নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিজেপি-তৃণমূল বাক্ যুদ্ধ
নাগরিকত্ব আইন (Citizenship Act) কার্যকর করার জন্য লোকসভায় তিনমাসের সময়সীমা চেয়েছে কেন্দ্র সরকার। যা নিয়ে ঠাকুরনগরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভার আগে যুযুধান দুই শিবিরের তরজা চরমে উঠেছে। তৃণমূলের (Trinamool) দাবি, ভোটের আগে সময় এইভাবে সময় কিনে মতুয়াদের ভাঁওতা দিতে চাইছে বিজেপি। যারাই ভোট দেবে তাঁরাই নাগরিক। নতুন করে কোনও সিএএ’র প্রয়োজন নেই। যদিও বিজেপির (BJP) দাবি, নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করার জন্য তিনমাস সময় এমন বেশি কিছু নয়। আইন কার্যকর করার জন্য কিছু সরলীকরণ করা প্রয়োজন। সিএএ আইন পাশ করেছে বিজেপি। এই আইন কার্যকর হবেই। উদ্বাস্তুরা নাগরিকত্ব পাবেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নাগরিকত্বের তাস খেলেই ২০১৯-এর ভোটে বাজিমাত করেছিল বিজেপি। কিন্তু এখনও নাগরিকত্ব আইন কার্যকর না হওয়ায় মতুয়া (Matua) সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ৩০ জানুয়ারি ঠাকুরনগরে গিয়ে নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করা নিয়ে কেন্দ্রের অবস্থান স্পষ্ট করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু দিল্লির বিস্ফোরণের ঘটনার পর ওই সভা বাতিল হয়। কয়েক ঘণ্টা আগে সভা বাতিল হওয়ায় মতুয়াদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভবিক্ষোভ দেখা দেয়। পরিস্থিতি বুঝে অমিত শাহের নির্দেশে সভামঞ্চ না খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়। আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ফের ওই মঞ্চে অমিত শাহের সভা হওয়ার কথা। এর মধ্যে সিএএ কার্যকর করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার লোকসভায় তিনমাসের সময় চাওয়ায় ফের রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে।
এই ইস্যুতে বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে বিজেপিকে তোপ দাগেন প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। তিনি বলেন, ঠাকুরনগরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সভা বাতিল করে মতুয়াদের অপমান করেছেন। এখন নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করার জন্য তিনমাসের সময় চেয়েছেন। আসলে এঁরা মতুয়াদের ভাঁওতা দিতে চাইছেন। তিনি আরও বলেন, মতুয়ারা যদি নাগরিকই না হবেন তাহলে ২০১৯-এ ভোট দিলেন কীভাবে এবং তাঁদের ভোটে শান্তনু ঠাকুর সাংসদ নির্বাচিত হলেন কী করে? মতুয়াদের আবেদন করে নাগরিকত্ব নিতে হলে আগে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ফেলে দেওয়া উচিত। আসলে অসমের ভোট সামনে রয়েছে। সিএএ কার্যকর হলে বিজেপি গোহারা হবে। তাই তিনমাসের সময় নিয়েছে সরকার। মতুয়া সমাজ আগামিদিনে এই প্রবঞ্চনার জবাব দেবে।
অন্যদিকে বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর বলেন, তিনমাসের সময়সীমা নেওয়াটা কোনও বিষয় নয়। কীভাবে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, কবে থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে, তা জানাতেই ১১ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরনগরে আসছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ২০০৩ সালের আইনে মতুয়া সহ অন্যান্য উদ্বাস্তু মানুষ নাগরিকত্ব হারিয়েছেন। সেই আইন ২০১৯ সালে সংশোধন করে সিএএ তৈরি করা হয়েছে। আগামিদিনে সেটাই কার্যকর করা হবে। মমতা দেবীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, উনি ভোটে হারার পর যা তা বকছেন। ওঁর কথার উত্তর দেব না।
তৃণমূলের জেলা সভাধিপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, এরাজ্যে কিছুতেই এনআরসি ও সিএএ হবে না। নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ এসেও বলেছে, যাঁদের ভোটার কার্ড আছে তাঁরাই এদেশের নাগরিক। তাঁরা ভোট দেবেন। একই কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। মতুয়াদের নিয়ে ঘৃণ্য রাজনীতি করছে বিজেপি।