নব বর্ণপরিচয়ের পাঠশালায় মোদীর পর ছাত্র অমিত, ‘নাটক’ বললেন সৌগত রায়
ভোটমুখী বাংলায় অমিতের ভাষা ‘নির্বাচন’ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

পশ্চিমবঙ্গ(West Bengal) সফর থাকলে বাংলায় টুইট করা অভ্যাস প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর(Narendra Modi)। এ বার সেই পথে হাঁটলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-ও(Amit Shah)। সোমবার সংসদে সদ্য বাজেট বক্তৃতা শেষ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন(Nirmala Sitharaman)। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সমাজমাধ্যমে ভেসে উঠল বাজেটে এ রাজ্যের ‘প্রাপ্তিযোগ’ নিয়ে বাংলায় লেখা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর টুইট। ভোটমুখী বাংলায় অমিতের ভাষা ‘নির্বাচন’ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। অনেকের মত, গেরুয়াশিবিরের নেতাদের বাংলা ভাষার প্রতি এই ‘আগ্রহ’ আগামী বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে এ রাজ্যের মানুষের মন জয়ের লক্ষ্যে। আরও এক ধাপ এগিয়ে আবার কারও ব্যাখ্যা, বর্ণপরিচয়ের ‘পাঠশালা’য় বাংলা বর্ণমালার সঙ্গে এখন নতুন করে পরিচয় করতে হচ্ছে মোদী-শাহ, আদতে গুজরাতবাসী এই রাজনৈতিক জুটিকে।
সোমবার অমিত নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের বিকাশ আর সেখানকার মানুষের সুবিধার জন্য আজ প্রকাশিত বাজেটের মাধ্যমে মোদীজি ২৫,০০০ কোটি টাকার অনুদান ঘোষণা করেছেন, যার মাধ্যমে ৬৭৫ কিমি রাজপথের নির্মাণ হবে। এরই সঙ্গে বাংলা এবং আসামের চা বাগানে কর্মরত মানুষের কল্যাণের জন্য ১০০০ কোটি টাকাও দেওয়া হচ্ছে’। বাংলার জন্য মোদীর সরকার কী কী কাজ করবে, এই বাজেটে তার জন্য কী বরাদ্দ করছে, তা পশ্চিমবঙ্গবাসীকে তাঁদের ভাষায় বোঝাতেই এমন টুইট করেছেন বলেই সাফাই দিয়েছে রাজ্য বিজেপি-র এক প্রবীণ নেতা।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসার আগে অথবা বাঙালি পার্বণগুলিতে নিয়ম করে বাংলায় টুইট করছেন। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হলদিয়া আসছেন মোদী। সেদিন সকালেও তিনি যে বাংলায় টুইট করবেন, সে বিষয়ে এক প্রকার নিশ্চিত বঙ্গ রাজনীতির কারবারিরা। শুধু মোদী-শাহ কেন? বর্ণপরিচয়ের ‘পাঠশালা’য় পাঠ শুরু করেছেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জেপি নড্ডাও। মোদী-শাহের মতো তিনিও বাংলায় টুইট করছেন। তাঁর স্ত্রী যে বাঙালি সেই বিষয়টিও প্রচারে ফলাও করে তুলে ধরছেন রাজ্য বিজেপি-র নেতারা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার তাঁকে ‘বাংলার জামাই’ বলেও প্রচার করা হচ্ছে। বর্ণপরিচয়ের ‘পাঠশালা’য় আরেক ছাত্র বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়-ও।
গত ৫ বছর বাংলার সংগঠনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাঙালি রীতিনীতির সঙ্গে তিনি কিছুটা পরিচিত হলেও অতি সম্প্রতি তিনি বাংলায় টুইট করা শুরু করেছেন।
কিন্তু সমাজমাধ্যম বা জনসভায় বিজেপি নেতাদের বাংলা ভাষার যথেচ্ছ প্রয়োগ নিয়ে উল্টো মতও রয়েছে। অনেকে মনে করছেন, সমাজ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যে রাজনৈতিক জমি শক্ত করার কৌশল নিয়েছে বিজেপি। তাই বঙ্গ দখলের লক্ষ্যে টুইটকে হাতিয়ার করে গেরুয়া শিবির বাঙালি আবেগকে উস্কে দিতে চাইছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
বাংলা বর্ণমালার সঙ্গে বিজেপি নেতাদের এই ‘ঘনিষ্ঠ’ হয়ে ওঠার চেষ্টাকে বাঁকা চোখে দেখছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। বাংলায় টুইট করার কৌশলকে ‘গ্যালারি শো’ হিসেবেই ব্যাখ্যা করছে জোড়াফুল শিবির। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের কথায়,‘‘বিজেপির সবটাই গ্যালারি শো। বাংলার প্রতি না আছে ওদের ভালবাসা, না আছে আন্তরিকতা। শুধুমাত্র ভোটে জেতার জন্য এখন বাংলায় টুইট করে বাংলার প্রতি ওঁদের আন্তরিকতার কথা তুলে ধরতে চাইছেন। প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সকলেই গ্যালারি শো করে যাচ্ছেন। কিন্তু এ সব করে হাততালি পাওয়া যায়। ম্যাচ জেতা যায় না।’’