাবুর ভাগ্য ফিরে যাবে! মন্ত্রী চলে যাওয়ার পর অনেকে বাড়ি বয়ে এসে সেসবের খোঁজও নিয়েছিলেন। কিন্তু, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এসেও সনাতনবাবুর পরিবারের যে কোনও লাভ হয়নি, তা গ্রামের মানুষ এখন বুঝে গিয়েছেন।
ক’দিন আগে গ্রামের আর পাঁচজনের মতোই ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে গিয়ে সনাতনবাবুর পরিবারের সদস্যরা লাইন দিয়ে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। সনাতনবাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তাঁর স্ত্রী সরস্বতী সিং রান্না করছেন। সনাতনবাবু রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। সকালে কাজে বেরিয়ে গিয়েছেন। সরস্বতীদেবী বলেন, পাড়ার অনেকেই স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন। অনেকে কার্ড পেয়েও গিয়েছেন। কেউ কেউ এর সুবিধা পেয়েছেন বলেও জানতে পেরেছি। তাই পরিবারের পাঁচজন সদস্য ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে গিয়ে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য আবেদন জানিয়েছি। তবে, এখনও কার্ড পাইনি।
তৃণমূলের বালিজুড়ি বুথের সভাপতি অমিয় খামরুই বলেন, লোকসভা ভোটের পর এই এলাকায় বিজেপির লোকজন ২২টি বাড়িতে ভাঙচুর করে। সেই তালিকায় আমার বাড়িও রয়েছে। ফলে, এলাকার মানুষ বিজেপির সন্ত্রাস নিজের চোখে দেখেছেন। আর সনাতনের মতো এলাকার বিজেপি কর্মীরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য আবেদন করছেন দেখে আমাদের ভালো লাগছে।
বিজেপির মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি অরূপ দাস বলেন, স্বাস্থ্যসাথী একটি সরকারি প্রকল্প। রাজ্যবাসী হিসেবে যে কেউ এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারেন। সেটা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এই বিষয় নিয়ে কারও রাজনীতি করা উচিত নয়।