লকডাউন উপেক্ষা করে জেলায় জেলায় ভিড় রাস্তায়
প্রশাসনের তরফে বারবার বলা হলেও লকডাউন উপেক্ষা করে পথে নামছে মানুষ। নির্দেশ অমান্য করার জন্য ইতিমধ্য়েই অনেক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দিন যত যাচ্ছে, লকডাউন নিয়ে ক্রমেই অধৈর্য হচ্ছে জনতার একাংশ। ফলে কোথাও কোথাও জমছে ভিড়। কোথাও কোথাও চলছে আড্ডা। খুলতে শুরু করেছে বহু দোকানপাট। চালু হচ্ছে ছোট যানবাহন। করোনা-আক্রান্তের সংখ্যাবৃদ্ধি রুখতে লকডাউনের বিকল্প নেই— এ কথা বার বার প্রচার করা হলেও বহু ক্ষেত্রে ভাঙছে শৃঙ্খলা।
গতকাল থেকেই সব রেশন দোকানে বিনামূল্যে খাদ্য সামগ্রী দেওয়া শুরু হয়েছে। বুধবার সকালে রেশন দোকানগুলি খোলার আগে থেকেই রাজ্যের বেশির ভাগ জায়গায় দেখা গেল গা ঘেঁষাঘেঁষি করে লাইন। পাশাপাশি সরকারের ঘোষণামতো পরিমাণে সামগ্রী না মেলার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভও চলল বেশ কয়েকটি জায়গায়।
ক্যানিংয়ে মঙ্গলবার বিকেল থেকেই বহু মানুষকে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে দেখা গিয়েছিল। চায়ের দোকানগুলিও একে একে খুলতে শুরু করেছে। সেখানে আড্ডা বসছে দু’বেলা। বিকেল হতেই মাঠও ভরে গেল ছেলেদের ভিড়ে।
বুধবার সকালে ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটির ঘোলাবাজারে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রশাসনের তরফ থেকে বিভিন্ন বাজারে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য দাগ কেটে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ জায়গাতেই তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। ভাঙড় ১ ব্লকের জাগুলগাছি অঞ্চলের ২৮ নম্বর রেশন দোকানের সামনেও বিক্ষোভ, নিয়ম ভেঙে ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে অনেককে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ছবিটাও অনেক ক্ষেত্রে একই রকম। পাড়ার মোড়ে মোড়ে মানুষের জটলা। মাঠে চলছে ক্রিকেট-ফুটবলের আসর। চায়ের দোকানে তাসের আড্ডা বসেছে, ডায়মন্ড হারবার, সরিষা, নুরপুর, মগরাহাট, উস্তি, কুলপি-সহ বিভিন্ন এলাকার বুধবারের রাস্তার ছবি দেখে মনেই হবে না যে, লকডাউন চলছে। বাজারে মানুষের ভিড়, রাস্তাঘাটে অটো-টোটোর দাপট শুরু হয়েছে আগের মতোই।
উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়া, নৈহাটি, শ্যামনগর, ইছাপুর তো বটেই, ব্যারাকপুরের বাজারগুলিতেও সকালের ভিড়ের ছবি দেখে বোঝা দায় যে, লকডাউন চলছে। অন্যান্য দিন যেমন বাজারে ভিড় থাকে এ দিনও তেমনই ছিল। মানুষ গা ঘেঁষাঘেষি করেই আনাজ-মাছ বেছে কিনছেন।
একই ছবি বনগাঁ-হাবড়াতেও। বন্ধ করা যায়নি বহু চায়ের দোকান। সেখানেই জটলা হচ্ছে বেশি।
বুধবার সকাল থেকেই উত্তরপাড়া বা জেলার বিভিন্ন অংশে দেখা গিয়েছে, মানুষ ফের রাস্তামুখো। কেউ বাজার বা মুদির দোকানে। আবার কেউ স্রেফ ঘুরতে বেরিয়েছেন।
লকডাউন চললেও রাস্তায় ভিড়ের কমতি নেই গ্রামীণ হাওড়াতেও। বাগনান, উলুবেড়িয়া, আমতা ডোমজুড় সর্বত্র এক ছবি। উলুবেড়িয়ার নিমদিঘির মাছ বাজারে ছিল থিকথিকে ভিড়। তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখেননি কোনও ক্রেতা। বাগনানে আবার স্টেশনারি এবং দু’একটি হার্ডওয়্যার দোকান খোলা হয়। মুরগির দোকানেও ভিড় জমছে ভালই। তুলনামূলক ভাবে কম ভিড় ছিল খাসির মাংসের দোকানে। বিকেলে খেলার মাঠও কিছুটা সরগরম থাকছে। তবে সন্ধ্যার পর থেকে অবশ্য সব এলাকা নিঝুম। বাড়িতেই থাকছেন সকলে। বাড়ছে পুলিশের টহলদারি।
পশ্চিম বর্ধমান রেশনে খাদ্যসামগ্রী বিলি শুরু হয়েছে বুধবার থেকে। প্রায় গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে গ্রাহকেরা।
বেলা বাড়তেই ঘুচে যাচ্ছে সুরক্ষা বলয়. চুলোয় গেল পারস্পরিক দূরত্বের সতর্কতা। সতর্কতা বিধি শিকেয় তুলে দিয়ে পথে নামছে মানুষ।