দক্ষিণবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

কেন্দ্রের গড়িমসি, লোকো প্রকল্পের স্বপ্নভঙ্গ ডানকুনিতে

January 30, 2021 | 2 min read

যুবকদের জন্য একদা শিল্পের স্বপ্ন বুনেছিলেন তদানীন্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডানকুনিতে ইলেকট্রিক ‌লোকোমোটিভ তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। কিন্তু কোনও এক অদ্ভুত কারণে শিল্পের সেই উদ্যোগ এক ছটাকও এগয়নি। উল্টে বাজেট বরাদ্দ কমেছে প্রতি বছর। বর্তমানে পুষ্টিহীন এক শিশুর মতো কোনওমতে প্রাণ নিয়ে টিকে আছে ডানকুনির ইলেকট্রিক লোকো প্রকল্প। আজও সেখানে ইঞ্জিন ও তার উপকরণ তৈরি হয়নি। কেবল বাইরে থেকে ইঞ্জিন নির্মাণের সামগ্রী এনে তা জুড়ে দেওয়ার কাজ চলে। রেলমন্ত্রীর গদি বদলেছে বারবার। হতশ্রী হয়েছে ডানকুনির (Dankuni) শিল্প সম্ভাবনা। বর্তমানে কর্মী কমিয়ে কোনওমতে ‘জোড়াতালি’ দিয়ে এই প্রকল্প চলছে। ফলে শিল্প, কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা যে বিশ বাঁও জলে, তা সোচ্চারে বলছে রেলকর্মীদের একাংশ।

ইলেকট্রিক লোকো তাও ধুঁকে ধুঁকে চললেও ডিজেল লোকো বন্ধ হয়ে গিয়েছে আগেই। প্রায় চার বছর আগে ডিজেল লোকো তুলে দেওয়া হয়েছে ইলেকট্রিক লোকো কর্তৃপক্ষের হাতে। এখানেও জুটেছে বঞ্চনা। কথা ছিল বারাণসীর মতো ডানকুনিতেও ডিজেল ইঞ্জিন তৈরির সঙ্গে কিছু যন্ত্রাংশ তৈরি করা হবে। সেসব তলিয়ে গিয়েছে পরিকল্পনার অভাবে। শেষ পর্যন্ত আস্ত ইউনিটটাই তুলে দেওয়া হয়েছে। শিল্প, কর্মসংস্থানের যাবতীয় সম্ভাবনাকে গলা টিপে মারা হয়েছে, এমনটাই দাবি করেছে রেলওয়ে মেনস কংগ্রেস। রেলকর্মীদের অন্যতম বৃহৎ এই সংগঠনের সম্পাদক (সংগঠন) বিন্ধ্যাচল তেওয়ারি বলেন, তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার জন্য একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছিলেন। রেলকেন্দ্রিক শিল্প বিকাশের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেই উদ্যোগ নিয়ে রেলদপ্তর ভাবেনি। উল্টে রুগ্ন করে ফেলা হয়েছে ডানকুনির দু’টি ইউনিট। বর্তমানে ইলেকট্রিক লোকো চালু থাকলেও ইঞ্জিন তৈরির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কর্মীসংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। বর্তমান বিজেপি সরকারের কাছে এটাই প্রত্যাশিত ছিল। কেননা, তারা রেলকে পুরোপুরি বেচে দিতে চাইছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ইলেকট্রিক লোকো ইউনিটের এক কর্তা বলেন, চিত্তরঞ্জনের পুরনো ইউনিটেই স্বাধীনভাবে উপাদান তৈরি করে ইঞ্জিন নির্মাণ শিল্প (Industry) হয়নি, সেখানে ডানকুনিতে কীভাবে হবে? অথচ এখানে ইঞ্জিন তৈরির জন্য বিরাট জায়গা ঘিরে রাখা হয়েছিল। প্রচুর কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা ছিল। যা সবটাই আজ ইতিহাস। ২০১৭-’১৮ সালে এর জন্য প্রায় ১ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ ছিল। ২০১৯ সালে এসে তা ৯৯ হাজার করা হয়েছে। নতুন করে কোনও কর্মী নেওয়া হচ্ছে না। আসলে একে নিয়ে পরিকল্পনা কী, তা সহজেই অনুমেয়।

রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) পরিকল্পনাকে ঘিরে একদা খুশির তুফান উঠেছিল ডানকুনিতে। সেই তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা রাজ্যেই। কিন্তু তিনি রেলমন্ত্রীর পদ ছাড়ার চার বছরের মধ্যে ডিজেল লোকো বন্ধ হয়ে যায়। তার দু’বছর আগে ২০১৪ সালে চালু হয় ইলেকট্রিক লোকো। বাইরে থেকে ইঞ্জিন তৈরির যন্ত্রাংশ এনে জোড়ার কাজ শুরু হয়েছিল। প্রথম দু’বছর ২৫টি করে, তারপর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বছরে মোট ৫০টি ইঞ্জিন ডানকুনিতে তৈরি হয়েছে। ২০২০ সালের শুরু থেকেই লক্ষ্যমাত্রা কমবে বলে কানাঘুষো চলছিল। লকডাউনের জন্য বিষয়টি ধামাচাপা পড়েছিল। চলতি বছরে ৫০টি ইঞ্জিনের বরাত মিলবে কি না, জানেন না কর্মীরা। প্রকল্প এলাকার আনাচে কানাচে আর্থিক সঙ্কটের ফিসফিসানি আর আতঙ্ক নিয়ে কর্মীদের প্রতিদিনের বাস। সব থেকে উন্নতমানের ইঞ্জিন তৈরির যে ইউনিট ছিল, তার সর্বাঙ্গ অসাড় হয়ে পড়েছে। স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে প্রকল্পের। ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন কর্মীরা বলছেন, যেটুকু আছে, তাও থাকে কি না, সেটাই এখন প্রাক-বাজেট পর্বে বহুমূল্য প্রশ্ন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Mamata Banerjee, #Narendra Modi, #Dankuni, #Locomotives

আরো দেখুন